এন্টিবায়োটিক বলতে বোঝায় জীবনের বিরুদ্ধে (anti মানে অন্তরায়, bios মানে জীবন)। কাজেই এই হিসাব করলে, এন্টিবায়োটিক সব জীবনের বিরুদ্ধেই কাজ করার কথা (মানুষের বিরুদ্ধেও, ভাইরাসের বিরুদ্ধেও !) ।
দুঃখজনকভাবে, শব্দের উৎস দিয়ে পরিভাষাকে বিশ্লেষণ করা যায় না। ১৯৪২ সালে এন্টিবায়োটিক এর সংজ্ঞাটি প্রথম একটি গবেষণা পত্রিকায় আসে। তাতে বলা হয়, এটি এমন একটি অণুজীব বিরোধী রাসায়নিক পদার্থ, যা কোনো অণুজীব দ্বারা নিঃসৃত হয়; এবং অন্য কোনো অণুজীবের বিস্তৃতি রোধ করতে পারে। এই সংজ্ঞা অনুসারে, রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত সালফা ড্রাগগুলো এন্টিবায়োটিক নয়, যদিও তারা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল।[1] বর্তমানে, এন্টিবায়োটিক বলতে বুঝি সকল রাসায়নিক পদার্থ (প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত) যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, মানে মেরে ফেলে কিংবা বিস্তৃতি রোধ করে।[2]
অর্থাৎ, এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না, এমনই তার সংজ্ঞা। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেসব ওষুধ কাজ করবে, তাদের আমরা বলি “এন্টি-ভাইরাল” ওষুধ।
এরপরও প্রশ্ন আসতে পারে, কেনো এই এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার শত্রু, কিন্তু ভাইরাসের না? তারও উত্তর আছে।
গঠনগত দিক থেকে ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া, ভাইরাস এবং ইউক্যারিওটিক জীবকোষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। কোনো অণুজীবের সংক্রমণ রোধ করতে হলে এমন অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ওই অণুজীব মরবে, কিন্তু তার পোষকের কোষ (মানে অসুস্থ জীবকোষ) মরবে না। মানে প্রতিটি অস্ত্র নির্দিষ্ট ধরনের অণুজীবের জন্য নির্দিষ্ট। ১৯০০ সালে এই অস্ত্রের নাম দেয়া হয়েছিলো “জাদুর বুলেট”।[3]
পেনিসিলিনের কথাই ধরা যাক। পেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ধ্বংস করে। কিন্তু আমাদের কোষের প্লাজমা জালিকা নষ্ট করে না, গাছেরও কোষপ্রাচীর নষ্ট করতে পারে না (ছত্রাকেরও না, প্রকৃতিতে এই ওষুধ আবিষ্কার করেছে ছত্রাক)। ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর গঠন করে পেপটাইডোগ্লাইক্যান নামের পলিমার। এই পেপটাইডোগ্লাইক্যান অণু যেন গঠিত হয়ে পরস্পরের সাথে “ক্রস-লিংক” নামক বিশেষ সংযোগ না করতে পারে, সেজন্য একটি উৎসেচকের ক্রিয়াকে নষ্ট করে ওষুধটি। যে প্রোটিন অণুর সাথে পেনিসিলিন গিয়ে লাগে তার নাম আমরা দিয়েছি: “পেনিসিলিন-বাইন্ডিং-প্রোটিন” (সংক্ষেপে পিবিপি)। [4]
ইউক্যারিওটিক জীবে পিবিপি নেই, পেপটাইডোগ্লাইকেন অতোটা জরুরি নয়, প্রাণীদের কোষপ্রাচীরই নেই। তাই পেনিসিলিন শুধু ব্যাকটেরিয়ার শত্রু।
এতকিছু বলছি কেনো উত্তরে! ভাইরাসের তো কোনো কোষই নেই!
ভাইরাস হলো এমন কিছু যা অন্য কোষের বিভাজন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজে বংশবৃদ্ধি করে। অন্য কোষকে না পেলে সে জড়বস্তুর মতো। এটি এমনই অদ্ভুত কিছু, একে ধ্বংস করার জন্য আমাদের কোষীয় জীব মারার পদ্ধতিগুলো খাটবে না।
তাই, এন্টিবায়োটিক ভাইরাসে ক্রিয়াশীল নয়।