ঝিনুকের পেটে মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। ঝিনুক একটি বাইভালভিয়ান প্রাণী, যার অর্থ এর দেহ দুটি অংশে বিভক্ত। ঝিনুকের খোলস তৈরি করে একটি স্তর যাকে ম্যান্টল বলা হয়। ম্যান্টল একটি বিশেষ ধরনের তরল তৈরি করে যাকে ন্যাক্রে বলা হয়। ন্যাক্রে হলো এক ধরনের খনিজ পদার্থ যা ঝিনুকের খোলস তৈরি করে।
ঝিনুকের খোলস খোলা থাকা অবস্থায় যদি কোনো খাদ্যকণা, পরজীবি বা অন্য কোনো পদার্থ ঝিনুকের ম্যান্টলের মধ্যে আটকা পড়ে, তাহলে ঝিনুকের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঝিনুকের ম্যান্টল সেই পদার্থটিকে ন্যাক্রে দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। একসময় আচ্ছাদিত সেই বস্তুটি মুক্তায় পরিণত হয়।
মুক্তা তৈরির জন্য ঝিনুকের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। ঝিনুকটি অবশ্যই একটি মাসল শ্রেণীর ঝিনুক হতে হবে। এই শ্রেণীর ঝিনুকের ম্যান্টল ন্যাক্রে তৈরি করার ক্ষমতা বেশি থাকে। এছাড়াও, ঝিনুকটিকে এমন একটি পরিবেশে বসবাস করতে হবে যেখানে খাদ্য এবং শত্রু থেকে রক্ষা পেতে পারে।
প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। এটি সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। তবে, মুক্তা চাষের মাধ্যমে এই সময় কমিয়ে আনা সম্ভব। মুক্তা চাষে ঝিনুকের খোলসের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র বস্তু স্থাপন করা হয়। এই বস্তুটিকে কেন্দ্র করে ঝিনুক ন্যাক্রে তৈরি করে এবং মুক্তা তৈরি করে। মুক্তা চাষে মুক্তা তৈরির সময় সাধারণত ১ থেকে ২ বছর হয়।
মুক্তা বিভিন্ন রঙের হতে পারে। সাধারণত মুক্তা সাদা, গোলাপি, বা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। তবে, অন্যান্য রঙের মুক্তাও পাওয়া যায়। মুক্তার মান নির্ভর করে এর আকার, রঙ, এবং মসৃণতার উপর। বড়, সুন্দর, এবং মসৃণ মুক্তা বেশি মূল্যবান।