রিচার্ড প্রাম, ইয়ালের একজন পক্ষীবিশারদ এবং তার দল শত শত নীল বর্ণের পাখিদের পালক নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি দেখতে পান, নীল পালকের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ একটা ঘটনা ঘটে। পালকের কোষের ভেতরে সূত্রাকার কেরাটিন অণু পানি থেকে আলাদা হয়ে যায়, ঠিক যেন ভিনেগার থেকে তেল আলাদা হয়। কোষগুলো পরিণত হয়ে শুকিয়ে গেলে পানির অংশটা বাতাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে ক্ষুদ্রাকার বুদবুদ যুক্ত কেরাটিন প্রোটিনের গঠন তৈরি হয়। যা অনেকটা স্পঞ্জের মত। পাখিদের গায়ের রঙের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। এই রং তাদের সৌন্দর্যের অংশ। বিজ্ঞানীরা বলছে এই রং তার সঙ্গীকে কাছে টানে। তবে পাখিদের গায়ের এ রং কেন লাল হয় সম্প্রতি গবেষকরা তা খুঁজে বের করেছেন। কারেন্ট বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত পৃথক দুই গবেষণাপত্রে বলা হয়, শরীর বিষমুক্ত রাখার জন্য দায়ী কিছু জিনের কারণেই পাখির রঙের ওপর এমন বৈচিত্র্যময় প্রভাব পড়ে। তার মানে লাল রং পাখির শরীরকে শক্তসমর্থ রাখে এবং ক্ষতিকর উপাদান অপসারণ করে। আবার অন্য পাখিও আকর্ষন করে লাল রঙের পাখি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক যোসেফ কোরবো বলেন, পুরুষ পাখির রং যত বেশি লাল, সঙ্গিনী খুঁজে পেতে তারা তত বেশি সফল হয়। অনেক পাখি প্রজাতির মধ্যে এমনটা দেখা যায়। ক্যানারি বার্ড ও জেব্রা ফিঞ্চ নামের পাখিরা নানা রকমের বীজ, ফলমূল ও পোকামাকড় খায়। এসব খাবারের প্রভাবেই তাদের শরীরে হলদে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়, যার নাম ক্যারোটিনয়েড। কিছু পাখি এই হলদে অণুগুলোকে লাল রূপ দিতে পারে, নাম কেটোকেরোটিনয়েড। এ ক্ষেত্রে লাল ও হলদে পাখিরা নিজেদের চোখে সক্রিয় কিছু এনজাইম ব্যবহার করে। একই প্রক্রিয়ায় তাদের পালক ও ত্বক লাল হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ নিক মান্ডি বলেন, ওই পাখিরা যে জিনের কারণে লাল রং দেখতে পায়, সেই একই জিন তাদের শরীরের রং বদলাতে সহায়তা করে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। অপর গবেষণা দলের সদস্য পর্তুগালের পোর্তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মিগুয়েল কার্নেরিও বলেন, পাখির নিজ শরীরের রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি তাদের খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং খাবারও তাদের রঙের ধারাবাহিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।