মহাকাশে কীভাবে তাপমাত্রার পরিমাপ করা সম্ভব? দৈনন্দিন জীবনে আমরা থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা মাপি৷ অসুস্থ হলে, গায়ে জ্বর এলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়৷ জড় বস্তুর ক্ষেত্রে তার উপাদানের কণার গতির উপর তাপমাত্রা নির্ভর করে৷ যেমন পানি৷
পানির অণুর গতি অত্যন্ত কম হলে তা বরফে রূপান্তরিত হয়৷ গতি বেড়ে গেলে ঘূর্ণায়মান কণাগুলির মধ্যে সংঘাত ঘটে এবং উত্তাপ সৃষ্টি হয়৷ পানি তখন তরল হয়ে যায়৷ কণার গতি আরও বেড়ে গেলে পানি ফুটতে শুরু করে৷
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক বিকিরণকে থার্মোমিটার হিসেবে ব্যবহার করেন৷ সেগুলির তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম, তার উৎসস্থান ততই উষ্ণ হয়৷
প্রায় ১,৪০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা আদি বিস্ফোরণের ফলে মহাকাশ সৃষ্টি হয়৷ অকল্পনীয় মাত্রায় উত্তপ্ত গ্যাস থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ ও মহাজাগতিক বস্তুগুলির জন্ম হয়েছিল৷ সে সময়ে নানা রকম তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়েছিল৷
আমাদের সূর্যের মতো নক্ষত্রের অত্যন্ত গতিশীল ও শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে৷ সেই সব ক্ষেত্র কণাগুলির গতি মারাত্মক হারে বাড়িয়ে দিতে পারে৷ ফলে চারিপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলে৷
ব্ল্যাক হোলের তাপমাত্রা আরও বেশি৷ তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সব উপাদান ও কণা টেনে নিংড়ে নিয়ে বাষ্পে পরিণত করে৷
গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ও গ্রহগুলির মাঝের অংশে প্রায় মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি মাত্রার চরম শীতল তাপমাত্রা বিরাজ করে৷ সেখানে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক ও ধীর গতির কণা রয়েছে৷ ফলে সেগুলির মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও বিরল৷ তাছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্প্রসারিত হয়ে চলছে৷ এই সম্প্রসারণের ফলে কণাগুলির মধ্যে দূরত্বও বেড়ে চলেছে৷ দূরত্ব বাড়ার ফলে তাপমাত্রাও কমে চলেছে৷
ইউরোপের প্লাংক নামের স্যাটেলাইট কয়েক বছর আগে সেই শীতল তাপমাত্রা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পরিমাপ করেছে৷ মহাকাশে ভাসমান টেলিস্কোপের সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণ মাপতে ও তা পরীক্ষা করতে পারেন৷ বিকিরণের উৎস, তার ঘনত্ব মেপে তাঁরা উৎসের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারেন৷