তেতুল, যার নাম শুনলেই জিভে পানি আসে। ফল হিসেবে তেঁতুল হয়তো ততটা উৎকৃষ্ট নয়, কিন্তু মেয়েদের কাছে তেঁতুলের একটা আলাদা সমাদর আছে। মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে, সস হিসেবে এবং গর্ভবতী নারীরা মুখের বিস্বাদ কাটাতে তেঁতুলকে আঙুলের ডগায় তুলে নেন সর্বাগ্রে। ছোট-বড় সবার কাছেই তেঁতুল পরিচিত এবং কিছুটা হলেও প্রিয়।
আগেই বলেছি, তেঁতুল আহামরি কিছু নয়। যেটুকু উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে, বিচি ছাড়া পাকা তেঁতুলের প্রতি ১০০ গ্রামে ১৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, ক্যারোটিন থাকে ৬০ মাইক্রোগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি থাকে ২৮৩ কিলোক্যালরি। এই তেঁতুল সম্পর্কে কিছু বাজে কথা প্রচলিত আছে। অনেকেই বলে থাকেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। এ কথাটির উদ্ভব কীভাবে হলো, সেটি জানি না। তবে কথাটা যে ঠিক নয়, এটা সত্য। রক্তকে পানি করে দেওয়ার মতো কোনো উপাদানই তেঁতুলের মধ্যে নেই।
এবার রক্ত ও পানির আয়োনিক অবস্থাটা একটু দেখা যাক। রক্তের পিএইচ ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৪ আর পানির পিএইচ ৭। রক্ত ও পানির পিএইচ খুব কাছাকাছি মনে হলেও এ দুটির পিএইচ এক হওয়ার আশঙ্কা, অর্থাৎ রক্তের পিএইচ সহজেই কমে আসার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, রক্তের রয়েছে বাফার সিস্টেম। এই বাফার সিস্টেমের কাজ হচ্ছে রক্তে এসিড বা অম্ল এবং অ্যালকালি বা ক্ষারের পরিমাণের তারতম্য হলে তাকে স্বাভাবিক রাখা। এই বাফার সিস্টেম ব্যর্থ না হলে পিএইচের তারতম্য ঘটবে না। আর শরীর মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত না হলে রক্তের পিএইচের তারতম্য ঘটার আশঙ্কা কম। আর সামান্য তেঁতুলে রক্তের পিএইচ এসে পানির সমান হবে, তা কোনো ক্রমে আশা করা যায় না।
এ ছাড়া পানির মধ্যে আছে শুধু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। আর রক্তের মধ্যে হাইড্রোজেন-অক্সিজেন ছাড়াও প্রচুর প্রোটিন ইলেকট্রোলাইটসহ আরো অনেক উপাদান রয়েছে। কাজেই শুধু পিএইচ সমান হলেই যে রক্ত শুধু পানি হয়ে যাচ্ছে, সেটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, পিএইচ কমলেও রক্তের অন্যান্য উপাদানও বিভিন্ন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। যা-ই হোক, আসল কথা হচ্ছে, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয় না। এটাই ঠিক কথা। তেঁতুল খেয়ে রক্তকে পানি করা সম্ভব নয়।