চীনের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বন্যা প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী এবং এই প্রকল্পে কি কি কাজ রয়েছে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
106 বার দেখা হয়েছে
"বাংলাদেশ ও বিশ্ব" বিভাগে করেছেন (710 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (700 পয়েন্ট)

তিস্তা মাস্টার প্ল্যান কী এবং এর কাজগুলো কী?

তিস্তা মাস্টার প্ল্যান হলো চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত একটি বড় পরিকল্পনা, যার নাম “তিস্তা নদী ব্যাপক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প” (Teesta River Comprehensive Management and Restoration Project বা TRCMRP)। এটার মূল লক্ষ্য হলো তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা, ভাঙন রোধ করা এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমানো। এই প্রকল্পের জন্য চীন থেকে প্রায় ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮২০০ কোটি টাকা) ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এখন এর কাজগুলো কী কী, সেটা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখি:

১. নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ (River Regime Control):
তিস্তা নদী একটি “ব্রেইডেড” নদী, অর্থাৎ এটার অনেকগুলো ছোট ছোট শাখা আর দ্বীপ আছে। এই প্রকল্পে নদীর পথকে সংকীর্ণ করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে আনার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে নদীর বিছানা ৫-৬ কিলোমিটার চওড়া, কিন্তু এটাকে ১ কিলোমিটার বা তারও কমে নামিয়ে গভীর করা হবে। এতে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হবে।

২. বন্যা নিয়ন্ত্রণ (Flood Management):
নদীর দুই তীরে ১০০ কিলোমিটারের বেশি বাঁধ (Embankments) তৈরি করা হবে। এই বাঁধগুলো ভারী বর্ষার সময় পানি ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে। এছাড়া “গ্রয়েন” (Groynes) আর “ক্রস বার” (Cross Bars) নামে কাঠামো বানানো হবে, যেগুলো নদীর তীর ভাঙন কমাবে।

৩. পানি সংরক্ষণ (Water Storage):
বড় বড় জলাধার (Reservoirs) তৈরি করা হবে, যেখানে বর্ষায় অতিরিক্ত পানি জমা করে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এটার ফলে কৃষকদের পানির সংকট কমবে।

৪. নদী খনন (Dredging):
নদীর বিছানা গভীর করার জন্য খনন করা হবে। এতে পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়বে এবং বন্যার ঝুঁকি কমবে।

৫. ভূমি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন (Land Reclamation and Development):
নদীর তীরের ভাঙনের কারণে হারিয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করা হবে। এছাড়া তীরে চার লেনের সড়ক ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে।

৬. পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার (Environmental Restoration):
নদীর পানির গুণগত মান ভালো করা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কাজ করা হবে।

৭. সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Socio-Economic Development):
এই প্রকল্পে রংপুর অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, শিল্প স্থাপন এবং আধুনিক শহর গড়ে তোলার লক্ষ্য আছে।


বন্যা নিয়ন্ত্রণে এটা কতটা কার্যকর হবে?

এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিকল্পনা কি সত্যিই বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হবে? চলো, বিজ্ঞান আর যুক্তি দিয়ে এটার ভালো-মন্দ দিকগুলো বিশ্লেষণ করি।

ভালো দিক:

  • বাঁধ ও খননের প্রভাব: বাঁধ তৈরি করলে বর্ষার সময় পানি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে না। নদী গভীর হলে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে ভারী বৃষ্টি আর ভারতের সিকিমে একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধের ক্ষতির কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়েছিল। এই ধরনের বাঁধ এবং গভীর চ্যানেল থাকলে পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।

  • পানি সংরক্ষণ: জলাধারগুলো বর্ষার পানি জমিয়ে শুষ্ক মৌসুমে (যখন তিস্তার পানি ১০০০ কিউসেকের নিচে নেমে যায়) কৃষির জন্য ব্যবহার করা যাবে। এতে বন্যার পানি নষ্ট না হয়ে কাজে লাগবে।

  • তীর ভাঙন কমানো: গ্রয়েন আর ক্রস বারের মতো কাঠামো তীরের মাটি ধসে পড়া রোধ করবে, যা বন্যার সময় বড় সমস্যা।

চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা:

  • নদীর প্রকৃতি: তিস্তা একটি ব্রেইডেড নদী, যার চরিত্র হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা (যেমন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মনসুর রহমান) বলছেন, এটাকে একটি সংকীর্ণ চ্যানেলে আনা খুব কঠিন। নদী তার স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরতে চাইবে, আর এতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

  • পলি সমস্যা: তিস্তা প্রতি বছর ৪৯ মিলিয়ন টন পলি বহন করে। খনন করলেও এই পলি দ্রুত জমে নদী আবার ভরাট হয়ে যেতে পারে। এটার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ লাগবে, যা ব্যয়বহুল।

  • উজানের পানি নির্ভরতা: তিস্তার পানি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসে। ভারতে ৩৫টির বেশি ব্যারেজ আছে, যেগুলো পানি আটকে দেয়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানি কমে যায়। এই প্রকল্প ভারতের সাথে পানি ভাগাভাগির সমস্যা সমাধান না করলে পুরোপুরি সফল হবে না।

  • পরিবেশগত প্রভাব: নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ বদলে গেলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হতে পারে। মাছের প্রজনন কমে যেতে পারে, আর পানির গুণগত মান খারাপ হতে পারে।

বর্তমান অবস্থা ও কার্যকারিতার প্রমাণ:

এই প্রকল্প এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৬ সালে চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, এবং ২০২০ সালে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তবে ২০২৩ সালে চীন প্রাথমিক মূল্যায়নে বলেছে যে খরচ-লাভের হিসাবে কিছু গ্যাপ আছে। ফলে এটার সম্পূর্ণ কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদের বাস্তবায়নের পর ফলাফল দেখতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটা শেষ হওয়ার কথা।


আমার বাক্তিগত মতামত:

এই প্রকল্পটা তাত্ত্বিকভাবে অনেক সম্ভাবনাময়। বন্যা কমানো, পানি সংরক্ষণ আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটা দারুণ হতে পারে। কিন্তু, নদীর প্রাকৃতিক চরিত্রের সাথে লড়াই করা সহজ নয়। আমার মতে, এটা তখনই সফল হবে যদি:

  • ভারতের সাথে পানি ভাগাভাগির একটা চুক্তি হয়।

  • পলি ব্যবস্থাপনার জন্য শক্তিশালী পরিকল্পনা থাকে।

  • পরিবেশের ক্ষতি কমানোর দিকে নজর দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
3 টি উত্তর 746 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 196 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 263 বার দেখা হয়েছে

10,826 টি প্রশ্ন

18,535 টি উত্তর

4,745 টি মন্তব্য

841,223 জন সদস্য

84 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 84 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. mehrob.durjoy

    140 পয়েন্ট

  2. Curious

    140 পয়েন্ট

  3. Shihabuddin

    130 পয়েন্ট

  4. Muntasir Imteaz

    110 পয়েন্ট

  5. Shoumik

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল #science কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য বাচ্চা হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...