পড়াশোনাসহ যেকোনো ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক ব্যবহার করলে আমরা খুব সহজে ও দ্রুত সময়ে তা শিখতে পারি। তেমনি একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল হলো “ফাইনম্যান টেকনিক”, যার মাধ্যমে যেকোন কঠিন বিষয় আয়ত্ব করা যায় খুব সহজেই। এই টেকনিকটির উদ্ভাবক সবচেয়ে বিখ্যাত মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানীদের একজন রিচার্ড ফাইনম্যান।
নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানী জ্ঞানকে ভাগ করেছিলেন দুই ভাগে – কোনকিছুর নাম জানা এবং কোনকিছুকে জানা। দ্বিতীয় ভাগটিকে Deep Knowledge বা গভীর জ্ঞানও বলা হয়। ফাইনম্যান সবসময় এই দ্বিতীয় ভাগটিকেই গুরুত্ব দিতেন।
ফাইনম্যান টেকনিকের রয়েছে মাত্র ৪টি সরল ধাপ। চলো দেখে নেই, কী সেই ধাপগুলো –
১। একটি কাগজ নিয়ে যে বিষয়টি তুমি আয়ত্ব করতে চাও, তার নাম লিখে ফেলো। তারপর সে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করো এবং যা কিছু জানো, সবকিছু সেখানে লিখে ফেলো। নতুন কিছু জানলে, সেটিও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করো।
২। এরপর কল্পনা করো একটি বাচ্চাদের ক্লাসরুম এবং মনে মনে সেই বাচ্চাদের কনসেপ্টটি বুঝাও। চেষ্টা করবে যতটা সম্ভব সহজে তাদেরকে বোঝানোর।
৩। নিজের জানা ও বোঝার ঘাটতি গুলো চিহ্নিত করো এবং আবার পড়াশোনা করো যাতে এই ঘাটতিগুলো আর না থাকে।
৪। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করো যাতে ব্যাখাগুলো আরও সহজ হয়। এই ব্যাখা সহজ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে – উপমার ব্যবহার।
যেমন – এন্টিবডিকে পুলিশের সাথে তুলনা করা। পরিচিত কোনো ঘটনা বা বস্তুর সাথে কোনো জটিল বিষয়ের তুলনা করাকে গভীর জ্ঞানের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়।
ফাইনম্যান টেকনিকের মূল কথা হচ্ছে – সারল্য ও সংক্ষিপ্ততা। নতুন কিছু শিখতে, জানা বিষয় আরও ভালোমতো বুঝতে, স্মরণ করতে কিংবা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই টেকনিক অনেক কার্যকর। শুধু তাই নয়, এটি ব্যবহার করে আরও কিছু ফলাফল পাওয়া যায়। যেমন –
ক) শেখানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি
খ) বুদ্ধিদীপ্ত ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ
গ) ক্রিটিকাল থিংকিং-এর দক্ষতা বৃদ্ধি
ঘ) জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে ব্যবহার করতে পারা
ঙ) প্রকৃত বোধশক্তি গড়ে ওঠা ইত্যাদি
“ফাইনম্যান টেকনিক” জোর দেয় সরলতার ওপর। রিচার্ড ফাইনম্যানের জগতজোড়া খ্যাতি ছিল, তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মত কঠিন বিষয়ও সাধারণ মানুষকে সহজেই বোঝাতে পারতেন। যার জন্য তাঁকে “গ্রেট এক্সপ্লেনার” ও বলা হয়। ফাইনম্যানের জীবনী লেখক জেমস গ্লেইক, ফাইনম্যানের এই গুণটিকে তাঁর সাফল্যমণ্ডিত গবেষণা জীবনের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
শুধু ফাইনম্যান নয়, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে অনেক বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ কোনো ধারণা সরলভাবে প্রকাশ করাকে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা হিসেবে দেখা শুরু করেন। যেমন– জার্মান পরিসংখ্যানবিদ ই.এফ.শুমাখার বলেন –
“Any intelligent fool can make things bigger, more complex and more violent. It takes a touch of genius and a lot of courage to move in the opposite direction.”
ক্রেডিট 10 মিনিট স্কুল
তিনি এই সহজ ফর্মুলাটি তৈরি করেন।