শব্দবাজি নিয়ে অনেক বিধি নিষেধ জারি হওয়া সত্ত্বেও আইনের মুখে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রতি বছর চলে যথেচ্ছাচার। তাও প্রতি বছরই আশা করা হয় কিছুটা কমবে শব্দবাজির অত্যাচার। এবারেও সেরকমই প্রত্যাশা। কিন্তু আলোর বাজিও মোটেই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে, যাদের ঘন ঘন সর্দিকাশি বা অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তাদের জন্যে আলোর বাজির ধোঁয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বাজির ধোঁয়ায় থাকা বিভিন্ন রাসায়ানিক থেকে চোখের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আট থেকে আশি, সকলের চোখেই ধোঁয়ার সংস্পর্শে অল্প বিস্তর অ্যালার্জি হয়। শব্দ বাজিই হোক বা আলোর বাজি, এদের উপাদান মোটেই পরিবেশ বান্ধব নয়। আর আমাদের জন্যে তো নয়ই। এর ধোঁয়ায় থাকে সালফার ডাই- অক্সাইড, বেরিয়ামের অক্সাইড, নাইট্রেট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম সহ বিভিন্ন ভারী বিষাক্ত যৌগ, যা মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীদেহের ওপর বিষক্রিয়া করে। আমাদের চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল তাই সহজেই তার ওপর এর প্রভাব পড়ে।
বাজি পোড়ানোর সময় কম-বেশি প্রায় সকলেরই চোখ জ্বালা করে। বাতাসে ভেসে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক চোখের জলের লিপিড স্তর নষ্ট করে দেয় বলে চোখ জ্বালা করে ও চোখ থেকে এক নাগাড়ে জল পড়ে। আসলে লিপিড লেয়ার নষ্ট হয়ে গেলে চোখের জল দ্রুত শুকিয়ে যায়। প্রয়োজনে আই ড্রপ লাগাতে পারেন।
বাজির ধোঁয়া শ্বাসনালী সহ ফুসফুসের অত্যন্ত ক্ষতি করে। বিশেষ করে, যাঁরা শ্বাসনালীর অসুখে ভুগছেন (যেমন হাঁপানি, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, আইএলডি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) তাঁদের বাজি না জ্বালালেই ভাল হয়। কালীপুজোর কয়েকটা দিন রাত্তির নটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সব বাতাসে স্মগ মানে ধোঁয়াশা থাকে। খুব প্রয়োজন না হলে ও কটা দিন এই সময় বাড়ি থেকে না বেরোনোই শ্রেয়।
যেখানে বাজি ফাটাবেন সেখানে যেন অবশ্যই এক বালতি জল থাকে, যাতে আচমকা বিপদে পড়লে কাজে লাগতে পারে। চোখে চশমা থাকলে ধোঁয়ার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। রং মশাল, তুবড়ি, হাওয়াই বা ফুলঝুরির লাল, নীল, সবুজ আলোয় সালফার, নাইট্রোজেন, কপার, বেরিয়াম, ক্যাডমিয়াম সহ বিভিন্ন বিষাক্ত যৌগ থাকে যা শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাই শুধু যে শব্দ বাজিই খারাপ আর আলোর বাজি ভাল তা কিন্তু নয়। বাজির ধোঁয়া থেকে সর্দি, হাঁচি, শ্বাস কষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনাস, ল্যারিঞ্জাইটিস, হাঁপানির পাশাপাশি ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ রেগে ওঠা, ঘুম কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা যায়। এ ছাড়াও শব্দ বাজির তান্ডবে সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধের সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের চান্স বাড়ে। তাই বাজি পোড়াতেই পারেন, কিন্তু বুঝে শুনে। আগুন লেগে দুর্ঘটনার ভয় তো থাকেই।পুড়ে গেলে অবশ্যই ঠান্ডা জলে পোড়া অংশ ডুবিয়ে রাখুন। এর পর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান।
প্রাণহানির কারণও হতে পারে!দুর্বল হার্টের মানুষ শব্দতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।