জেনেটিক মেমোরি বলে আরেক ধরনের স্মৃতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করছেন। এই স্মৃতির অস্তিত্বের বিষয়ে তারা একমত হলেও, কিভাবে এই স্মৃতি কাজ করে তা সুস্পষ্ট করতে আরো সময়ের প্রয়োজন হবে। জেনেটিক মেমোরিকে মনোবিজ্ঞানীরা সেই ধরনের স্মৃতি বলছেন যে স্মৃতি নিমাের্ণ ইন্দ্রিয় অনভ‚তির কোনো ইনপুট নেই। জন্মের পর শিশুর মধ্যে ভাষাসহ বেশ কিছু স্মৃতি প্রোথিত থাকে। এ স্মৃতি জেগে ওঠে পরিবেশ থেকে ইনপুট এলে।
জেনেটিক মেমোরিকে একধরনের বায়োলজিক্যাল মেমোরিও বলা যেতে পারে.পুরনো যে স্মৃতিকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক উপস্থাপনায় নিয়ে আসে। সেই স্মৃতিকেই বলা হয় কাযর্করী স্মৃতি। পুরনো সেনসরি বা মটর স্মৃতিকে যখন কাযর্করী স্মৃতিতে পরিণত করা হয় তখন বলা হয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে, আর পুরনো কেন্দ্রীয় উপস্থাপনার স্মৃতিকে যখন কাযর্করী স্মৃতিতে পরিণত করা হয় তখন বলা হয় চিন্তন বা পরিকল্পনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
মানুষের ভাষাগত স্মৃতিতে চিন্তন বা পরিকল্পনা সম্পকির্ত স্মৃতিই বেশি। কারণ ভাষার উপাদান গুলোকে (ধ্বনি, শব্লবাক্য প্রভৃতি) কাজে লাগিয়ে চিন্তন বা পরিকল্পনা মানুষ বেশি করে থাকে। তাই সেই প্রসেসড তথ্য ভাষা অঞ্চলের স্মৃতিভান্ডারে জমা থাকে। প্রয়োজন পড়লে সেই স্মৃতিভান্ডার থেকে নিয়ে আসা হয়। ভাষা অঞ্চল এমন একটি অঞ্চল যে অঞ্চল নিজের মতো করে অন্য যে কোনো ধরনের তথ্য যেমন দৃশ্যসহ সব সেনসরি তথ্য, মটরগত তথ্য, আবেগীয় তথ্য, স্থান-কালের তথ্য সংরক্ষণ এবং বীবপঁঃরড়হ করতে পারে।
আমরা স্মৃতি নিমার্ণের প্রক্রিয়ার সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। স্মৃতির রয়েছে নানা রকম সকম। প্রথমেই চলে আসে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে তথ্য মানুষ গ্রহণ করে সেই তথ্যের স্মৃতি। এই স্মৃতিকে বলা হয় সেনসরি মেমোরি অল্প কয়েক সেকেন্ডের এই মেমোরি। এই মেমোরি পরে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি এবং দীঘর্স্থায়ী স্মৃতি প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যায়।
স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি হচ্ছে তাই যা অল্প কিছুসময় মনে থাকে। যে স্মৃতি নিমাের্ণ নতুন কোনো জিনের প্রয়োজন পড়ে না। দীঘর্স্থায়ী স্মৃতি হচ্ছে সেই স্মৃতি যে স্মৃতি অনেকক্ষণ ধরে মনে থাকে এবং অনেক সময় সারাজীবন ধরে মনে থাকে। এই স্মৃতি নিমার্ণ প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই স্মৃতি নিমাের্ণর সময় মস্তিষ্কে নতুন জিন সক্রিয় হয়।
যাই হোক, স্মৃতি ও শিক্ষার সঙ্গে জড়িত আরেকটি বিষয় খুবই চিত্তাকষর্ক। তো হলো টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার সঙ্গে স্মৃতি ও শিক্ষাকে জড়িত করে ফেলা। প্রতিটি ইন্দ্রিয় এমনকি মটর অঞ্চলে স্নায়ুগুলোর একটি বিশেষ উপস্থাপনা তৈরি হয়। একেক এলাকায় একেকটি উপস্থাপনা। এই উপস্থাপনাগুলোর প্রতিছবি আবার মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় পরিচালনা অঞ্চল প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স সব উপস্থাপনাগুলোর সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা হয়। এই উপস্থাপনাকে বলা যেতে পারে মানসিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় একটি জায়গা। যেখানে চিন্তন ঘটে, ঘটে পরিকল্পনা আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো উচ্চতার কগনিটিভ কাযর্ক্রম।
প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্সর এই জায়গাটি চিন্তন পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি স্মৃতি নিমাের্ণর সঙ্গেও রয়েছে এই উপস্থাপনার যোগসূত্র। এই উপস্থাপনায় অন্যান্য অঞ্চলের উপস্থাপনা এবং তথ্য আসে কাযর্করী স্মৃতি হিসেবে। কী কী কাযর্করী স্মৃতি একটি কেন্দ্রীয় উপস্থাপনায় কোনো মুহ‚তের্ আসতে তা নিভর্র করে পরিস্থিতি, পরিবেশ এবং মনোযোগের ওপর। বলা যায়, প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার মাধ্যমে সচেতন দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।
স্মৃতির বংশগতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দুটো জিনের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছেন। জিন দুটি হচ্ছে এপিওই অ্যাপিলিপ্রোটিন ই জিন এবং কিবরা জিন। দুটো জিনই প্রোটিন সম্পকির্ত কাযর্ক্রমে সক্রিয় থেকে ভ‚মিকা রাখে স্মৃতি প্রক্রিয়ায়। অথার্ৎ স্নায়ুকে স্মৃতি সংরক্ষণ এবং স্মৃতি ব্যবহারে পারদশীর্ করতে একটি জিনগ্রুপ কাজ করে। সেই জিনগ্রুপের অন্যতম সদস্য হচ্ছে এপিওই ও কিবরা জিন।
স্মৃতি সম্পকির্ত রোগ যেমন অ্যালকোইমায়মসহ নানারকম রোগ সেগুলো ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে এপিওই, কিবরা প্রভৃতি জিনের ত্রুটির মাধ্যমে। স্মৃতিবিষয়ক ধারণার অন্যতম অজর্ন হিসেবে কাযর্করী স্মৃতিকে অনেক বিজ্ঞানী দেখে থাকেন। মস্তিষ্ক কোনো স্মৃতিকেই হারিয়ে ফেলে না। সচেতন মনে হোক, আর অবচেতন মনেই হোক মস্তিষ্ক প্রতিটা স্মৃতিকে ধরে রাখে। সচেতন স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখে অবচেতন স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখে পরিবতির্ত প্রোটিনের মাধ্যমে।
তারপর আমরা যদি স্মৃতির অন্য বিভাজনগুলোকেও বিবেচনায় নেই যেমন সেনসরি মেমোরি, জেনেটিক মেমোরি প্রভৃতি (মেমোরি টিকা বক্স দৃষ্টব্য) সব স্মৃতিকেই মস্তিষ্ক ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কাযর্করী স্মৃতিতে রূপান্তর করতে পারে। কাযর্কর স্মৃতির কেন্দ্রীয় পরিচালনা হয়ে থাকে উচ্চতর মস্তিষ্কে বা সেরেব্রাল কটেের্ক্স। মূল পরিচালনাটা হয় ফ্রন্টাল লোপে একেবারে সামনে প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্স। প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্সর কাজ পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে সেরেব্রাল কটেের্ক্সর অন্যান্য লোব বা অংশ অথার্ৎ টেমপোরাল লোব, প্যারেইটাল লোব এবং অক্সিপিটাল লোব।
কাযর্করী স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে যে তা আসলে পুরগে স্মৃতিকে ঝালিয়ে নেয়া, নতুন স্মৃতি তৈরি করার অন্যতম ধাপ। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করার জন্য হিপোকাম্পাস আসলে ঈবহঃৎধষ বীবপঁঃরড়হ-এর সহযোগিতা নেয়। তবে ঘুমের মধ্যে যখন হিপোকাম্পাস স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে তখন ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ ঢ়ৎবপবহং-এর সাহায্য নেয় কিনা তা নিয়ে বিতকর্ রয়েছে। এ সংক্রান্ত গবেষণা এখনো চলমান। আম্পি ডালা ইমোশনাল মেমোরি তৈরির সময় ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হÑএর সাহায্য নেয়। ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-কে অনেক বিজ্ঞানী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূবর্ ধাপ হিসেবে বলে থাকেন। এই পূবর্ ধাপকে তারা বলার চেষ্টা করছেন চিন্তনের ধাপ বা পরিকল্পনার ধাপ। ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-এর মাধ্যমে চিন্তন বা পরিকল্পনা করে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বা প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া যেগুলো অবচেতনভাবে হয় মানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় সেগুলো প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-এর প্রয়োজন পড়ে না। মধ্য মস্তিষ্ক থেকে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সেগুলো সংঘটিত হয়ে থাক। এসকল কাযর্ক্রম জিনের সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
সোর্সঃ যায়যায়দিন