সেই রাতে রক্তের মত টকেটকে লাল রঙ ধারণ করবে চাঁদ। চন্দ্রগ্রহণের রাতে সেই দৃশ্য দেখা যাবে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে।
যদিও মহাকাশবিজ্ঞানীদের দাবি, প্রত্যেক চন্দ্রগ্রহণেই লাল রঙের হয়ে ওঠে পৃথিবীর উপগ্রহ। শুধু তার শেড হয় বিভিন্ন রকম। এ বারের ‘ব্লাড মুন’ একটা অন্য কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আমরা পৃথিবীকে কতটা দূষিত করেছি, তা-ই বোঝা যাবে চাঁদের গাঢ় লাল রঙে।
ভারতের জওহরলাল নেহরু প্ল্যানেটোরিয়ামের শীর্ষস্থানীয় এক বিজ্ঞানী এইচআর মধূসুদন জানিয়েছেন, ‘এটা আসলে একটা হাইপ। সত্যিই এতে বিশেষত্বের কিছু নেই। বাতাসের ধূলিকণার পরিমাণ অনুযায়ী প্রত্যেক চন্দ্রগ্রহণে চাঁদ হাল্কা না গাঢ় লাল হবে, সেটা ঠিক হয়। গাঢ় লাল হওয়াটা শুধু স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে আমাদের আবহাওয়ামণ্ডল কতটা দূষিত।’
সাধারণত চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ায় চাঁদকে দেখা যায় না। এইচ মধূসুদনের কথায়, ‘সেই সময় চাঁদ কালো হওয়া উচিত। তবে পৃথিবীর আবহওয়ামণ্ডল থেকে আলোকের বিচ্ছুরণের কারণে আপনারা একটা লালচে রঙ দেখতে পাবেন। প্রত্যেক চন্দ্রগ্রহণেই চাঁদ লাল থাকে।’ এই একই কারণে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যও লাল থাকে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুপার পিংক মুন বা অতিকায় গোলাপি চাঁদ, কিন্তু এর রং আসলেই গোলাপি নয়।
তাহলে এই চাঁদের নাম সুপার পিংক মুন কেন?
এপ্রিল মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে "সুপার" নাম দেয়ার কারণ আকাশে এই চাঁদের আকৃতি হবে বিশাল।
সুপারমুন হয় যখন চাঁদ পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে অর্থাৎ যখন কক্ষপথে চাঁদ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কাছাকাছি দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।
চাঁদ যখন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে তখন তার এই কক্ষপথ বৃত্তাকার নয়। যেহেতু সেটা উপবৃত্তাকার কাজেই চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী পৃথিবীর থেকে তার দূরত্ব কম বেশি হয়। কখনও চাঁদ থাকে অনেক দূরে - কখনও অনেক কাছে।
চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের পয়েন্টে পৌঁছয় এবং সেটা যদি হয় পূর্ণিমার পূর্ণচাঁদ তখন তাকে বলা হয় সুপারমুন। অতি বৃহৎ চাঁদ।
নিউ ইয়র্কের আকাশে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির পেছনে ইকুইনক্সের চাঁদ ২০শে মার্চ ২০১৯ সালে।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
নিউ ইয়র্কের আকাশে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির পেছনে ইকুইনক্সের চাঁদ ২০শে মার্চ ২০১৯ সালে।
এপ্রিল মাসের সুপারমুনের দূরত্ব হবে পৃথিবী থেকে ৩৫ লক্ষ ৭ হাজার কিলোমিটার দূরে। সাধারণত পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব হয় ৩৮ লক্ষ চার হাজার ৪০০ কিলোমিটার।
সুপার পিংক মুন কি আসলেই গোলাপি রঙের হবে?
না। আমেরিকার উপজাতিয় সংস্কৃতি সহ পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতে, সারা বছর জুড়ে পূর্ণ চাঁদের নানা নামকরণ করা হয়েছে। হয়ত বছরের সময়ের হিসাব রাখার জন্য এই প্রথার প্রচলন হয়েছিল।
এপ্রিলের পূর্ণ চন্দ্রের নাম সেই হিসাবে গোলাপি চাঁদ বা পিংক মুন হলেও এই চাঁদের রং গোলাপি নয়।
ওয়ান্স ইন আ ব্লু মুন’ অর্থাত্‍ বিরল ঘটনা। আর এবার সেই ব্লু মুনই দেখা যাবে আকাশে। শনিবার রাতেই দেখা যাচ্ছে সেই বিরল ঘটনা। তাও হ্যালোইনের রাতে।
তবে ব্লু মুন কিন্তু আসলে নীল চাঁদ নয়। আসলে একই মাসেই দু’বাদ পূর্ণিমার চাঁদ দেখা গেলে, তাকেই ব্লু মুন বলা হয়।
গত পয়লা অক্টোবর ইতিমধ্যেই ফুল মুন বা পূর্ণ চন্দ্র দেখা গিয়েছে। আর এই আশ্চর্য মহাজাগতিক ঘটনা যখন ঘটে, অর্থাত্‍ আকাশে একই মাসে যখন দুবার পূর্ণ চন্দ্র বা ফুল মুন দেখা যায় তখন দ্বিতীয় চন্দ্রটিকে বলা হয় ব্লু মুন।