বিজ্ঞান আর দর্শন কি একই জিনিস? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
447 বার দেখা হয়েছে
"সৃজনশীলতা" বিভাগে করেছেন (7,560 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (7,560 পয়েন্ট)

যদি কোনো শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, দর্শন আর বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কি- তাহলে সে এর উত্তর নাও জানতে পারে। এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আদৌ থাকতে পারে কিনা- এই ব্যাপারে সে সন্দিহান হতে পারে। বাস্তবপক্ষে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, দর্শন আর বিজ্ঞান- জ্ঞান চর্চা আর বিকাশের সম্পূর্ণ দুইটি ভিন্ন ভিন্ন শাখায় পরিণত হয়েছে । তবে, কিছু কাল আগেও দর্শন এবং বিজ্ঞান ছিল জ্ঞানের একই পথের যাত্রী। জ্ঞানের এই দুই শাখার মধ্যে ছিল গভীর মিতালি।

ক্রমাগত ধারণার পার্থক্য আর আধুনিক মতবাদের উদ্ভাবনে একসময় বিজ্ঞান আর দর্শনের একই সাথে চলমান থাকা নিষ্প্রয়োজন আর সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। তাই, জ্ঞান চর্চার প্রয়োজনেই বিজ্ঞান আর দর্শনের বিচ্ছেদ ঘটে। 

প্রথমে জেনে নেয়া যাক, দর্শন বলতে কী বোঝায় ?

দর্শন হচ্ছে মানব সভ্যতার আদি জ্ঞানভাণ্ডার। জগৎ, জীবন , মানব সমাজ, সমাজচিন্তা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া- প্রভৃতি মৌলিক বিধানের আলোচনা "দর্শন" নামে পরিচিত। আদি মানবসমাজে আজকের মতো বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ব্যবহার আর ধারণা ছিল না। তবে, বিচার-বিবেচনা আর চিন্তার দক্ষতা মানুষকে তার চারিদিকের জগৎ সম্পর্কে অভিহিত রেখেছে। মানুষের চিন্তা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছে জগতের সকল স্বাভাবিক কার্যক্রমকে। মানবসভ্যতার প্রারম্ভিক সময়ে এই জগৎ ও জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি সমস্যা মানুষ সমাধানের চেষ্টা করেছে যেকোনো কাল্পনিক বিষয় বর্ণনার মাধ্যমে। তাই, দর্শনভিত্তিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা- নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে কাল্পনিক সমাধানের সমাহার বেশি চোখে পড়ে। আসলে, দর্শনের মুখ্য বিষয় প্রজ্ঞা। তাই, একজন দার্শনিক কেবল তথ্যগত ও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানের ওপর নির্ভর করেন না- পাশাপাশি নিজের অর্জিত জ্ঞানকে ভাবনার অসীমে বিস্তৃত করতে চান।

বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?

ইতিহাসে বিজ্ঞান মূলত দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা "প্রাকৃতিক দর্শন" হিসেবে যাত্রা শুরু করে ৷ বিজ্ঞান, বাস্তব জগৎ আর জীবনের বিভিন্ন ধারণা-অনুভূতি প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রকাশ আর প্রমাণ করতে সচেষ্ট থাকে ৷ বৈজ্ঞানিক পাঠ গভীর থেকে উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন গাণিতিক ধারণার সান্নিধ্য। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর জন্য অনুমানকৃত ধারণাগুলো পরীক্ষা দ্বারা নির্ধারিত এবং যাচাইযোগ্য।

চলুন, এবার জেনে নেওয়া যাক, বিজ্ঞান যদি দর্শনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হয়ে থাকে তবে তা দর্শন থেকে আলাদা হলো কীভাবে?

