দুটো যানই মিনিমাল স্টেট এ রান করছে। অর্থাৎ এমন অবস্থা যেখানে এদের সর্বনিম্ন শক্তি খরচ হচ্ছে। ফলে সঞ্চিত শক্তি দীর্ঘসময় ব্যবহার করতে পারছে। যান দুটোকে বানানো হয়েছেই এমন কায়দায় যেন অবস্থা বুঝে স্লিপ আর হাইবারনেট মুড এ যেতে পারে। আর যানদুটো থেকে প্রতিদিন যে সংকেত পাঠানো হয় এমনটাও নয়।
ভয়েজার ১ ও ২ দুটোই সূর্য থেকে অনেক দূরে এটা সত্যি কিন্তু এর ভেতরের যন্ত্রাংশ এদের এখনো বিকল হতে দিচ্ছেনা।
দুটো যানেই ব্যবহৃত হয়েছে সময়ের প্রচলিত প্রযুক্তির চাইতে অনেক বেশি উন্নত এবং বিশেষ বিদ্যুৎ যন্ত্র যাকে Radioisotope Thermoelectric Generator (রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেক্ট্রিক জেনারেটর) বলে , যার মধ্যে থাকা Thermocouple (থার্মোকুপল) যন্ত্রাংশটি আন্তপারমাণবিক পর্যায়ে তাপ শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করে। ফলে সঞ্চিত শক্তি দীর্ঘসময় ব্যবহার করা যায় নূন্যতম অবস্থায় নিয়ে গিয়ে।
এদের সচল থাকার আরো একটা বড় কারণ হচ্ছে মিনিমাল স্টেট এ খুবই অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ।বিদ্যুৎ খরচের বা Power Consumption এর ধারণা থাকলে জেনে অবাক হবেন যে যান দুটি নূন্যতম অবস্থায় গোটা একবছর চলতে মাত্র ৪ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে! যেখানে বসতবাড়ির একটা রেগুলার সাইজ বা ৫৬ ইঞ্চির ফ্যান গড়পড়তা ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে প্রতি ঘন্টায়...
এবার আসি কোনো মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সংঘর্ষ না হওয়া।
এর পেছনে তিনটা কারণ কাজ করেছে।
১. এদের আকার। সৌরজগতে ,বিশেষকরে Kuiper Belt নামক পাথুরে খন্ডের ঘিঞ্জি বলয় দূর থেকে দেখতে অনেক ঘিঞ্জি মনে হলেও বস্তুগুলোর মধ্যেকার ফাঁপা জায়গা অনেক। বিশেষকরে ভয়েজার ১ ও ২ এর আকারের কাছে এই ফাঁপা জায়গাগুলো যথেষ্ট বিশাল। ফলে ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া সহজ।
২. নিতান্ত সৌভাগ্য। আমরা যেমনভাবেই বলিনা কেন, ভয়েজার ১ ও ২ উভয়েরই নিতান্ত সৌভাগ্য বটে। Kuipar Belt এর ঘিঞ্জিগুলোর ফাঁকফোকর ভয়েজারের জন্য বিশাল হলেও সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল না যে তা কিন্তু নয়। অনেকটা Luck by Chance এর মতই বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বেচারা যান দুটো এতদূর চলে যেতে পেরেছে।
৩. এদের প্রজেকশন প্যাথ পা প্রক্ষেপণ পথ নির্ধারণ।
মহাকাশে একটানা ছুটে যেতে আলাদাভাবে কোনো জ্বালানীর প্রয়োজন পড়ে না । মাঝেমাঝে দিক ঠিক রাখতে বিভিন্ন যান জ্বালানী দ্বারা সৃষ্ট ধাক্কা ব্যবহার করে থাকে যাকে Thrust বলে।
কিন্তু সুদীর্ঘ পথে চলতে গিয়ে সেই জ্বালানীও ফুরোবে। তাই ভরসা হচ্ছে এমন পথে যানকে নিক্ষিপ্ত করা যে পথে ঝুঁকি সবচে কম। ভয়েজারযুগলের গতিপথও প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেভাবে, যেন সেগুলো যতদূর পারা যায় সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়িয়ে বহুদূর পথ পাড়ি দিতে পারে।