আমি যেকোনো বিষয়ে বেশি বেশি ভেবে নেই, ফলে আমার মনে একধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়।সমাধান কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
634 বার দেখা হয়েছে
"লাইফ" বিভাগে করেছেন (120 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (9,390 পয়েন্ট)

বেশি বেশি ভাবা, বা ওভার থিংকিং

টেনশন বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আজকাল কঠিন ব্যাপার!

বিভিন্ন গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। নিউ ইয়র্কের রচেস্টার মেডিকল সেন্টারের ‘সেন্টার ফর মাইন্ড-বিডি রিসার্চ’ এর মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলেও সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।”দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হলো এই লেখাটি; যে উপায়গুলো মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

১। মেডিটেশনমানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার  বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।

২। নিজেকে ব্যস্ত রাখুনদুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

৩। ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুনমনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে।
ডক্টর সিমন্স বলেন, “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।”

৪। বাস্তববাদী হওয়াযে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।উদাহরণস্বরূপ, গবেষকদের মতে প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়।তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।

৫। নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিনযারা সাধারনণত টাইপ ‘এ’ চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলত হৃদরোগে বেশি ভোগেন।অধ্যাপক হেফনারের মতে, এ ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে। তিনি বলেন, টাইপ ‘এ’ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে।গবেষণায় দেখা গেছে, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ যা পরে হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।

৬। ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিনক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে তুলে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা তখনই ভালো যদি আপনি কোনও হিংস্র বাঘের মুখে পড়েন।তাই ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন। কেননা এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে।এমনকি জিরো-ক্যালরি বা চিনিহীন বলে বাজারজাত করা কোমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।

৭। তালিকা তৈরি করুনআপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দিবে।প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়

৮। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানসবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়।তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।

৯। প্রাণ খুলে হাসুন২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।

১০। ডায়েরি লিখুনআপনি হয়তো কখনোই ডায়েরি লেখেননি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।

১১। পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম:বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে (sound sleep) ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'ঘুম’ থেকে ভালো Stress Looser আর কিছু হতে পারে না। তাই যখন কোনোও কিছুই আর ভালো লাগবে না বা মনে হবে কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছেন না, তখন একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিন। দুশ্চিন্তা কেটে যাবে!এ কথা যেমন সত্যি যে, টেনশন মানুষের জীবনে স্বচ্ছন্দ গতি এবং স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটায়, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, জীবনে কিছু পরিমাণ টেনশন থাকা প্রয়োজন। কেননা, এই টেনশন জীবনের কাজ করার পেছনে উৎসাহ জোগায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে, কাজ করার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

-ক্রেডিটঃ মুমু জান্নাহ ( ১০ মিনিট স্কুল) 
-ধন্যবাদ

করেছেন (120 পয়েন্ট)
ধন্যবাদ ।
0 টি ভোট
করেছেন (180 পয়েন্ট)
অতিরিক্ত বেশি না ভাবাই সবার উচিত।যদি বেশি ভেবে ফেলা হয় তাহলে তার সমাধান করা উচিত নতুবা অন্য কোনো বিষয়ে নিজেকে স্থির রাখা।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 508 বার দেখা হয়েছে

10,772 টি প্রশ্ন

18,455 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

263,142 জন সদস্য

67 জন অনলাইনে রয়েছে
6 জন সদস্য এবং 61 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  2. 988bets4com

    100 পয়েন্ট

  3. xibetde

    100 পয়েন্ট

  4. JosephineCai

    100 পয়েন্ট

  5. PennyWhitcom

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা #science পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...