কোনোকিছুতে আসক্ত হয়ে গেলে মস্তিষ্কে কিরূপ প্রভাব পড়ে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+8 টি ভোট
153 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (110,330 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (4,280 পয়েন্ট)
প্রথম দিকে আনন্দ পাওয়ার জন্য মাদক নিলেও পরে সে বাধ্য হয়ে বারবার নেশা গ্রহণ করতে থাকে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ক্রমাগত তার মাদক গ্রহণ করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় বিষয়টিকে বলা হয় ‘টলারেন্স’। অর্থাত্ ধীরে ধীরে তার মাদক গ্রহণের সহনশীলতা বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে যতটুকু মাদক গ্রহণ করলে ভালোলাগার অনুভূতি হতো, আস্তে আস্তে সেই পরিমাণ মাদকে কোনো অনুভূতি হয় না, তাই মাদক গ্রহণের মাত্রা ক্রমাগত বেশি হতে থাকে। এই সহনশীলতা তৈরি হয়ে গেলে বিষয়টি একটু জটিল হয়ে যায়। তখন মাদক বন্ধ করে দিলে বা কম পরিমাণে মাদক নিলে ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ বা প্রত্যাহারজনিত উপসর্গ দেখা যায়। এই ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ থেকে রক্ষা পেতে তখন আবার তাকে পরিমাণমতো মাদক গ্রহণ করতে হয়। একেক ধরনের মাদকের জন্য আসক্তির ধরন, সহনশীলতার মাত্রা এবং প্রত্যাহারজনিত উপসর্গ একেক রকম। অর্থাত্ ব্যক্তি একপর্যায়ে ভালোলাগার অনুভূতি পেতে মাদক নেওয়া শুরু করে। পরে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিটটি মাদকে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার সহনশীলতা বেড়ে যায়। তখন মাদক না নিলে বা কম নিলে ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ শুরু হয়। এ সময় সে মন্দলাগা থেকে বাঁচতে (‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ থেকে বাঁচতে) আবারও বাড়তি মাদক নেওয়া শুরু করে। এটাই মাদক-নির্ভরতা বা ‘ডিপেন্ডেন্সি’। মাদক নিতে নিতে মস্তিষ্কে একটি শর্তাধীন অবস্থা (কন্ডিশনিং) তৈরি হয়, তখন মাদকবিষয়ক কোনো সূত্র পেলেই মাদক গ্রহণ করার জন্য তাড়না জন্ম নেয়। যেমন মাদক গ্রহণ করার স্থান, সময় বা সঙ্গীদের দেখলেই মস্তিষ্ক আবার মাদক গ্রহণ করার জন্য সংকেত দিতে থাকে। মস্তিষ্কের পরিবর্তন, রিওয়ার্ড সেন্টারের উদ্দীপনা, নিউরোট্রান্সমিটারের (ডোপামিন ইত্যাদি) নিঃসরণ, শর্তাধীন অবস্থা এবং ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ সবকিছুই কিন্তু মাদক-নির্ভরতার জন্য দায়ী। মাদক ভেদে এই নির্ভরতা শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই হয়। আবার যদি পরিবারে কোনো মাদকাসক্তির ইতিহাস (জেনেটিক ঝুঁকি) থাকে বা কোনো সামাজিক ঝুঁকি (বন্ধুদের চাপ, মানসিক রোগ, স্ট্রেস, ব্যর্থতা ইত্যাদি) থাকে, তখন মাদকে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই সামাজিক ঝুঁকি, শর্তাধীন অবস্থা ও মস্তিষ্কের গাঠনিক পরিবর্তন যত বেশি থাকে, পরবর্তী সময়ে রিল্যাপ্স (পুনরায় আসক্ত) হওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি থাকে। আর এগুলোর রয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা।

মাদকাসক্তি বা মাদকনির্ভরতার বিষয়টি যতই জটিল হোক না কেন, এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিত্সায় মাদকমুক্ত হওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। এর জন্য মনো-দৈহিক-সামাজিক পদ্ধতিতে মাদকমুক্ত হতে হবে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে যদি চিকিত্সার শুরুতে মাদক গ্রহণ করতে দেওয়া না হয়, তখন মাদকে অভ্যস্ত তার শরীর ও মনে নানা উপসর্গ তৈরি হয়। যেগুলোকে বলা হয় ‘উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম’। একেক ধরনের মাদকের জন্য একেক রকম উপসর্গ থাকে। কিছু সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে খিঁচুনি, অস্থিরতা, শরীরে ব্যথা, ডায়রিয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হঠাত্ করে রেগে যাওয়া, আবেগের পরিবর্তন, মাংসপেশির কাঁপুনি, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, মুখ দিয়ে লালা ঝরা ইত্যাদি। এই পর্যায়ে বেশ কিছু উপসর্গ দূর করার জন্য এবং মাদক গ্রহণের তাড়না কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ওষুধগুলো একদিকে ‘উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম’ কমায়, আরেক দিকে মস্তিষ্কের পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। ওষুধের পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক কাউন্সেলিং, মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং, বিহেভিয়ার থেরাপি ইত্যাদিরও প্রয়োজন আছে। মাদকের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হলেও ধৈর্য ধরে চিকিত্সা করলে মাদকমুক্ত হওয়া সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে যে মাদকমুক্ত হতে পারাটাই শেষ কথা নয়, রিল্যাপ্স বা পুনরায় আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ চিকিত্সা না নিলে বা চিকিত্সার সব ধাপ ঠিকমতো পার না করলে বা বিশেষজ্ঞের উপদেশ অনুযায়ী না চললে পুনরায় আসক্তির ঝুঁকি বাড়ে। সেই ঝুঁকি দূর করার জন্য জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন, পরিপূর্ণ চিকিত্সা, সোশ্যাল থেরাপি বা সামাজিক সহায়তা এবং উপযুক্ত পুনর্বাসন করা খুবই জরুরি। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি মস্তিষ্কের রোগ। এর রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তাই এর চিকিত্সায় অবশ্যই বিজ্ঞাননির্দেশিত প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+9 টি ভোট
1 উত্তর 192 বার দেখা হয়েছে
+7 টি ভোট
3 টি উত্তর 353 বার দেখা হয়েছে
26 ডিসেম্বর 2020 "মনোবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন noshin mahee (110,330 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 357 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,766 জন সদস্য

59 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 59 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  4. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  5. LorieTravers

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...