মাছ কী খাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে স্বাদে পার্থক্য তৈরি হতে পারে। কিন্তু গঙ্গা, মেঘনা ও পদ্মার ইলিশ দুটোই আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। চাষের ইলিশ নয় বিধায় দুই ইলিশই সাগরে একই ধরনের খাবার খেয়ে থাকে।
পেটে ডিম আসল মাত্রই রহনা দেয় সমুদ্রের ইলিশ স্রোতের বিপরীতে গঙ্গা ও পদ্মার দিকে । দুই নদীতে আবার খাবারও আলাদা। তাহলে নদীতে আসার পর খাবারের কারণেই কি ইলিশের স্বাদে ভিন্নতা আসে? উত্তর হলো না। আর মজার বিষয় হলো লোনা পানি ছেড়ে মিষ্টি পানিতে উজান বেয়ে যাওয়ার সময় ইলিশ তেমন কিছুই খায় না। এসময় ইলিশ সমুদ্রে জমানো চর্বি কাজে লাগায়।
সাগরে থাকা অবস্থায় ইলিশ মূলত প্ল্যাঙ্কটন খায়। প্ল্যাঙ্কটন ছাড়াও ওয়াটার ফ্লি এবং প্রচুর বালি ও কাদা গিলে থাকে এই ইলিশ। আরও কিছু শেওলা খায়। খাদ্যাভাসের কারণেই ইলিশের দেহে প্রচুর তেল বা চর্বি জমে এবং বিশেষ এক গন্ধের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নদীর ইলিশ ও সমুদ্রের ইলিশের স্বাদে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বলা হয় সমুদ্রের ইলিশের গন্ধ হলো পেট্রলের মতো!
সমুদ্র থেকে ইলিশ যত বেশি নদীর দিকে আগাতে থাকে, ততই তাদের চর্বি ভাঙতে থাকে। স্যাচুরেটেড এই ফ্যাট ভেঙে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বা পুফায় বদলে যায়। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশের স্বাদের মূল কারণ এই পুফা। সমুদ্রের ইলিশের যত বেশি মেদ থাকবে, তারা তত দ্রুত নদীতে পাড়ি দিতে পারবে। আর তত বেশি ফ্যাট ভেঙে বাড়বে তার স্বাদ।
তেল ছাড়াও এই সাঁতারের কারণে ইলিশের পেশি শিথিল হয়ে নরম হয়ে আসে। একইসঙ্গে সমুদ্র থেকে যত দূরে যাবে, তত বেশি পুরোনো বর্জ্য শরীর থেকে বের হয়ে ইলিশ তাজা হবে। কমে যাবে তার লবণাক্ততাও। অর্থাৎ সহজ কথায় যে ইলিশ যত বেশি পথ পাড়ি দিবে, তার স্বাদও তত বাড়বে।
সুতরাং যে নদীর বা নদীতে দূরত্ব বেশি অতিক্রম করবে, তার স্বাদও বেশি হবে।
কিন্তু বর্তমানে যে হারে পানি দূষণ বা সমুদ্র দূষণ ঘটছে, তাতে ইলিশের চর্বি আর আগের মতো জমে না, ফলে ইলিশের স্বাদও কমে যাচ্ছে।