প্রথমেই বুঝতে হবে, বিড়াল হাজার বছর সময় থেকে পোষা প্রাণী হলেও পূর্বপুরুষদের সাথে তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণের ব্যাপক মিল রয়ে গিয়েছে। এমন একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা মাংসাশী।
কুকুর ভেজিটেরিয়ান ডায়েটে বেঁচে থাকতে পারলেও বিড়াল সেটা পারেনা। বিড়াল বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসে মাংস থাকা প্রয়োজন কারণ বিড়াল টাউরিন উৎপাদনে অক্ষম। টাউরিন হচ্ছে একধরনের অ্যামাইনো এসিড। বিড়ালদের দাঁতের ক্ষতি, লোম পড়া, অন্ধত্ব ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে এই অ্যামাইনো এসিড। ফলে তারা প্রায়ই শিকার করার মুডে থাকে, এমনকি পেটে পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও বিড়ালকে শিকার করতে দেখা যায়। এর থেকে বুঝতে পারি, বিড়ালের জন্য খাওয়া ও শিকার দুটো আলাদা আলাদা প্রয়োজন। বিড়াল প্লেফুল স্বভাবের হয়, যেকোনো খেলনা ও চলন্ত যেকোনো কিছু দেখলে বিড়াল ট্রিগার হয়ে যায়। বিড়াল বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিয়ে খেলতে পছন্দ করে, এগুলো তাদেরকে শিকার করার মতোই আনন্দ দেয়।
শিকার করার জন্য অনেক প্রাণী থাকলেও বিড়াল বিশেষ করে ইঁদুরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কারণ ইঁদুর বিড়ালের জন্য যথাযথ শিকার। ইঁদুর এলোমেলোভাবে ছুটোছুটি করে যা বিড়ালকে আকৃষ্ট করে। বিড়াল প্রাকৃতিক শিকারী এবং শিকার করার অভ্যাস তারা পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছে। এই অভ্যাসের কারণে প্রত্যেক বছর বন্য বিড়ালরা বিলিয়ন সংখ্যক পাখি শিকার করে। এছাড়াও বিভিন্ন দ্বীপে বন্য বিড়ালের জন্য স্থানীয় প্রায় ৩৩ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। এছাড়াও খরগোশ, কাঠবিড়ালি, সাপ, ঘুঘু, ইঁদুরবিশেষ প্রাণী, স্তন্যপায়ী বিভিন্ন প্রাণীও বিড়ালের শিকারে পরিণত হওয়ার রেকর্ড আছে। চীনে ২০২১ সালে করা একটি পাবলিক সার্ভে মতে বন্য বিড়াল প্রতিবছর প্রায় ১.৬১–৪.৯৫ বিলিয়ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ১.৬১–৩.৫৮ বিলিয়ন মাছ, ১.১৩–৩.৮২ বিলিয়ন উভচর, ১.৪৮–৪.৩১ বিলিয়ন সরীসৃপ, ২.৬৯–৫.৫২ বিলিয়ন পাখি এবং ৩.৬১–৯.৮০ বিলিয়ন স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে।
এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ভিত্তিতে বন্য বিড়ালের আক্রমণের ফলে পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিলুপ্তির হার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
© নিশাত তাসনিম
রেফারেন্স : https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cat_predation_on_wildlife