মানুষের সংস্কৃতির ইতিহাসে এই পদ্ধতিটি বহু পুরনো এবং প্রত্যেক জাতিই কমবেশি উল্কির ব্যবহার করে থাকে। অলঙ্করণের জন্য না-হলেও পশুর শরীরে উল্কি করে নম্বর লেখেনা এমন কোনও জাত নেই। উল্কির ইংরেজি Tattoo; শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে পলিনেশিয় (প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ) শব্দ tatau থেকে; কোথাও কোথাও এটি নিষিদ্ধ হলেও আজও এর জনপ্রিয়তা উর্ধ্বমূখিই বলা যায় । বিশেষ কোন অনুষ্ঠান থাকলে আমিও ঘাড়ে অথবা হাতে একটা উল্কি বসিয়ে দিই, তবে সেগুলো অস্থায়ী উল্কি । একটা সময় ছিল যখন মানবসমাজের প্রাচীন উল্কির নিদর্শন হিসেবে আজ থেকে ৪,০০০ বছরের পুরনো প্রাচীন মিশরের মমির উল্কির কথা বলা হত। তবে গত শতকের নব্বুয়ের দশকের শুরুতে জানা গেছে যে মানবদেহে উল্কি আঁকার রীতি আরও বহু বছরের পুরনো। আল্পস পবর্তমালায় ওটৎ উপত্যকায় পাওয়া ৫,২০০ বছরের পুরনো নবপোলীয় যুগের ওটৎ দি আইসম্যানের যে ফসিলটি পাওয়া গেছে তার শরীরেও উল্কি আঁকা ছিল।
এছাড়াও জানা যায় রাজাদের মাঝেমাঝেই প্রয়োজন হত নতুন রাণির। কিন্তু এত রাজকুমারী তো আর পাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই, সাম্রাজ্যের পথেঘাটে কোনও সুন্দরীকে পছন্দ হলেই তার স্থান হত রাজার ঘরে।
সাধারণ ঘরের মেয়ে রাণি হবে, এ তো খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু আদতে তা হত না মায়ানমারের চিন আদিবাসীদের মধ্যে। রাণি হওয়ার সাধ তাদের অধরাই থেকে যেত। বিয়ে তো দূরস্থান, রাজার মন ভরে গেলে, সমাজও তাদের স্বীকৃতি দিত না।
লম্পট রাজার হাত থেকে ঘরের মেয়েদের বাঁচাতে এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে এই আদিবাসীরা। যুবতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েদের মুখে ট্যাটু করে দেওয়া হত। যাতে তাদের সৌন্দর্য কোনও ভাবেই রাজাকে আকৃষ্ট না করে। নীল, সবুজ বা কালো রঙের লাইন এঁকে বা বুটি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হত তাদের অবয়ব।
গাছের রস, ষাঁড়ের পিত্ত ও অ্যানিমাল ফ্যাট দিয়ে প্রস্তুত করা হত সেই রং। তারপরে গাছের কাঁটা দিয়ে বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে মুখে নকশা এঁকে দেওয়া হত। কষ্টকর এই পদ্ধতির পরে বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে যেত সম্পূর্ণ সুস্থ হতে।
পরবর্তীকালে ট্যাটু করার এই প্রথা চিন আদিবাসীদের মধ্যে কেবলমাত্র সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবেই রয়ে যায়।
১৯৬০ সালে সরকারের তরফ থেকে ট্যাটু করার এই প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে প্রায় অবলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহাসিক এই ট্র্যাডিশন