এসি চালানোর আগে অধিকাংশ মানুষের মাথায় একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ আছে কি? বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসি চালু অবস্থায় ঘরের কোনো অংশ যেন খোলা না থাকে। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, ঘরের দরজা-জানালা খোলা থাকলে সমস্যা কী? কারণ, বাইরের বাতাস বইলে এসি হয়তো আরও দ্রুত ঘর ঠান্ডা করতে পারবে। আদতে বিষয়টা এমন নয়।
এসি ঘরের উষ্ণ বায়ু পর্যায়ক্রমে শীতল করে তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। বাজারে বিভিন্ন আকারের এসি পাওয়া যায়। আকারভেদে এগুলোর কর্মদক্ষতাও হয় ভিন্ন। আর এই যন্ত্রগুলোর ঘর ঠান্ডা করার সীমাবদ্ধতাও আছে। একটা মাঝারি আকারের এসি বিশাল আকারের ঘর দ্রুত ঠান্ডা করতে পারে না।
ঘরের কোনো অংশ খোলা থাকলে স্বাভাবিকভাবে বাইরের তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস ভেতরে ঢোকে। পাশাপাশি ঘরের শীতল বায়ু পায় বাইরে যাওয়ার সুযোগ। এতে ঘর ঠান্ডা রাখতে এসির ওপর পড়ে অতিরিক্ত চাপ। অর্থাৎ এসির আরও বেশি শক্তি দরকার হয়। শক্তি মানেই বিদ্যুৎ। আর দরজা-জানালা খোলা রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে এসি নষ্ট হয়ে যায় অথবা এর কর্মক্ষমতা যায় কমে। এ কারণেই মূলত এসি চালু থাকা অবস্থায় ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখতে নেই। বরং ঘরে কোনো খোলা অংশ থাকলে, তা বন্ধ করতে হয়। নিশ্চিত হতে হয়, কোনো দিক দিয়েই যেন বাতাস না ঢোকে।
সহজ করে বললে, আপনার ঘরটাকে একটা পানির পাত্র হিসেবে চিন্তা করুন। এখন আপনি যদি ওই পাত্রে ঠান্ডা পানি ধরে রাখতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই পাত্রে কোনো ফুটো রাখতে চাইবেন না। কারণ, ফুটো থাকলে ঠান্ডা পানি বেরিয়ে যাবে এবং ভেতরের ঠান্ডা পানি বাইরের তুলনামূলক বেশি উষ্ণতার কারণে গরম হয়ে উঠবে।
সব এয়ার কন্ডিশনারে ‘অটোমেটিক’, অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকে। যেখানে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ‘কুলিং লেভেল’ ঠিক করে দেওয়া যায়। ঘরের তাপমাত্রা ঠিক ওই সংখ্যায় নেমে এলে এসি ঠান্ডা বাতাস দেওয়া বন্ধ করে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এটি বেশ কার্যকর।
অন্যদিকে এসির তাপমাত্রা পর্যবেক্ষক ব্যবস্থা বা থার্মোস্ট্যাট সারাক্ষণ ঘরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখে। থার্মোস্ট্যাট সেন্সরের অবস্থান এসির বাষ্পীভবন কয়েলের কাছে। এই কয়েল থাকে এয়ার কন্ডিশনার ইউনিটের ভেতরে। এসিতে রিটার্ন ভেন্ট নামে আরেকটি অংশ থাকে, যা ঘরের বাতাস শুষে নিয়ে এয়ার কন্ডিশনিং বা হিটিং সিস্টেমে পাঠায়।
এই রিটার্ন ভেন্ট বাতাস শুষে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রবাহিত হয় সেন্সর ও কয়েলের মধ্য দিয়ে। বাতাস সেন্সর অংশটুকু পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসির থার্মোস্ট্যাটে যে তাপমাত্রা ঠিক করে দেওয়া থাকে, সেটির সঙ্গে তুলনা করে। বাতাস উষ্ণ হলে ব্যবহারকারীর পছন্দসই তাপমাত্রা অনুযায়ী সেন্সরটি কম্প্রেসরকে সক্রিয় করে। অর্থাৎ ঘরের ভেতরটা ঠান্ডা হতে শুরু করে।
আবার সেন্সর দিয়ে প্রবাহিত বাতাস থার্মোস্ট্যাটে পছন্দসই তাপমাত্রার নিচে নামলে কাজ করে বিপরীতভাবে। অর্থাৎ ঠিক তখনই কম্প্রেসরটি বন্ধ হয়ে যায়। এটাই হলো থার্মোস্ট্যাট সেন্সরের প্রধান কাজ।
থার্মোস্ট্যাট ঠিকভাবে কাজ না করলে ঘর অতিমাত্রায় ঠান্ডা হয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। এতে এসির কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। মেয়াদের আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে এর বিভিন্ন অংশ। অর্থাৎ থার্মোস্ট্যাট বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে। এসি একটানা চলতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের বিল হাতে পাওয়ার পর আমাদের একটা হাত চলে যায় মাথায়।
তাই আবহাওয়া এবং ব্যক্তিভেদে থার্মোস্ট্যাটে একটা সহনীয় তাপমাত্রা ঠিক করে দিলে এসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বজায় রাখবে। শুধু এটুকুই খেয়াল রাখতে হবে, ঘরে যেন কোনোভাবেই বাইরের বাতাস না ঢোকে।
সূত্র: নিউ এয়ার
- প্রথম আলো