ভেন্ট্রেলোকুইজম কী? আমাদের দেশে এর প্রচলন কীভাবে শুরু হয়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
355 বার দেখা হয়েছে
"মিথোলজি" বিভাগে করেছেন (4,010 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (4,010 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

অনেকে হয়তো শব্দটার সাথে নতুন পরিচিত। 

ভেন্ট্রিলোকুইজম হচ্ছে কোনো ব্যাক্তি তার কন্ঠ ব্যবহার করে এমন ভাবে শব্দ উচ্চারন করা যেন দর্শক মনে করে শব্দটা ব্যাক্তির মুখ থেকে নয় অন্য কোন স্থান থেকে এসেছে। 

এই ভেন্ট্রিলোকুইজম এর মাধ্যমে অনেক বড় মানের তান্ত্রিক মানুষকে ধোকা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। বিশেষ করে স্পিরিচুয়ালিস্টরা এটা ব্যবহার করে মানুষকে ধোকা দেয়। স্পিরিচুয়ালি হচ্ছে যারা আত্মা ডাকে বিশেষ করে তারা প্ল্যান চেট বা ওইজা বোর্ডে এই টেকনিকটা ব্যবহার করে থাকে। যেকোন সাধারন মানুষ এই টেকনিকে সহজে ধোকা খেয়ে যাবে। বাংলাদেশেও ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আছে। তবে তারা নিজেরাও জানে না যে টেকনিক ব্যবহার করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে এটাকে যে ভেন্ট্রিলোকুইজম বলে চলুন যেনে নিই ভেন্ট্রিলোকুইজম সম্পর্কে।

ভেন্ট্রিলোকুইজমঃ​​​​​

ভেন্ট্রিলোকুইজম বা Ventriloquism বলতে এক ধরনের শব্দ শিল্পকে বুঝানো হয় বাংলায় মায়াস্বর যে ভেন্ট্রিলোকুইজম পারদর্শী তাকে বলা হয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বা মায়াস্বরী। একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এমন ভাবে তার কণ্ঠকে ব্যবহার করে যাতে মনে হবে অন্য কোন উৎস থেকে শব্দটা আসছে। টিভিতে এমন অনুষ্ঠান দেখেছেন হয়তো যেখানে ব্যাক্তি একটা পতুলের সাথে কথা বলে। পুতুলটিও কথা বলে ব্যাক্তির সাথে আসলে পতুলের কথাটা ব্যাক্তিই বলে আমরা সেটা বুঝতে পারি না। বলতে পারেন এক ধরনের ভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই ভেন্ট্রিলোকুইজম বহু আগে থেকে এর চর্চা আছে। এই অদ্ভুত নামটাও হওয়ার পিছনে কারণও আছে। দুইটা ল্যাটিন শব্দ Venter ও Loqui মিলে তৈরি হয়। যেখানে Venter অর্থ পেট ও Loqui অর্থ কথা। এই নাম এর পিছনে কারণ আছে মানুষের মুখ থেকে কথা না বেরিয়ে পেট থেকে বের হয় এই ধারনা নিয়ে এই নাম দেওয়া হয়। অনেক তান্ত্রিক এর মতামত এমন যে এক আত্মা নাকি ব্যাক্তির কণ্ঠে প্রবেশ করে এমন আওয়াজ করে। আসলে তা নয়। এর পিছনে বিজ্ঞান আছে।

কলাকৌশলঃ

ভেন্ট্রিলোকুইজম কৌশলটা অনেক জটিল আর সময় সাপেক্ষ। কেউ যদি ভেন্ট্রিলোকুইজম শিখতে চায় তাহলে তাকে বহুদিন চর্চা করা লাগে,গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে শব্দ গুলো উচ্চারন করা লাগে। আরেকটা দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেটা হচ্ছে যেন ঠোট না নড়ে ঠোটের নড়াচড়া করা যাবে না। এই জন্য কিছু বর্নকে মায়াস্বরীরা স্কিপ বা এড়িয়ে যায়। বাংলায় এমন বর্ন হচ্ছে ব.ম. প বা ওষ্ঠ বর্ন গুলো। আর ইংলিশে হচ্ছে f,v,p ও m. ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা এই বর্ন গুলোর জায়গায় ভিন্ন বর্ণ ব্যবহার করে থাকে যদি উদাহরন দিই তাহলে ব এর জায়গায় তারা থ উচ্চারন করে আর যারা ভেন্ট্রিকুইজম এর মাধ্যমে শো দেখায় তারা পুতুল বা ডামি নিয়ে শো দেখায় এখন দর্শকরা না বুঝে সে জন্য ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা পুতুল বা ডামিটির ঠোট লম্বা ও বেশি ফাকা। রাখে আর তারা বাচ্চা পুতুল বা ডামি ব্যবহার করে থাকে যাতে মনে হয় বাচ্চাটি নতুন কথা শিখেছে তাদের আরো একটা বিষয় খেয়াল করা লাগে যেনো তাদের কথার পাশাপাশি ডামিটার আচরন ঠিক রাখা এইসব কিছুই ঠিক থাকলে দর্শক কাছে মনে। হবে পুতুলটি কথা বলছে একধরনের ভ্রান্তি সৃষ্টি হবে তা ছাড়া যারা স্পেশাল ভেন্ট্রিলোকুইস্ট তারা হরবোলা হওয়া লাগে হরবোলা হচ্ছে তারা যারা ভিবিন্ন পশু পাখির ডাক নকল করতে পারে একজন ভালো হরবোলা একজন ভালো ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হতে পারবে তা দ্বারা সাধারন মানুষ চাইলেও হতে পারবে তার জন্য তাকে কয়েক বছর ধরে চর্চা করা লাগবে।

ইতিহাসঃ

ভেন্ট্রিলোকুইজম অনেক পুরোনো বিদ্যা। প্রাচীন গ্রিকরা একে বলত gastromancy। বুঝাই যাচ্ছে ভেন্ট্রিলোকুইজম কত পুরানো বিদ্যা। এই বিদ্যাতে প্রথম পুতুল ব্যবহার হয় ১৭৫৭ সালে অস্ট্রিয়ান ব্যারন ডি মেঙ্গেল নামে জনৈক ব্যাক্তি। উনার পর থেকে আস্তে আস্তে পুতুল ব্যবহার শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে ভেন্ট্রিলোকুইজম একটি বিনোদন মাধ্যম গড়ে উঠে। আধুনিক ভেন্ট্রিলোকুইজম এর পিছনে অনেক দক্ষ ব্যাক্তির আবদান থাকলেও, আধুনিক ভেন্ট্রিলোকুইজম এর জনক বলা হয় ফ্রেড রাসেলকে। এই ফ্রেড রাসেলই প্রথম ভেন্ট্রিলোকুইজমকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় স্টেজ শো করতেন। পরবর্তীতে পল উইনচেন, জিম্মি নেলসন, ডেভিড স্ট্রেসম্যান, জেফ ডনহাম, টেরি ফেটোর, ওয়েল্যান্ড ফ্লাওয়ার্স, সারি লুইস, উইলি টাইলার এবং জে জেনসন এর মতো অনেক গুণী ভেন্ট্রিলোকুইলিষ্ট এ অদ্ভুত খেলায় যুক্ত হন। তাহলে উপমহাদেশে ভেন্ট্রিলোকুইজম কাভাবে আসলো.. উপমহাদেশে এটা আসে ভারতের প্রফেসর যশোয়ান্ত পাধ্যায় এর হাত ধরে তার ছেলে রামনাস পাধ্যায় টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বিদ্যাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেন। তবে সেটা ব্যর্থ হয় কারণ তখন আঁকা ও সংস্কৃতির অন্যান্য শাখা জনপ্রিয় ছিল যার কারণে তা কালো পর্দার আড়ালে চলে যায়।

ভুল ধারণাঃ

বিভিন্ন বাংলা সাহিত্যে এর কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন সত্যজিত রায়ের লেখা ভুতো গল্পে এর উল্লেখ আছে তা ছাড়া আরো কয়েকটি সাহিত্যেও আছে। মাওদল হক এর আন্তর্জাতিক লেভেলের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বইটিতে এই সম্পর্কে গল্পের মাধ্যমে সন্দুর ভাবে তুলে ধরেছে। কিছু কিছু সাহিত্য ভেন্ট্রিলোকুইস্ট নিয়ে ভুল ধারনা দিয়ে থাকে যেমন তিন গোয়েন্দা বইয়ের লেখক রকিব হাসানের লেখা মমি রহস্য বইটিতে দেখা যায় একজন ব্যাক্তি তার কন্ঠের মাধ্যমে শব্দকে বহুদূরে নিয়ে যায় যেটা অসম্ভব। ভেন্ট্রিলোকুইজম মাধ্যমে শব্দকে বেশি দূরে নেওয়া যায় না। কারণ যে ভেন্ট্রিলোকুইজম ব্যবহার করে শব্দ উৎস তার ভোকাল কর্ড থেকে আসে সে হিসাবে ব্যাক্তি বেশি দূর তার কণ্ঠকে নিতে পারবে না। ঠোঁট নাড়াচাড়া না করা ও শব্দ অন্যভাবে আসার মাঝে এই ধরনের ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আর আমাদের ভোকাল কর্ড এত শক্তিশালী নয় যে বহুদূরে পর্যন্ত ঠোট না নড়াচাড়া করে আওয়াজ করতে পারব।

আরো কিছু কথাঃ

বাংলাদেশেও এর ব্যবহার আছে। কিছু তান্ত্রিক এই ভেন্ট্রিলোকুইজমকে ব্যবহার করে মানুষকে ধোকা দিয়ে থাকে। জ্বীন ডাকার নাম দিয়ে এটি ব্যবহার করে মানুষকে ধোকা দিয়ে মিথ্যা ভবিষ্যত বলে টাকা মেরে দেয়। অনেক কবিরাজ আছে জীনকে ডাকার জন্য আপনাকে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে আসবে। যদি কবিরাজ আপনাকে পর্দার বাহিরে রেখে ঐ পাশে থেকে জীন ডাকে কথা বলে তাহলে মনে করবেন উনি হরবোলায় দক্ষ আর যদি কবিরাজ আপনার সাথে থেকেই জ্বীনের সাথে কথা বলিয়ে দেয় তাহলে মনে করবেন উনি একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 140 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
3 টি উত্তর 1,928 বার দেখা হয়েছে
+14 টি ভোট
1 উত্তর 182 বার দেখা হয়েছে
02 জানুয়ারি 2021 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Remove id (34,670 পয়েন্ট)
+13 টি ভোট
1 উত্তর 149 বার দেখা হয়েছে
02 জানুয়ারি 2021 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Remove id (34,670 পয়েন্ট)

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,660 জন সদস্য

136 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 135 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. ufa168cloud

    100 পয়েন্ট

  5. zifieji

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...