সমলিঙ্গের প্রতি কেন টান: সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা মহলে নানা গবেষণা চলছে। মেডিক্যাল সায়েন্সের দাবি, এর পিছনে হরমোনের তারতম্যের কারণ বলেই এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। মনে করা হয়, গর্ভাবস্থায় বা শিশুর জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই শরীরে এমন কিছু হরমোনের ভারসাম্যে তারতম্য হয় যার কারণে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে সমলিঙ্গকে পছন্দ করতে শুরু করে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ ঠিক করে। যাদের ওই গর্ভাবস্থা বা তার দু’-তিন বছরের মধ্যে হরমোনজনিত কোনও পরিবর্তন হয় তাঁদের ক্ষেত্রে হাইপোথ্যালামাস সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণকে ইঙ্গিত করে। পুরুষ হরমোন, স্ত্রী হরমোন ক্ষরণের তারতম্যে বিষয়টিও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। তবে বয়ঃসন্ধিকালের পর বা অন্য কোনও সময় শরীরে স্ত্রী-পুরুষ হরমোনের মাত্রার তারতম্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের পুরুষালি চেহারা, দাড়ি-গোঁফের যে সমস্যা দেখা যায় তার সঙ্গে সমকামিতা সংক্রান্ত হরমোনের সম্পর্ক নেই।মেয়েদের পুরুষালি চেহারা বা ছেলেদের মেয়েলি নরম চেহারা, ঈষৎ স্ফীত বুকের পিছনে প্রজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণ থাকে। এই মুহূর্তে যত গবেষণা হয়েছে তার মধ্যে এই হরমোন ডিসব্যালেন্সের কারণটিকেই সঠিক ব্যাখ্যা বলে মনে করা হচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক কোনও কারণ পাওয়া যায়নি। দেখা যায়, দীর্ঘদিন হস্টেলে থাকতে থাকতে বা জেলে বন্দি থাকতে থাকতে অনেকের সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এঁরা কিন্তু প্রকৃত সমকামী হন না। পরিস্থিতির কারণে অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের কাউকে না পাওয়ায় তাঁরা সাধারণত এমন আচরণ করেন।
তাছাড়া, এমন কিছু পুরুষ আছেন যাঁরা মনে করেন ছেলে না হয়ে তাঁরা মেয়ে হলেই ভাল হত। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চান তাঁরা মেয়ে। পোশাক, আচরণ সবকিছু মেয়েদের মতো করতে থাকেন। আবার ঠিক উল্টোটাও হয়। কিছু মহিলা পুরুষের মতো হাবভাব করেন। ছেলে হলেই ভাল হত বলে মনে করেন। এই আচরণকে বলা হয় জেন্ডার ডিসফোরিয়া। এটিও গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন হয়। জেন্ডার ডিসফোরিয়া থাকলেই যে সেই ব্যক্তি সমকামী হবেন তার মানে নেই। আবার হবেন না তাও নয়। কেউ কেউ ছোট থেকেই এমন ক্রস জেন্ডার আচরণ করেন, বয়ঃসন্ধির পর হয়তো ঠিক হয়ে যায়। আর যাঁদের এই আচরণের পরিবর্তন হয় না এবং সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কমে না তাঁরা সমকামী থাকেন।
- মনোবিদ ডা, প্রথমা চৌধুরি