প্রথমেই বলে রাখি ব্ল্যাক হোলের ভিতর থেকেও কণা বের হয়ে আসা সম্ভব!
অবাক হলেন তাইনা? আচ্ছা একটু ধৈর্য ধরুণ।
এটা বোঝার জন্য শূন্যস্থান কী এবং শূন্যস্থান বলতে আদৌ কিছু কি আছে? সেটা একটু ব্যাখ্যা করে নেই।
সাধারণভাবে যেখানে কিছু নেই সেই জায়গাকে আমরা শূন্যস্থান বলি। অর্থাৎ খালি কোনো জায়গাকে শূন্যস্থান(vacuum) বলি। তবে এই শূন্যস্থান আসলে শূন্যস্থান নয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী মাঝে মাঝে এখানে কণার জন্ম হতে পারে।
1- আইনস্টাইনের E=mc^2 হতে বলা যায়, ভরকে যেমন শক্তিতে তেমনি শক্তিকে ভরে রুপান্তর করা যায়।
2-হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্রানুসারে,
অবস্থানের অনিশ্চয়তা যদি ∆x এবং ভরবেগের অনিশ্চয়তা যদি ∆ p হয় তাহলে ∆x ছোট হলে ∆p বড় আবার ∆p বড় হলে ∆x ছোট হয়।
3-তবে এই সূত্রটির আরেকটি রূপ হচ্ছে, শক্তি (E) এবং সময়(t)হলে,
∆t যদি খুব ছোট হয় ∆E হবে অনেক বড়।
অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র সময় বিবেচনা করলে শক্তির অনিশ্চয়তা অনেক বড়। যার অর্থ: এই শক্তি এই সময়ের মধ্যে যা ইচ্ছে তাই হয়ে যেতে পারে।
ঠিক তেমনই বাস্তবে শূন্যস্থানে হঠাৎ করে খানিকটা শক্তি চলে আসতে পারে যার স্থায়িত্ব খুবই অল্প। আমরা একটু আগে পড়ে আসলাম কম সময়ে শক্তির অনিশ্চয়তা অনেক বড়। তাই এখানে অনেক বেশি শক্তি সৃষ্টি হবে। আর এই শক্তি থেকে একটি পদার্থ(particle) আরেকটি প্রতি পদার্থ(anti-particle) কণাও তৈরি হতে পারে।আবার ∆t শেষ হওয়ার আগেই সেই কণা দুটি শক্তিতে পরিণত হয়ে যাবে। আসলে সময়টা এতো ক্ষুদ্র যে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো কণার জন্ম হয়েছিলো। যা কিনা আবার শক্তিতেও পরিণত হয়েছে। তাই এই কণাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে, ভার্চুয়াল কণা।
অবশেষে আমরা বলতে পারলাম শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়, সেখানে অসংখ্য ভার্চুয়াল কণা বিদ্যমান।
এবার আসি স্টিফান হকিংয়ের কাছে, তিনি এই ভার্চুয়াল কণা আর ব্ল্যাক হোলের সাথে একটা যোগসূত্র তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, এই ভার্চুয়াল কণা দুটি যখন ইভেন্ট হরাইজনের খুব কাছাকাছি উৎপন্ন হয় তখন একটি সম্ভাবনা থাকে যে তাদের একটি কণা ব্ল্যাক হোলের ভিতরে ঢুকে যাবে অন্যটি একা হয়ে যাবে। আহা বেচারা তার সঙ্গীকে হারিয়ে ফেললো। এখন সেকি আর ভার্চুয়াল থাকতে পারে? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন সেটি তখন হয়ে যায় সত্যিকারের কণা। তখন এটি ব্ল্যাক হোলের অকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে বের হয়ে যায়। তখন মনে হবে কণাটি যেনো ব্ল্যাক হোল থেকে বের হয়ে এসেছে।
সবসময় বলা হয়ে থাকে ব্ল্যাক হোলে সবকিছু ঢুকে যায়।কিন্তু এই বিশেষ ক্ষেত্রে দেখা যায় সেখান থেকে একটি কণা বের হয়ে আসছে। আর এভাবে কণা বের আসার প্রক্রিয়াকে (হকিংয়ের নামানুসারে) হকিং রেডিয়েশন বলে।
এতক্ষণ তো বললাম ব্ল্যাক হোল থেকেও কণা বের আসা পসিবল। কিন্তু ব্ল্যাক যেগুলো নিজের ভিতরে নিয়ে নিচ্ছে সেগুলো আসলে কোথায় যায়?
যখন কোনো পদার্থ একটি ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনের মধ্যে পড়ে বা তার কাছাকাছি আসে, তখন এটি স্থান-কাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারে না। তখন সেটি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ব্ল্যাক হোলের ভিতরে সেই পদার্থটি তার ক্ষুদ্রতম উপ-পরমাণু উপাদানগুলিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষুদ্র হতে আরো ক্ষুদ্রতর হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুলারিটিতে চলে যাবে। সিঙ্গুলারিটিতে যত বেশি পদার্থ জমা হয়, ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।