নতুন এক এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। সেটা পৃথিবী থেকে ৩৬.৫ আলোকবর্ষ দূরের রস ৫০৮ নামের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহটি পৃথিবীর প্রায় চার গুণ বড়। অর্থাৎ একটি সুপার আর্থ।
গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে রস ৫০৮ বি। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ২৪ মে জাপানের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির প্রকাশনা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সুপার আর্থ বলতে মূলত পৃথিবীর চেয়ে বড় এবং নেপচুনের চেয়ে ছোট গ্রহগুলোকে বোঝানো হয়। ছোটবড় পরিমাপের জন্য ভর এখানে মানদণ্ড। রস ৫০৮বি তার নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নক্ষত্র চারপাশের যতটুকু অঞ্চলের মধ্য থাকলে কোন গ্রহের পানি তরল অবস্থা থাকতে পারে, ওই অঞ্চলকে বাসযোগ্য অঞ্চল। বাসযোগ্য অঞ্চল নির্ভর করে নক্ষত্রের আকার, ধরণ এসব বিষয়ের উপর।
বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্য থাকলেই যে সেখানে তরল পানি বা জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে এমন নয়। বাসযোগ্য অঞ্চলের গ্রহে তাপমাত্রা এবং নক্ষত্রের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু পানি বা জীবনের সন্ধানের জন্য এসব ছাড়াও আরও বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
জাপানি বিজ্ঞানী হিরোকি হারাকাওয়ার নেতৃত্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সুবারু টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গ্রহটি আবিষ্কার করেছেন। এজন্য তারা সুবারু টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড ডপলার প্রযুক্তির সাহায্য নেন। রস ৫০৮ নক্ষত্রটির কক্ষীয় বেগ পরিমাপ করে তারা বুঝতে পারেন, এটা M-বামন টাইপের নক্ষত্র।
রস ৫০৮বি তার মাতৃনক্ষত্র থেকে গড়ে প্রায় ০.০৫৩ AU দূরত্বে অবস্থিত। প্রতি ১০.৭৫ দিনে এটা তার নক্ষত্রের চারপাশে একবার ঘুরে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্রহটিতে বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং এটা অনেকটা পাথুরে গ্রহ হতে পারে।
মাতৃনক্ষত্র রস ৫০৮-এর ব্যাসার্ধ প্রায় ০.২১ সৌর রেটিয়াস ইউনিট। এর ভর প্রায় ০.১৮ সৌর ভর। ফলে নক্ষত্রটির গড় ঘনত্ব দাঁড়ায় প্রায় ২৬.৫ গ্রাম/সেমি। এছাড়াও এর কার্যকর তাপমাত্রা ৩,০৭১ কেলভিন বলে ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নক্ষত্রটি আকারে ছোট ও কম শক্তির। তাই কারণে একে খালি চোখে দেখা যায় না। শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও এর সম্পর্কে তাই খুটিনাটি জানা সম্ভব হয়নি। আরও পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতে ইনফ্রারেড ডপলার বা আরও নিখুঁত স্পেকটোগ্রাফির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনেরর আরও গ্রহ এবং নক্ষত্র খুঁজে সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: ফিজিকস ডট ওআরজি
বিজ্ঞানচিন্তা থেকে সংগৃহীত