প্রাণীভেদে বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মল লক্ষ্য করা যায়। মল দেখে প্রাণীর বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়। প্রথমত তৃণভোজী প্রাণীর মল দিয়ে আলোচনা করা যাক। তৃণভোজী প্রাণী ঘাস, লতাপাতা, ফলমূল ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।
তৃণভোজী প্রাণীদের মল কেমন প্রকৃতির হবে সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের খাদ্যাভাসের উপর। যেমন : কান্ডা ও পাতা খেয়ে হজম করে পুষ্টি সংগ্রহ করার থেকে ফল ও বীজ হজম করে পুষ্টি সংগ্রহ করা সহজ। ফল ও বীজ খেলে পরিপাকের তেমন প্রয়োজন না হওয়ায় এক্ষেত্রে মলের প্রকৃতি হবে ভিন্ন৷ আবার কিছু গাছপালায় ফাইভার বা আঁশ বেশি থাকায় তা পরিপাক করা কষ্টকর। এক্ষেত্রে মলে অপরিপাক হওয়া অংশ থাকতে পারে। তাছাড়াও কিছু গাছ বা ফলে রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যেমন : এপ্রিকট, আলুবোখারা ইত্যাদিতে প্রাকৃতিক রেচক ঔষধ থাকে, তৃণভোজী প্রাণীরা অধিক মাত্রায় এই ফল গ্রহণ করলে মল তরল জাতীয় হতে পারে।
এছাড়া মলের প্রকৃতি নির্ভর করে অন্ত্রের উপর। অন্যান্য প্রাণীদের মতো তৃণভোজী প্রাণীদের অন্ত্রেও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা তাদের খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এই ব্যাপক প্রকারের ব্যাকটেরিয়াও মলের প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলে। নির্দিষ্টভাবে গরুর মলের কথা চিন্তা করা যায়। গরু রুমিন্যান্ট প্রজাতির তৃণভোজী প্রাণী, ভেড়াও ঠিক তেমন। গরুর অন্ত্রে আলাদা চেম্বার থাকে যাকে বলা হয় রুমেন, রুমেনে গরুর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া থাকে, এই ব্যাকটেরিয়া ঘাস ও অন্যান্য খাবার পরিপাক করে। এই ব্যাকটেরিয়ার উপর গরুর মলের প্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভর করে।
আবার অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ঘোড়া, গরু, হরিণ এরা সবাই ঘাস খেলেও এদের মন ভিন্ন ভিন্ন কেন। প্রথমত ঘোড়ার ক্ষেত্রে আসা যাক। ঘোড়া নন-রুমিন্যান্ট হওয়ায় এদের অন্ত্র একটু ভিন্ন ধরনের, ঘোড়ার অন্ত্র মূলত দুটি সেকশন নিয়ে গঠিন। প্রথম সেকশনে থাকে পাকস্থলী ও ছোট অন্ত্র। দ্বিতীয় সেকশনে থাকে বড় আকৃতির অন্ত্র যা সিকাম ও কোলন নিয়ে গঠিত। ঘোড়ার গ্রহণ করা খাদ্য প্রথমে তা ফোরগাটে পরিপাক হয় এবং পরবর্তীতে তা হীন্ডহাটে গাঁজন হয়। তাই ঘোড়ার মলের প্রকৃতি ভিন্ন হয়।
হরিণ ও অন্যান্য গবাদি পশু এরা রুমিন্যান্ট হওয়ায় এদের পাকস্থলীতে ৪ টি অংশ ব্যাকটেরিয়া পূর্ণ থাকে। রুমিন্যান্টদের গ্রহন করা খাবার পরিপাক করে মূলত ব্যাকটেরিয়া। এরা এইসব মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া থেকে পুষ্টি ও প্রোটিন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এছাড়া পশু-প্রাণীদের পানি গ্রহণ বা পানির প্রয়োজনীয়তার উপর তাদের মলের প্রকৃতি নির্ভর করে। অতএব, প্রাণীভেদে বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মল লক্ষ্য করার মূল কারণগুলো হচ্ছে খাদ্যাভাস, অন্ত্রের গঠন, মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া, ইত্যাদি।
© নিশাত তাসনিম
রেফারেন্স : https://www.thenakedscientists.com/articles/questions/why-there-so-much-variation-poo-herbivores
https://www.quora.com/Why-do-horses-cows-and-deer-have-different-excrement-if-they-all-eat-grass