রাশিক আজমাইন : জীবাশ্মের বয়স গণনা করার জন্য একটা পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটা হলো রেডিওডেটিং ৷ রেডিওডেটিং হলো হলো জীবাশ্মে কী পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ আছে বা জীবাশ্মের পাশে স্তরে স্তরে জমা শিলায় কী পরিমাণ তেজস্কিয় পদার্থ আছে সেটা নির্ণয় করে সেই তেজস্কিয় পদার্থের অর্ধায়ু অনুযায়ী বয়স বের করা ৷ অর্ধায়ু হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ আলফা, বিটা, গামা প্রভৃতি রশ্মি বিকিরণ করে পরিমাণে অর্ধেক হতে যত সময় লাগে ৷
রেডিও ডেটিং সাধারণ কার্বন-১৪ আইসোটোপ (কার্বনের ভরসংখ্যা সাধারণত ১২ , এটা ১৪ ভরসংখ্যা যুক্ত তেজস্ক্রিয় কার্বন) ব্যবহার করে করা হয় ৷ ১৪ ভরসংখ্যার সাধারণ নাইট্রোজেন সূর্যালোকের উপস্থিতিতে নিউট্রন গ্রহণ করে কার্বন-১৪ আইসোটোপে পরিণত হয় যা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে তেজস্ক্রিয় কার্বন ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয় ৷ গাছ এটা গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণে ৷ তৃণভোজী প্রাণী গাছ খেলে তার শরীরে যাবে এবং মাংসাশী প্রাণী এদের খেলে তার শরীরেও যাবে ৷ এভাবে জীবের শরীরে কার্বন-১৪ আইসোটোপ জমা থাকে যা মৃত্যুর পর রশ্মি বিকিরণ করে নাইট্রোজেন-১৪ তে পরিণত হতে থাকে ৷
রেডিওডেটিং এর সূত্র হলো :
A = A₀ e^kt
যেখানে :
A = তেজস্ক্রিয় পদার্থের বর্তমান পরিমাণ
A₀ = তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রাথমিক পরিমাণ
e = লগারিদম ফাংশন
k = ধ্রুবক
t = জীবাশ্মের বয়স
- উদাহরণ : ম্যামথের এক টুকরো হাড়ের ওজনের তুলনায় ৯০% কার্বন-১৪ আইসোটোপ শেষ হয়ে গেছে ৷ কার্বন-১৪ এর অর্ধায়ু ৫,৭৩০ বছর হলে ঐ হাড়ের বয়স কত?
- সমাধান : আগে k এর মান বের করতে হবে ৷ যদি A₀ = ১ গ্রাম কার্বন-১৪ থাকে তাহলে A = ০.৫ গ্রাম বা অর্ধেক হতে t = ৫,৭৩০ বছর লাগবে ৷ উপরের সূত্রে মান বসালে k = – ০.০০০১২০৯ পাওয়া যায় ৷ এখন যেহেতু বলা হচ্ছে ৯০% শেষ হয়ে গেছে ৷ তাহলে বাকি আছে ১০%৷ মানে A₀ = ১০০ হলে A = ১০ বা বর্তমান পরিমাণ ৷ k এর মান জানা ৷ সূত্রে বসালে t = ১৯,০৪৫.৩৭ বছর যা জীবাশ্মের আনুমানিক বয়স৷
এখন কার্বন-১৪ আইসোটোপের অর্ধায়ু ৫,৭৩০ বছর তাই এই পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৬০,০০০ বছরের পুরোনো জীবাশ্মের বয়স নির্ণয় করা যাবে ৷ ডাইনোসরের জীবাশ্ম আরও পুরোনো ৷ তাই এক্ষেত্রে কার্বন-১৪ আইসোটোপ কার্যকরী নয় ৷ এজন্য দীর্ঘ অর্ধায়ু ধারী আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় ৷ যেমন পটাসিয়াম-৪০ একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ যার অর্ধায়ু প্রায় ১২৫ কোটি বছর ৷
- উদাহরণ : ডাইনোসরের একটি জীবাশ্মের উপর লেগে থাকা স্তরীভূত শিলার ওজন অনুযায়ী ৫% পটাসিয়াম-৪০ আইসোটোপ শেষ হয়ে গেছে ৷ পটাসিয়াম-৪০ এর অর্ধায়ু ১২৫ কোটি বছ ৷ তাহলে ডাইনোসরের জীবাশ্ম কত পুরোনো?
- সমাধান : আগের পদ্ধতি অনুযায়ী k এর মান আসে – 5.5452×10^–10. তাহলে সব মান বসালে t = ৯,২৫,০০,৩৫০.৫৫ বছর ৷ তাহলে ডাইনোসরের জীবাশ্মের আনুমানিক বয়স প্রায় ৯.২৫ কোটি বছর৷
এভাবে এগুলো বের করা হয় ৷ এই মানগুলো শতভাগ সঠিক না হলেও অনেকাংশে সঠিক বলেই ধরা হয় ৷