ক্রায়োনিক্স হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মৃত মানুষকে সংরক্ষণ করা হয় এই আশায় যে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সাহায্যে তাদেরকে জীবিত করা যাবে। এটি অনেকটা Hibernation বা শীতনিদ্রার মতো। এই পদ্ধতিতে মৃত ব্যক্তির দেহকে বা শুধু মাথাকে নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় যার জন্য বহুদিন লাশ অবিকৃত থালে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্রায়োপ্রিজারভেশন। বর্তমানে জীবিত মানুষের শরীরে ক্রায়োনিক্স নিষিদ্ধ তাই ক্লিনিকাল ডেথ এর পর একজন মানুষকে ক্রায়োপ্রিজারভেশনে রাখা হয়।
ক্লিনিকাল ডেথ বলতে বুঝায় হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিন্তু হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও কিছুক্ষণ মস্তিষ্কের কোষ জীবিত ও কর্মক্ষম থাকে। এমন অনেক নজির আছে যেখানে দেখা যায় কিছুক্ষণ হার্টবিট বন্ধ থাকার পর মানুষটি আবার বেঁচে ফিরেছে। তাই, ক্রায়োবিদরা মনে করেন যে মস্তিষ্ক যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষকে মৃত দাবী করা করা যায়না। তাদের মতে ভবিষ্যৎ এ এমন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হবে যার সাহায্যে তারা মস্তিষ্কে থাকা সকল তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ক্রায়োনিক্স এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের সব কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া বা সরাসরি বলতে গেলে মৃত্যুকে স্থগিত করে দেওয়া। ক্রায়োনিক্স প্রক্রিয়ায় কিছু কোষের ফাংশন সংরক্ষণ করা হয় যা থেকে থিওরেটিক্যালি তাদের আবার জীবিত করা সম্ভব। কোনো মানুষ মারা যাওয়ার পর তার শরীরকে স্থির অবস্থায় আনতে অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ করা হয় যাতে শরীরের কিছু ক্রিয়া চলতে থাকে। তারপর শরীরে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট দেওয়া হয় যাতে রক্ত জমে না যায় এবং শরীরকে বরফে মুড়ে দেওয়া হয়।
মানুষের কোষের বেশিরভাগ অংশই পানি হওয়ায় শরীরের পানি সরিয়ে ক্রায়োপ্রোট্যাক্টট্যান্ট বা গ্লিসারল দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ভিট্রিফিকেশন। পানি না সরালে তা বরফ হওয়ার পর আয়তনে বেড়ে যাবে এবং সব কোষ নষ্ট হয়ে যাবে। ভিট্রিফিকেশন এর পর ড্রাই আইস দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা -২০২°F পর্যন্ত ঠান্ডা করা হয়, একে বলে প্রি-কুলিং। এরপর শরীরকে তরল নাইট্রোজেন এর ট্যাঙ্কে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা -৩২০°F এ নেমে আসে।
সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে দেহ স্বাভাবিক করা। এখনো পর্যন্ত কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীকে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি, কেবল কিছু নেমাটোডদের স্বাভাবিক করা গিয়েছে। আর ভবিষ্যৎকালে কোনো মানুষকে হিমায়িত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা গেলেও সে থাকবে মৃত এবং মৃত মানুষটিকে জীবনদান করা অসম্ভব ব্যাপার। তাই, বর্তমানে ক্রায়োনিক্সকে ছদ্মবিজ্ঞান বা Pseudoscience হিসেবে দেখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় শরীর সংরক্ষণে খরচ হয় ২ লক্ষ ডলার, মস্তিষ্ক সংরক্ষণে খরচ হয় ৬০ হাজার ডলার।
© নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)
রেফারেন্স: ১. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cryonics
২. https://www.alcor.org/library/introduction-to-cryonics/
৩. https://www.cryonics.org/