তুলনামূলক আধুনিক সমাজে, মানুষের যখন বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জ্ঞান বিকশিত হয়, তখনও দর্শনকে অনেকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন কেবল কল্পনায় আর কথিত ধারণায়। তাদের এই চেষ্টার কারণে দর্শন জীবনের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে অনেকটা সম্পর্কশূণ্য হয়ে পড়ে। যেখানে, প্রাচীনকালে জীবনের সমস্যা আর সমাধান প্রচেষ্টা দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে, সেখানে এই ধরণের অবান্তর প্রচেষ্টায় দর্শন, বাস্তব জীবনের সঙ্গে কম সম্পর্কযুক্ত হয়েছে আর অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত হয়েছে। পাশাপাশি, দর্শনের আদি ধারণা আর তত্ত্বকে "প্রারম্ভিক কালের বিজ্ঞান" মেনে নিতে পারে নি। অধুনা বিজ্ঞান চর্চার ফলে পরীক্ষালব্ধ উপায়ে একটি নির্ধারিত ধারণা আর স্বীকার্য এর দিকে মানুষ যখন এগিয়ে যেতে থাকে, তখন অনেক সময় দর্শনের ধারণাগুলো গবেষণা করে জ্ঞান অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বতন্ত্র বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনাগুলোকে কেবল ধারণা আর চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জগতের স্বাভাবিকতা বিশ্লেষণ আর অজানাকে আবিষ্কার করার দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে বিজ্ঞান যখন আধুনিক মানব সমাজের বিকাশের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন কেবল ধারণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের একাত্ম থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায়, ১০ম থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত গ্রিকদের অর্জিত জ্ঞান ও পশ্চিম ইউরোপীয়দের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান " প্রাকৃতিক দর্শন " হিসেবে পুনর্গঠিত হয়। পরবর্তীতে, ১৬শ শতকের শুরুতে হওয়া বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় থেকে রূপান্তরিত হতে হতে ১৯শ শতকের মধ্যেই পেশাগত ও বিদ্যাগত বিজ্ঞানের পূর্ণ রূপ পেয়ে "প্রাকৃতিক বিজ্ঞান" আর "ভৌত বিজ্ঞান" রূপে আত্মপ্রকাশ করে। 

দর্শন আর বিজ্ঞানের বিচ্ছেদর ব্যাপারে আধুনিক কালের একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, লুইস ডি ব্রগলি ( যিনি কণার তরঙ্গধর্মের ধারণা প্রদান করেন) এর কথাগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে-

" উনিশ শতকের সময় দার্শনিক আর বিজ্ঞানীদের মধ্যে যেন একরকম বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কেননা, বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দার্শনিক ধারণাকে সন্দেহের তীরে বিদ্ধ করেন কারণ, সেগুলোতে কোনো নির্ধারিত তথ্য বা অর্জন ছিল না আর বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রয়োগ সম্পর্কে তাঁদের মনে দ্বিধা ছিল। 

 

অন্যদিকে, দার্শনিকরা বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞান আর নির্ধারিত পরীক্ষালব্ধ স্বীকার্য মানুষের ভাবনার দ্বার বন্ধ করে দেয় আর জ্ঞানের বিকাশের একপ্রকার সংকীর্ণতা তৈরি করে। যে যাই বলুক, একথা সত্য যে, বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের বিচ্ছেদের ফলে তাঁরা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

 

Tanha Hossain

Team Science Bee

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 409 বার দেখা হয়েছে
20 অগাস্ট 2022 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Eftekhar Naeem (1,120 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,315 বার দেখা হয়েছে
28 অক্টোবর 2022 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Mithun Chandra Roy (140 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 309 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
4 টি উত্তর 14,133 বার দেখা হয়েছে
26 ফেব্রুয়ারি 2021 "বিবিধ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hasan Rizvy Pranto (39,270 পয়েন্ট)
+7 টি ভোট
1 উত্তর 605 বার দেখা হয়েছে

10,854 টি প্রশ্ন

18,553 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

856,189 জন সদস্য

107 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 105 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. science_bee_group

    120 পয়েন্ট

  2. rs99bio

    100 পয়েন্ট

  3. 622bettcombr

    100 পয়েন্ট

  4. app789f

    100 পয়েন্ট

  5. 88bet99com

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল চিকিৎসা কী পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল মনোবিজ্ঞান আগুন গাছ খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার শব্দ দুধ উপায় হাত মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য মৃত্যু হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...