অণুজীবজগৎ হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অজানা জীববৈচিত্রের ভান্ডার। ট্রাইকোডার্মা হচ্ছে মাটিতে মুক্তভাবে বসবাসকারি উপকারি ছত্রাক। যা উদ্ভিদের শিকড়স্থ মাটি, পঁচা আবর্জনা ও কম্পোস্ট ইত্যাদিতে অধিক পরিমাণের পাওয়া যায়। এটি মাটিতে বসবাসকারি উদ্ভিদের ক্ষতিকর জীবাণু যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও নেমাটোডকে মেরে ফেলে। ট্রাইকোডার্মা প্রকৃতি থেকে আহরিত এমনই একটি অণুজীব যা জৈবিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদের রোগ দমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।। এক তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর ইউরিয়ার ও নন ইউরিয়ার মিলে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়ার সারের চাহিদার মধ্যে এ মুহূর্তে ট্রাইকোডার্মা অনুজীব ব্যবহার করে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন রাসায়নিক সার সাশ্রয় করা যাবে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে ট্রাইকোডার্মা। এর ব্যবহারে কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় ৪০ – ৬০ ভাগ।
জৈবসার হিসেবে মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাক্টেরিয়া (যেমনঃ Rhizobium, Azotobacter) ব্যাবহার করা হয়। যা মাটিতে প্রয়োজন মতো নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে। Azospirillum spp. ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং উদ্ভিদের নাইট্রোজেন গ্রহনের কার্যকারিতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। Pseudomonas spp., Bacillus spp. বিভিন্ন ধরনের মেটাবোলাইটস্ তৈরি করে যা ফাইটোপ্যাথোজেনিক ছত্রাকের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। সরাসরি গাছের বৃদ্ধির পাশাপাশি রাইজো-ব্যাকটেরিয়া গাছের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইনডিউজড সিষ্টেমিক রেজিস্টেন্স প্রদর্শন করে। Actinobacteria ব্যাকটেরিয়া মাটির সমষ্টিকরনে সহায়তা করে। এছাড়া কার্বন পুঞ্জীভুতকরন এবং বায়োজিয়োকেমিক্যাল সাইক্লিং-এ সাহয্য করে। রাইজো ব্যকটেরিয়া মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকর ছত্রাককে দমন করে গাছের মূলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বায়োফার্টিলাইজার, বায়োপেস্টিসাইড ও উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারক হিসেবে শতাধিক অনুজীব পেটেন্ট বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। বাণিজ্যিকভাবে এদের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশবান্ধব, কম উৎপাদন খরচবিশিষ্ট ও টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছ।
এছাড়াও আমাদেত দৈনন্দিন জীবনের ব্যাবহৃত সকল আবর্জনা পঁচাতেও অনুজীব বিশেষ ভূমিকা রাখে, সেসব পদার্থগুলোকে আমরা বলি, Bio-degradable।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, বাস্তুজগতের মূলেই আছে অনুজীব। তাই অনুজীব বিলুপ্তির সাথে সমগ্র বাস্তুসংস্থান বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিশ্চিত।