প্রযুক্তির উন্নতির কারণে অনেক ক্রীড়াবিদই এমন সব নিষিদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করেন, যা ডোপিং পরীক্ষায় ধরা পড়ে না৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডোপিং পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন ডোপিং বিশেষজ্ঞ পেরিকলেস সিমন৷
এবারের শীতকালীন অলিম্পিক সোচি অলিম্পিকে ডোপিং পরীক্ষা করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার৷ এটি একটি রেকর্ড৷ কারণ এত বিপুল পরিমাণ পরীক্ষা এর আগে কোনো প্রতিযোগিতায় করা হয়নি৷ তবে এ সব পরীক্ষায় নানা সীমাব্ধতা রয়েছে, যার কারণে নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারকারী প্রতিযোগীরা প্রায়ই পার পেয়ে যাচ্ছেন৷ এমনটাই জানিয়েছেন সিমন৷
তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, এত পরীক্ষা করে আসলেই কি কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে? এর উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘‘রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষা আসলে নামে মাত্র৷ এটা নতুন কিছু নয়৷ প্রতি অলিম্পিকেই এ সংখ্যাটা বাড়তে থাকে৷ আসলে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত যাঁরা আসলেই প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করেন তাঁদের শাস্তি দেয়া৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিযোগীরা এ সব দ্রব্য ব্যবহার করলেও পরীক্ষায় তা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়৷''
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বা আইওসি-র প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ডোপিং পরীক্ষা উন্নত করার কথা বলেছেন৷ আসলেই কি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে? এর জবাবে সিমন জানান, ‘‘তাঁরা হয়ত ডোপিং বিরোধী প্রচারণা বাড়ানোর কথা বলেছেন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছরে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হলেও ডোপিং পরীক্ষায় তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না৷ সমস্যাটা হলো, যেসব প্রতিযোগী ভীষণ চালাক, তাঁদের একটি দল আছে৷ এই দলটি জানে, কিভাবে স্বল্প পরিমাণে একটি দ্রব্যের সাথে অন্য দ্রব্য মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়, যার ফলে তা পরীক্ষায় ধরা পড়ে না৷''
সিমন আরো জানান, উন্নত বিশ্বের খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় এ সব নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহারের বেশি চল রয়েছে৷ তাঁরা জানেন তাঁদের সমস্যাটা কোথায়, হয়ত কারো আচরণগত সমস্যা থাকতে পারে, কারো মনোযোগের সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা এসব ওষুধ বা দ্রব্য ব্যবহার করে৷
এছাড়া যেসব অ্যাথলিট ডোপিং পরীক্ষায় ধরা পড়েন, তাঁদের বেশিরভাগই হয় ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামান না, অথবা জানেন না কী পরিমাণ ব্যবহার করলে এটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব৷ তবে সিমনের ধারণা, অনেক অ্যাথলিটকে পুণরায় পরীক্ষা করলে এটি ধরা পড়তে পারে৷ তিনি স্বীকার করেন, স্প্রিন্টারদের মধ্যে ডোপিং-এর প্রবণতা বেশি৷
গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালীন অলিম্পিকে ডোপিং-এর ঘটনা বেশি ঘটে – সাংবাদিকের এমন মন্তব্য অস্বীকার করে সিমন বলেন, আবহাওয়ার সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷ তিনি আরো জানান, ‘‘আইওসি ক্রীড়াঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে জড়িত, কিন্তু এই একটি বিষয়ে তারা তেমন কোনো উন্নতি করতে পারেনি৷'' তাই ডোপিং বিরোধী প্রচারণায় বেশি জোর না দিয়ে ডোপিং পরীক্ষার উন্নয়ন ঘটানো উচিত বলে মনে করেন সিমন৷