এপেন্ডিক্স!!!!!!!!!!
নাম শুনলেই পেটের ডান পাশের একটু নিচের দিকে মোচড় দিয়ে ওঠে মনে হয়।
আমাদের পাকস্থলীর একেবারে নিচ থেকে শুরু হওয়া প্যাচনো নালীর মতো অংশের নাম ক্ষুদ্রান্ত্র (small intestine), এর পরেই নালীটি একটু মোটা হয়ে বৃহদান্ত্র (large intestine) নাম ধারন করেছে।
এই ক্ষুদ্রান্ত্র আর বৃহদান্ত্রের সংযোগস্থলের কাছাকাছি বৃহদান্ত্রের কাছ থেকে রয়েছে ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা বেশ চিকনা করে প্রবর্ধিত অংশ, যার নাম এপেন্ডিক্স।
খুবই কম সংখ্যক প্রাণীদের শরীরে এই এপেন্ডিক্স নামক অংশটি পাওয়া যায়। মানুষ, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, খরগোশ- এদের শরীরে পাওয়া গেলেও কুকুর, বিড়াল, গোরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া- এদের শরীরে পাওয়া যায় না।
৭-৮% মানুষ জীবনের কোন এক সময়ে এই এপেন্ডিক্স নিয়ে ঝামেলাতে পড়ে যায়। এসব ঝামেলার মধ্যে এপেন্ডিসাইটিস শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত।
এপেন্ডিক্সের কাজ:
আমাদের দেশে কলেজ পর্যায়ের জীববিজ্ঞান বই পড়তে গেলে এপেন্ডিক্সকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হিসেবে পাবো।
আসলেই কি জিনিসটার কোন কাজ নেই? সৃষ্টিকর্তা শুধু শুধু ঝামেলাতে ফেলতে গেলেন তবে?
১০০% সঠিকভাবে বিষয়টি এখনো প্রায় অজানা আর গবেষণার পর্যায়ে রয়ে গেছে।
১) ২০১৪ সালে একটি তুর্কি গবেষণাপত্রে দেখা যায় যাদের অনেক ক্ষুদ্র এপেন্ডিক্স রয়েছে তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। এখান থেকে ধারনা করা হচ্ছে কোলন ক্যান্সার মোকাবেলাতে এপেন্ডিক্সের ভূমিকা রয়েছে।
২) পরিপাক নালীর প্রদাহজনিত একটা রোগ বিদ্যমান যার নাম ক্রন'স ডিজিজ। ২০০৩ সালের দিকের একটা গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী এপেন্ডিক্স না থাকা ব্যক্তিদের রোগটিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি।
৩) আর এখন পর্যন্ত বেশ নিশ্চিত হওয়া তথ্যটি হলো এপেন্ডিক্স নম্র, ভদ্র, উপকারি ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল।
এসব ব্যাকটেরিয়া আমাদের বৃহদান্ত্রকে অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে থাকে।
বৃহদান্ত্রকে সুস্থ রাখতে, ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করতে বেশ ভূমিকা রাখে এরা।
৪) এপেন্ডিক্সে লিম্ফোয়েড কোষের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখান থেকে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। আর এগুলো রোগপ্রতিরোধ সিস্টেমের হয়ে কাজ করে আমাদের পরিপাকনালীকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৫) মায়ের পেটে থাকা ভ্রূণের বয়স ১১ সপ্তাহের দিকে আসলে এপেন্ডিক্সে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণকারী কোষের অস্তিত্বের বিষয়টিও ধারনা করা হচ্ছে।
এপেন্ডিক্স নামের এই আজব বস্তু খুব কম প্রাণীতে পাবার জন্যই হয়তো এ সম্পর্কিত গবেষণা অনেক অনেক কম।
২০০৬ সালের দিকে একজন ক্রোয়েশিয়ানের শরীরে ২৬ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এপেন্ডিক্স পাওয়া যায়, এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড়।
এপেন্ডিক্স নিয়ে গবেষণা অনেক কম, এখনো চলমান। তাই অনেক বিষয়েই পরিষ্কার ধারনা পাওয়া মুশকিল। কিছু গবেষণাপত্রের আলোকে তুলে ধরলাম মাত্র।
তথ্য- Quora