পচন হলো এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মৃতদেহের অঙ্গ এবং জটিল অণু সময়ের সাথে সাথে সাধারণ জৈব পদার্থে বিভক্ত হয়। মেরুদন্ডী প্রাণীদের দেহে পচন প্রক্রিয়ার পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপ শনাক্ত করা যায়। এগুলো হলো :
- Fresh
- Bloat
- Active Decay
- Advanced Decay
- Dry Remains
মৃত্যুর পর পচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে আগ্রহের কমতি নেই। গবেষণা করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি দেশে বডি ফার্ম বা মৃতদেহ পচানোর কারখানা গড়ে উঠেছে। মৃতদেহের পচন প্রক্রিয়া ও ক্ষয় পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বডি ফার্ম স্থাপন করা হয়। পচন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক :
Fresh Stage : মৃত্যুর পর এই ধাপে দেহাবশেষ অক্ষত ও পোকামাকড় মুক্ত থাকে। মৃতদেহ ধীরে ধীরে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে। Algor Mortis : হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার পর এন্ডোরফিন ক্ষরণের ফলে দেহের তাপমাত্রা কমতে থাকা, Rigor Mortis : মাংসপেশীতে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে মৃত দেহের পেশিগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে আসা, Livor Mortis : মৃত্যুর পর হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয় ফলে রক্ত অভিকর্ষের টানে ক্যাপিলারি ও ছোট ছোট শিরায় পৌছায় এবং মৃতদেহ যে অবস্থানে থাকে সেদিকে রক্ত প্রবাহিত হয়।
Bloat Stage : মানুষের অন্ত্রে থাকে মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া। মৃত্যুর পর এসব ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের বিশাল অংশকে ভক্ষণ করতে শুরু করে এবং অন্ত্রে উপস্থিত অ্যামাইনো এসিডকে পচিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। কোষের টিস্যু ভেঙে যাওয়ার ফলে ত্বক ঝুলে পড়ে। অন্ত্রে পচনের ফলে কালো, নোংরা তরল পদার্থ সৃষ্টি হয় যা গ্যাসের চাপে নাক ও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। দুর্গন্ধের প্রভাবে কিছু পরজীবী কীট আকর্ষিত হয়ে পচে যাওয়া টিস্যুতে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফেটে লার্ভা বের হওয়ার পর তারা কয়েক সপ্তাহের মাঝেই দেহের প্রায় অর্ধেক অংশ ভক্ষণ করে ফেলে। মৃত্যুর কিছুদিন পরই সব মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া দেহকে পচানোর কাজে লেগে যায়। সায়েন্স বী
Active Decay : মৃত্যুর পর এই পর্যায়ে শরীরের টিস্যু তরলে পরিণত হতে শুরু করে এবং ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ করতে থাকে। শীগ্রই মাছি তাদের বিশেষায়িত ঘ্রাণ রিসেপ্টর ব্যবহার করে পচনশীল মানবদেহ শনাক্ত করে। মাছিগুলো মৃতদেহের নাকে, মুখে, ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে। ম্যাগোটের আকৃতি ও বিকাশের পর্যায় দেখে মৃত্যুর সময় নির্ণয় করা সম্ভব। এই পর্যায়ে টিস্যুতে থাকা ফ্যাটে ব্যাকটেরিয়াল হাইড্রোলাইসিস হতে পারে। এর ফলে মৃতদেহে মোমের মতো জৈব উপাদান সৃষ্টি হয় যা পরবর্তী পচন প্রক্রিয়া রোধ করে।
Advanced Decay : মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ এই পর্যায় পর্যন্ত বিবর্ণ ও কালচে হয়ে আসে। দেহের টিস্যু ও কোষের ভাঙন ও তরল পদার্থে পরিণত হওয়ার ধাপ এই পর্যায়ে শেষ হয়ে আসে। মাটিতে পচনশীল শুষ্ক মৃতদেহ অবশেষে প্রতি কেজি ভরের জন্য ৩২ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১০ গ্রাম ফরফরাস, ৪ গ্রাম পটাশিয়াম, ১ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম মুক্ত করে। এর ফলে মৃতদেহ যে মাটিতে থাকে তা হয় উর্বর এবং মাটির রাসায়নিক উপাদান হয় অন্যান্য মাটির তুলনায় ভিন্ন যা কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সায়েন্স বী
Dry Remains : মৃত্যুর ৫০ দিন পর বিউটারিক ফার্মেন্টেশন এর ফলে ছত্রাক ও প্রোটোজোয়া আকর্ষিত হয় এবং ভক্ষণ কার্য চালায়। এভাবে মৃতজীবী ও মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এর প্রভাবে দেহ পচতে থাকে৷ দেহের নরম টিস্যু নিজে থেকেই ধ্বসে পড়ে। তৃতীয় ধাপ শেষে দেহাবশেষ শুকিয়ে যায় এবং একসময় কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
এছাড়াও মৃতদেহ পচার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা, অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা, ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার, মৃত্যুর কারণ, আদ্রতা, বৃষ্টি, মাটির অম্লতা, কীটপতঙ্গের উপস্থিতি ইত্যাদি অনেকাংশে দায়ী।
নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)
রেফারেন্স : https://www.georgiaclean.com/the-stages-of-human-decomposition/