প্রফেসর ডা. সানজিদা শাহরিয়া
কাউন্সিলর
বিসিআর পেইন অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার
একে বলে স্লিপ ব্রুক্সিজম।
আবার কেউ কেউ জেগে এবং অবচেতনভাবে দাঁতে দাঁত ঘষা বা ব্রুক্সিজমের শিকার হন। স্লিপ ব্রুক্সিজমের সঙ্গে সঙ্গে নাক ডাকা সাধারণত থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না লাগলেও দীর্ঘমেয়াদী হলে নানা সমস্যা তৈরি করে।
লক্ষণ:
• দাঁতে দাঁত ঘষা বা চেপে রাখা।
• এত জোরে দাঁতে দাঁত ঘষা যাতে পাশের মানুষ শুনতে পায়।
• দাঁতের উপরের সারফেস সমতল হয়ে যাওয়া।
• এনামেল ক্ষয়ে যাওয়া।
• দাঁতের সেনসিটিভিটি বেড়ে যাওয়া।
• চোয়াল বা মুখে ব্যথা হওয়া।
• চোয়ালের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।
• কানে ব্যথা বা মাথার তালুতে ব্যথা হওয়া।
• জিহ্বায় দাগ পড়া।
• গালের ভেতরে দাঁতের ছাপ পড়া।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
• যদি দাঁত ক্ষয়ে যায়। নষ্ট হয়ে পড়ে বা সেনসিটিভ হয়ে যায়।
• যদি গাল, চোয়ালে বা কানে ব্যথা হয়।
• যদি আপনার দাঁত কিড়মিড় করার জন্য অন্যরা ঘুমাতে না পারে।
• যদি চোয়াল আটকে যায়, বন্ধ করতে না পারে (Lock jaw)।
এর কিছু শারীরিক ও কিছু মানসিক কারণ আছে।
মানসিক কারণ:
• দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস, রাগ, হতাশা ইত্যাদি।
• আক্রমণাত্মক, প্রতিযোগী মনোভাব সম্পন্ন বা হাইপার অ্যাকটিভ ব্যক্তিত্ব।
• ঘুমের সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া।
• কিছু কিছু মানসিক রোগের ওষুধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
শারীরিক কারণ:
• উপর আর নিচের পাটির দাঁত ঠিক মতো যদি না বসে।
• বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কানে ব্যথা বা নতুন দাঁত ওঠার প্রতিক্রিয়ার মতো।
• বুক জ্বালা করা।
• কিছু কিছু ডিজঅর্ডারের ফলে। যেমন: পার্কিনসন্স বা হান্টিংটন।
যা এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়:
• স্ট্রেস।
• বাচ্চাদের প্রায়শই হয় আস্তে আস্তে বয়ঃসন্ধিতে এটা কমে যায়।
• ব্যক্তিত্বের ধরন যেমন: অস্থির, অধিক তৎপর, রাগী, হিংসাত্মক, প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।
• ধূমপান, চা-কফি, মাদক।
যেসব সমস্যা হতে পারে:
• দাঁত নষ্ট।
• মাথা ব্যথা।
• মুখে ব্যথা।
• মুখ খুললে-বন্ধ করলে চোয়ালের জয়েন্টে (কানের সামনে) কট কট শব্দ হওয়া।
যা করতে পারেন:
প্রথমে ডেনটিস্টের কাছে যাবেন। পরে প্রয়োজন হলে স্লিপ (ঘুম) বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন।
কি কি লক্ষণে ভুগছেন তালিকা করুন। অতীতে এমন কিছু হয়েছিল কিনা মনে করুন। কোনো স্ট্রেসে ভুগছেন কিনা বা জীবনে কোনো বড় পরির্বতন এসেছে কিনা। কি কি ওষুধ খাচ্ছেন তা বিস্তারিত লিখুন।
আপনি কি জানেন রোগ সর্ম্পকে জানা আপনার অধিকার। তাই ডাক্তারের কাছে থেকে জেনে নিন। কেন ব্রুক্সিজম হচ্ছে, কি কারণ হতে পারে ইত্যাদি।
যদি মানসিক কারণে হয় তবে স্ট্রেসের জন্য কাউন্সিলারের কাছে পাঠাতে পারেন।
চিকিৎসা:
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। এটা বড় ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এ চিকিৎসা পদ্ধতি ৩ ভাগে বিভক্ত।
১. দাঁতের ডাক্তার:
• প্রয়োজনে স্প্রিন্ট ও মাউথ গার্ড ব্যাবহার করুন।
• ক্ষেত্র বিশেষে আকাঁ-বাঁকা দাঁত ব্রেস বা সার্জারি করে ঠিক করা যায়।
২. থেরাপি:
• স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য কাউন্সিলিং।
• বিহেভিয়ার থেরাপি। কিভাবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে উপরের পাটি ও নিচের পাটির দাঁত চেপে রাখা যায় দাঁতের ডাক্তারের কাছ থেকে সে পরামর্শ নেওয়া।
৩. ওষুধ:
ওষুধ এ ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো কাজ করে না। তবে পেশীতে ব্যথা হলে ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ বা খুব শক্ত হয়ে গেলে ইনজেকশন দেওয়া হয়।