ক্ষতিকারক মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, এমনকি মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পেয়েছেন। তবে বিজ্ঞানীরা মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পেলেন এই প্রথম।
সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা ২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেন। ২২ ব্যক্তির মধ্যে ১৭ জনের রক্তেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শনাক্ত হয়, যা প্রায় শতকরা ৭৭ শতাংশ। ২২ জনের প্রত্যেকে ছিলেন সুস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের শরীরে গবেষকেরা ৭০০ থেকে ৫ লাখ ন্যানোমিটার আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন। দ্য ওয়্যার সায়েন্স-এর লেখক আথিরা পেরিনচেরির মতে, ৭০০ ন্যানোমিটার বলতে মানুষের মাথার চুলের চেয়ে ১৪০ গুণ ছোট বস্তুকে বোঝায়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ৫০ শতাংশের শরীরে পিইটি প্লাস্টিক কণা শনাক্ত হয়। এই প্লাস্টিক পানির বোতল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ৩৬ শতাংশ মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে পলিস্টাইরিন। এটি খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের মোড়কে ব্যবহৃত হয়।
নেদারল্যান্ডসের ব্রিজ ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের ইকোটক্সিকোলজিস্ট ডিক ভেথাক বলেন, এই প্রথম কোনো গবেষণায় মানুষের রক্তে পলিমার কণার উপস্থিতির বিষয়ে ইঙ্গিত মিলেছে। ফলে গবেষণাটির ফল যুগান্তকারী। তবে এ বিষয়ে গবেষণার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে গবেষণায় নমুনার আকারও বাড়াতে হবে।
গবেষণায় দেখা যায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক রক্তের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারে। শরীরের যেকোনো অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমতে পারে। রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির বিষয়টি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের অজানা। তবে গবেষকেরা মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ, গবেষণাগারে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের কোষের ক্ষতি করে।
টুথপেস্ট, ক্রিম থেকে শুরু করে নিত্য অনেক পণ্যেই ব্যবহার করা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এ ছাড়া দূষিত বায়ুতে থাকা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কণা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, যা ইতিমধ্যে সবার জানা। এ কণা বছরে লাখো মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী। পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি উপাদান মাইক্রোপ্লাস্টিক।
সূত্র: স্মিথসোনিয়ানম্যাগ ডটকম
বিজ্ঞানচিন্তা থেকে সংগৃহীত