আমাদের মহাবিশ্বে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে যাদের আমরা 'তারা তারকা' বলি। বিজ্ঞানীদের হিসেবে শুধু আমাদের গ্যালাক্সি, মানে মিল্কিওয়েতেই রয়েছে প্রায় ২০০-৩০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। তবে সে যাই হোক, রাতের আকাশে আমরা যখন এসব তারা দেখি, তখন মনে হয় তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।
কিন্তু কেন এই তারা গুলো মিট মিট করে? অবশ্য এরা অনেক অনেক দুরে অবস্থিত হওয়ার কারণে খুবই ক্ষুদ্র দেখা যায়। এমনকি তুলনামূলক খুব অল্প নক্ষত্রই আমরা দেখতে পাই। বাকি নক্ষত্রগুলো এত বেশি দূরে অবস্থিত যে সেসব নক্ষত্র থেকে আলো আসতে আসতে তা বিলীন হয়ে যায়। আবার অধিকাংশ নক্ষত্রের যে আলো আমরা দেখতে পাই, এত দূরত্ব অতিক্রম করতে করতে নক্ষত্রটিই বিলীন হয়ে যায়। অর্থাৎ যে তারাদের আমরা দেখি তাদের অনেকেরই অস্তিত্বই এখন আর নেই।
তারাদের এমন মিটমিট করে জ্বলার পেছনে মূল যে কারণ সেটি হল আলোর প্রতিসরণ। এমন অসীম দূরত্ব অতিক্রম করে পৃথিবীতে আসতে হলে তারা থেকে আগত আলোকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসতে হয়। এরপর যখন এরা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান গ্যাসের কারণে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। আলোর প্রতিসরণ বলতে বুঝায় মূলত আলোর মাধ্যম পরিবর্তন করার জন্য এর দিক পরিবর্তন হওয়াকে। যেহেতু মহাশূন্যে ভ্রমণের সময় আলোকে কোন মাধ্যমের ভেতর দিয়ে যেতে হয় না, তাই যখন এটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন তার যাত্রাপথে মাধ্যমের পরিবর্তন ঘটে, সংক্ষেপে বললে আলো শূন্য মাধ্যম থেকে বায়বীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে।
আবার, বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র গ্যাসের ঘনত্ব সমান নয়। কোথাও বায়ুমণ্ডলের স্তর হালকা আবার কোথাও অপেক্ষাকৃত ঘন। যে কারণে তারা থেকে আগত আলোক রশ্মিকে বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে আসতে বার বার প্রতিসরিত হতে হয় এবং বার বার দিক পরিবর্তন করতে হয়। আর আমাদের বায়ুমণ্ডলও স্থির নয়। এর বিভিন্ন স্তর ক্রমাগত কাপতে থাকে। ফলে যখন তারার আলো ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় তখন মনে হয় কখনো জ্বলছে আবার কখনো নিভছে।
তারার আলোর যাত্রাপথে বায়ুমণ্ডলের ভেতর এসব ঘটনার কারণেই আমরা রাতের আকাশের তারাগুলোকে স্থির না দেখে মিটমিট করে জ্বলতে দেখি।
Source: wisilife