বর্তমানে সারাবিশ্বে মাদকাসক্তির প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলছে। মাদকাসক্ত যে সকল ব্যক্তি আছে তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেমন অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির কারণে তাদের নিজস্ব যে কর্ম ক্ষমতা সেটা নষ্ট করে ফেলছে এবং সমাজে একটা বোঝা আকারে পরিণত হচ্ছে। এই কারণে বিভিন্ন দেশের সরকারের নীতিনির্ধারকরা মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য এই ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালু করে এবং যার মাধ্যমে পরবর্তীতে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায় বা তার ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ডোপ টেস্ট পদ্ধতির বিস্তারিত বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ডোপ টেস্ট : ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট হলো কোনো ব্যক্তি বা কোন প্রাণী শরীরের কোনো একটি অংশ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা যাতে ওই ব্যক্তির শরীরে কোন মাদকের উপস্থিতি আছে কিনা বা সে ব্যক্তি কোন মাদক গ্রহণ করেছে কিনা তা জানার জন্য। যেমন : অনেক খেলোয়াড় খেলা শুরুর আগে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবহার করে থাকে যাতে সে অন্যান্য প্রতিযোগিতা তুলনায় ভালো ফলাফল করতে পারে। তাছাড়া অনেক ছাত্রছাত্রী চাকরিজীবী গণ তাদের পিছনে বা অতীতে এই ড্রাগ সেবন করে থাকে তাদেরকে সনাক্ত করার জন্য মূলত ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালু করা হয় যেটা পরবর্তীতে তাদের কর্ম জীবন বা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর একটা সিদ্ধান্ত চলে আসতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালু আছে।
ডোপ টেস্ট করার পদ্ধতি :
বিভিন্ন মাদক প্রাণীদেহে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে তাই কোন মানুষ বা প্রাণীর দেহে কোন অংশ পরীক্ষা করে ওই রাসায়নিক দ্রব্য উপস্থিত আছে কিনা সেটা সনাক্ত করা হয়। যাতে প্রমাণিত হয় সে ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করেছে কিনা। ডোপ টেস্ট করার জন্য প্রথমে কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় নমুনার ক্ষেত্রে মূত্র, রক্ত , ঘাম , নখ , চুল , মুখের লালা বা মানবদেহে কোন অঙ্গ পতঙ্গ কোন অংশ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতি প্রচলিত বেশ কয়েকটি নমুনার মধ্যে মূত্র এবং রক্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
ডোপ টেস্টের প্রকারভেদ : সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহ থেকে নেয়া নমুনার ধরণের উপর ডোপ টেস্ট কয়েক ধরণের হয়। যেমন -
ইউরিন টেস্ট : মাদকাসক্ত রোগীর মূত্র সংগ্রহ করে মাদকের উপস্থিতি পরীক্ষা করার পদ্ধতি হলো ইউরিন টেস্ট। এটি সহজলভ্য ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মাদক ও পানীয় জাতীয় মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়।
মুখের লালা বা থুতু পরীক্ষা : একটি পটে সন্দেহভাজন ব্যক্তির মুখের লালা, থুতু, কফ ইত্যাদি সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহনের কয়েকদিন পর এই পরীক্ষা করে মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়।গাঁজা সেবনের ১০ ঘন্টা পর এই পরীক্ষা করে দেহে গাঁজার উপস্থিতি ধরা যায়।
রক্ত পরীক্ষা : যত ধরণের ডোপটেস্ট আছে তার মধ্যে রক্ত পরীক্ষা অধিক কার্যকর। এই টেস্টের ফলাফল প্রায় শতভাগ নির্ভুল। দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে অভিজ্ঞ প্যাথোলজিস্ট জৈবরাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করেন। অ্যালকোহল বা মদ সেবনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করলে অ্যালকোহলের উপস্থিতি ধরা পরে। বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করলে ১ সপ্তাহ পরেও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পরে।
চুল পরীক্ষা : মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে তার ক্ষতিকর উপাদান চুলে জড়ো হয়। ৯০ দিনের মধ্যে কেউ মাদ*ক সেবন করলে চুল পরীক্ষা করে ধরা সম্ভব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নতুন গজানো চুল ব্যবহার করা হয়। কমপক্ষে ১.৫ ইঞ্চি দৈর্ঘের চুল প্রয়োজন এই পরীক্ষার জন্য।
নিঃশ্বাস পরীক্ষা : দেহে অ্যালকোহলের উপস্থিতি সনাক্ত করার দ্রুত ও সহজ পরীক্ষা হলো নিশ্বাস পরীক্ষা। অ্যালকোহল ডিটেক্টর ব্রেথেলাইজার দিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নিঃশ্বাস পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে মাদক গ্রহনকারী ব্যক্তিকে একটি কাচনলের ভেতর নিঃশ্বাস ছাড়তে হয়। পুলিশের ট্রাফিক ইউনিট এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করে।
ডোপ টেস্টে কাদের ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে :
প্রাথমিক ফলাফল পজিটিভ আসার মানে এই নয় যে ওই ব্যক্তি মাদক আসক্ত এমন হতে পারে প্রাথমিক পজিটিভ এসেছে। কারণ ওই ব্যক্তির শরীরে সেই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উপাদান পাওয়া গেছে এক্ষেত্রে হয়তো অন্য কোনভাবে ও তার শরীরে রাসায়নিক উপাদান আসতে পারে। কিন্তু যখন দ্বিতীয় টেস্ট করানো হয় তারপর যদি তার শরীরে একটি রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায় তখন প্রমাণিত হয় যে সে মাদকাসক্ত এবং তার তখন ডোপ টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ চলে আসে।
কত দিন ধরে মাদক গ্রহণ করলে ডােপটেস্ট পজিটিভ আসবে?
টেস্টের সময়সীমার মধ্যে মাদক গ্রহণ করলে ফলাফল পজেটিভ হবে। অনেক দিন ধরে মাদক গ্রহণ করে কিন্তু টেস্টের ৬ মাস আগে থেকে কোন মাদক গ্রহণ করে না তাহলে তার ফলাফল নেগেটিভ আসবে। কিন্তু কোনদিন মাদক সেবন করেনি এমন ব্যক্তি টেস্টের ১ দিন আগে মাদক সেবন করেছেন তার ফলাফল পজেটিভ আসবে।
সিগারেট খেলে কি ডােপটেস্টে পজিটিভ আসার সম্ভাবনা আছে?
তামাকের মূল উপাদান নিকোটিন মাদকের তালিকাভুক্ত নয় তাই সিগারেট খেলে ডোপটেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ হবে না।
ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায় :
রেজাল্ট পজিটিভ আসলে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার নষ্ট হয় বা ভবিষ্যতে অগ্রসর হতে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। শরীরের সমস্যা তো রয়েছেই। এই ক্ষেত্রে আপনি এ থেকে বাঁচার জন্য বা এড়িয়ে চলার জন্য মাদক বন্ধ করার চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত আর হতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি মাদক গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনি মাদক বন্ধ করার অন্ততপক্ষে তিন মাস পর টেস্ট করান তাহলে আপনার ডোপ টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সর্বশেষ একটি কথা মাদককে না বলুন মাদক আপনার জীবনকে আপনার পরিবারকে এবং আপনার ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে দিতে পারে। আপনাকে মাদককে না’ বলতে হবে যাতে আপনি ভালো থাকুন আপনার পরিবার ভালো থাকি আপনার ভবিষ্যত নিশ্চিত থাকে।
[গুগলের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত]