বিট লবণ দেওয়ার পর শশার রঙে যে হালকা গোলাপি আভা দেখা যায়, তার প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ হলো শশার প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ এবং বিট লবণের খনিজ উপাদান, বিশেষ করে আয়রনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া।
এই ব্যাপারটি কয়েকটি ধাপে ঘটে:
- মূল কারণ: রাসায়নিক বিক্রিয়া
এই রঙ পরিবর্তনের পেছনের মূল চালিকাশক্তি হলো একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। শশার খোসা এবং এর ঠিক নিচের অংশে অ্যান্থোসায়ানিন (Anthocyanin) নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ থাকে। এই অ্যান্থোসায়ানিন বিভিন্ন খনিজ এবং pH মানের পরিবর্তনে নিজের রঙ বদলাতে পারে।
- পরিবর্তনের পেছনের বিজ্ঞান
* বিট লবণের উপাদান: সাধারণ লবণের (সোডিয়াম ক্লোরাইড) চেয়ে বিট লবণের গঠন ভিন্ন। এতে সোডিয়াম ক্লোরাইড ছাড়াও আয়রন সালফাইড (Iron Sulfide) এবং অন্যান্য সালফার যৌগ সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। এই আয়রন সালফাইডই বিট লবণকে তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ এবং গোলাপি-ধূসর রঙ দেয়।
* অভিস্রবণ (Osmosis) প্রক্রিয়া: যখন শশার ওপর বিট লবণ ছিটানো হয়, তখন অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার কারণে শশার কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এই পানি শশার পৃষ্ঠে একটি তরল আস্তরণ তৈরি করে।
* রাসায়নিক বিক্রিয়া: কোষ থেকে বেরিয়ে আসা পানিতে বিট লবণের আয়রন সালফাইড এবং অন্যান্য খনিজ দ্রবীভূত হয়। এই দ্রবীভূত আয়রন তখন শশার কোষে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক পদার্থের সংস্পর্শে আসে। আয়রনের আয়নের সাথে অ্যান্থোসায়ানিনের বিক্রিয়ার ফলেই একটি নতুন যৌগ তৈরি হয়, যার রঙ হালকা গোলাপি।
## পুরো প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে
- লবণ প্রয়োগ: শশার ওপর বিট লবণ দেওয়া হয়।
- পানি নিঃসরণ: অভিস্রবণের কারণে শশা থেকে পানি বের হয়।
- খনিজ দ্রবীভূত: সেই পানিতে বিট লবণের আয়রন ও অন্যান্য খনিজ মিশে যায়।
- রঙ পরিবর্তন: দ্রবীভূত আয়রন শশার অ্যান্থোসায়ানিনের সাথে বিক্রিয়া করে হালকা গোলাপি আভা তৈরি করে।
সুতরাং, এই পরিবর্তনটি শশার কোনো পচন বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার লক্ষণ নয়, বরং এটি একটি স্বাভাবিক এবং তাৎক্ষণিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল।