বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং সতর্ক করে বলেছেন মহাবিশ্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ঈশ্বর কণাখ্যাত হিগস বোসন কণার।
হকিং দাবি করেছেন, উচ্চশক্তি স্তরে হিগস বোসন কণা ভারসাম্যহীন হয়ে উঠতে পারে। এই কণা অস্থিতিশীল অবস্থায় এলে তা ‘ধ্বংসাত্মক ভ্যাকুয়াম অবক্ষয়’ তৈরি করতে পারে, যাতে স্থান ও কাল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো আগেভাগে কোনো বিপদসংকেত টের না-ও পাওয়া যেতে পারে।
সম্প্রতি স্টারমাস নামের একটি বই সম্পর্কে তথ্য জানাতে গিয়ে ঈশ্বর কণার সর্বনাশা বৈশিষ্ট্যের কথা জানান ৭২ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী।
হকিং দাবি দাবি করেন, ১০০ বিলিয়ন গিগা-ইলেকট্রন ভোল্টসের বেশি শক্তি অর্জন করলে হিগস বোসন কণা ‘মেগা-স্ট্যাবল’ বা সর্বোচ্চ সুস্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছায়। এ কণা এরপর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অবশ্য হিগস বোসন কণা থেকে কবে নাগাদ এ ধরনের মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে, তার কোনো সময় উল্লেখ করেননি। তবে এ ধরনের কণা যেন অতিশক্তি অর্জন না করে সে বিপদের কথা ভাবার পরামর্শ তাঁর।
২০১২ সালে সার্নের গবেষকেরা হিগস বোসন কণা উদ্ভাবন করেন।
পদার্থের ভর কীভাবে তৈরি হয়, তা জানতে সেই ষাটের দশক থেকেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকেরা। হিগস বোসন নামেই যে এ কণার যাবতীয় গবেষণা শুরু হয়েছিল, সে কথা এখন সবারই জানা। কিন্তু তা সবাইকে জানাতে দীর্ঘদিন যেসব মানুষ গবেষণা করেছেন, কলম ধরেছেন, তাঁদের মধ্যে লিও লেডারম্যানের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৩ সালে লেডারম্যান এ কণার বিষয় নিয়ে লেখা তাঁর প্রকাশিতব্য বইটির নাম দিতে গিয়ে বেশ সমস্যাতেই পড়েছিলেন। কী নাম দেবেন, তা ভাবতে ভাবতে একসময় খানিক উষ্মাভরেই বোধ হয় বলে ফেলেছিলেন, ‘গড ড্যাম পার্টিকেল!’ আর বলাই বাহুল্য, ঝানু প্রকাশক তা মুহূর্তেই লুফে নিয়েছিলেন। কিন্তু খানিক পরই প্রকাশকের মনে হয়েছিল বাজার কাটতির জন্য চাই আরও স্মার্ট আর ছোট নাম। তো লেডারম্যানের কাছে প্রস্তাব পাড়লেন প্রকাশক। নাম টা একটু ছেঁটে ‘গড পার্টিকেল’ রাখা যায় না? লেডারম্যান সম্মতি দিলেন। বইয়ের নাম রাখা হয়েছিল দ্য গড পার্টিকেল। ব্যস, হু হু করে বাজারে বিক্রি হতে শুরু হয়েছিল সে বই। সেই গড পার্টিকেল-এর নাম বাংলা করলে দাঁড়ায় এই ঈশ্বর কণা।
স্টিফেন হকিং
পদার্থবিদ্যার যে তত্ত্বটির সাহায্যে কোনো বস্তুর ভরের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায় তাকে ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ বলে। এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলটির অস্তিত্বশীল হতে হলে প্রয়োজন পড়ে হিগস বোসন কণার, যার আরেক নাম ‘গড পার্টিকেল’ বা ঈশ্বর কণা। পদার্থবিদ্যার এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তুর ভর সৃষ্টির প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে একটি অদৃশ্য কণা। বস্তুর ভরের মধ্যে ভিন্নতার কারণও এই অদৃশ্য কণাটিই। ১৯২৪ সালে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও আলবার্ট আইনস্টাইন বোসন জাতের কণার ব্যাখ্যা দেন। পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে তাত্ত্বিকভাবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। তাঁর মতে, এর ফলেই এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই গড পার্টিকেল বা ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। হিগসের এই কণার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ জানিয়েছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। দুই বিজ্ঞানীর নামে কণাটির নাম দেওয়া হয় হিগস বোসন। ২০০১ সালে এসে গবেষকেরা ওই কণার খোঁজ করতে শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মিল্যাবের টেভাট্রন যন্ত্রে। ২০০৮ সালে প্রতিযোগিতায় নামে সার্ন গবেষণাগারের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার। ২০১১ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা এ কণার প্রাথমিক অস্তিত্ব টের পান। একই সময়ে ফার্মিল্যাবও তাদের গবেষণায় ইতিবাচক ফল পায়। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সার্নের গবেষকেরাই ঘোষণা দিলেন হিগস বোসনের অনুরূপ একটি কণা আবিষ্কারের।
সূত্র ঃপ্রথম আলো প্রযুক্তি পৃষ্ঠা হতে নেওয়া হয়েছে।