পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেকটি জীবই কোনো না কোনো দিক দিয়ে তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে অন্য একটি জীব থেকে আলাদা। যেমনঃ
বাঘ এর সাথে হরিণের স্বভাব চরিত্রে যেমন মিল নেই; তেমনি মাছের সাথে পাখিদের রয়েছে অনেক তফাত।
আবার আমরা পৃথিবীতে আমরা মানুষেরা সংখ্যার প্রায় ৮০০ কোটি। কিন্তু এদের মধ্যেও কত ভিন্নতা। একজন আফ্রিকান আর একজন চীনা লোকের মধ্যে কত তফাত।
আবার একই মায়ের জমজ সন্তানদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের বৈষাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।।
মোদ্দাকথা, এই যে পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবই কোনোনা কোনো দিক থেকে অন্য একটা জীব অন্য একটা জীব থেকে আলাদা। আর এই ব্যাপারটিকেই বলা হয় জীববৈচিত্র। জীববৈচিত্রকে সংঙ্গায়িত করলে বলা যায়,
"পৃথিবীতে বিরাজমান জীবসমূহের প্রাচুর্য্য ও ভিন্নতাকেই বলা হয় জীববৈচিত্র‍্য"
জীববৈচিত্র‍্যকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
(১) প্রজাতিগত বৈচিত্রঃ যেটি দ্বারা জীবসমূহের প্রজাতিদ্বয়ের পার্থক্যকে বুঝায়। উদাহরনঃ বাঘের সাথে হরিণের স্বভাব, আকার, আকৃতিতে, খাদ্যাভাসে যেই অমিল দেখা যায় তা মূলত প্রজাতিগত বৈচিত্র।
(২) বংশগতীয় বৈচিত্র‍্যঃ যেটি দ্বারা মূলত একই প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান জিনগত ভিন্নতা কে বুঝানো হয়। জিনগত ভিন্নতার কারনেই একই প্রজাতিভূক্ত সদস্যদের মধ্যেও অনেক বিষয়ে পার্থক্য দেখা দেয়। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই একজন চীনা লোক এর সাথে এর সাথে একজন অস্ট্রেলিয়ান অথবা আফ্রিকান লোক এর শারীরবৃত্তিক অনেক অমিল লক্ষ করা যায়। যদিও এরা সকলেই হোমো স্যাপিয়েন্স।
(৩)বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্যঃ কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগলিক পরিবেশ এর উপর ভিত্তি করে যখন জীবদের মধ্যে প্রাচুর্যতা দেখা দেয় তখন তাকে বাস্তুতান্ত্রিক জীব-বৈচিত্র বলে। যেমন মরুভূমিতে অবস্থিত উদ্ভিদ ও প্রাণিদের বৈশিষ্ট্যের সাথে বরফে আবৃত সাইবেরিয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীদের অনেক অমিল। আবার সমুদ্র বসবাসরত জীবদের সাথে দাঙ্গায় বসবাসকারী জীবদের যথেষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়।
এবার আসি প্রকৃতিতে কেন জীববৈচিত্র্য দেখা দেয় সেই প্রসঙ্গে। কেনই বা এত রঙ বেরঙের প্রজাতি পৃথিবীতে দেখা যায়।
জীববৈচিত্র‍্য মূলত কয়েক মিলিয়ন বছরের অভিযোজন আর র‍্যান্ডম মিউটেশন এর ফসল। প্রকৃতিতে টিকে থাকার তাগিদে একটি জীব নানাভাবে তার জিনগত এবং শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটায় যেটিকে বলা হয় হয় অভিযোজন। আবার অনেক সময় র‍্যান্ডম কোনো কারনে জীবের জিন বা ডিএনএ তে এমন স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে যেকারণে ঐ জীবের চরিত্র বা বংশগত বৈশিষ্ট্যতে পরিবর্তন হয়ে যায় তবে ডিএনএ এর এই পরিবর্তনকে মিউটেশন বলে। মিউটেশনের ফলে জীবের যে জিনগত পরিবর্তন ঘটে তার কারনে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ও পরিবর্তন হয়। আর এইভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে জীবের জিনগত পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে অনেক নতুন নতুন প্রজাতি। প্রকৃতিতে সমৃদ্ধ্য হয়েছে জীববৈচিত্র‍্য