সমুদ্র ও উপকূলবর্তী নদীর জলরাশি প্রতিদিন কোন একটি সময়ে ধীরে ধীরে ফুলে ওঠে ও আবার কিছুক্ষণ পরে আবার তা ধীরে ধীরে নেমে যায়। জলরাশির এরকম ফুলে ওঠাকে জোয়ার (Tide) বা নেমে যাওয়াকে ভাটা ( Ebb)বলে।
প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হয়। ১)চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব ২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন বিকর্ষণ শক্তি
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র একে অপরকে আকর্ষণ করে। এমনি ভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশী হয়। কেননা সূর্যের ভরচাঁদের ভরের চেয়ে কম হলেও চাঁদ সূর্যের চেয়ে পৃথিবীর নিকটে অবস্থান করে। তাই, চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানত সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়।পৃথিবী ও চাঁদের ঘূর্ণনের কারণে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে গেলে ফুলে ওঠা পানি নেমে যায়। পানির এই নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং আরেকবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যেকোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়।
সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার ততটা জোরালো হয় না। তবে চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অনেক প্রবল হয়। সূর্য এবং চাঁদ যখন পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উঁচু জোয়ার হয় ও জোয়ারের পানি বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই, সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল বলা হয়।
আমরা জানি, পৃথিবী তার নিজ মেরুরেখার চারিদিকে অনবরত ঘুরে। এই আবর্তনের কারণে বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটা বস্তু মহাকর্ষ শক্তির বিপরীত দিকে ছিটকে যায়। এই বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে যেখানে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের উদ্ভব হয়।