একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের দিক-নির্দেশনা, যুক্তি-তর্ক করার ক্ষমতা সকল কিছুরই নিয়ন্ত্রণ ব্রেইনের হাতে। তাই সাধারণ যুক্তি-তর্ক থেকে বলা যায় যে যদি ব্রেইনের মাত্র ১০% ব্যবহার করে তাহলে তাকে তার প্রতিটি কাজ যা সে খুবই দক্ষতা বা পারদর্শীতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম তা করতেও বেশ বেগ পেতে হতো। ব্রেইনের দিক-নির্দেশনা ব্যতীত মানব জীবনের বেশ কিছু কর্মকান্ড প্রায় অসম্ভবতুল্য।
এখন আসা যাক নিউরোলজিস্টদের মতবাদে। নিউরোলজিস্টরা
এই তথ্যটিকে পুরোপুরি ভুয়া বলে দাবি করেন। শুধু ভুয়াই না
নিউরোলজিস্ট বেরি গরডন বলেন, আমরা সক্রিয়ভাবে মস্তিষ্কের
প্রতিটি অংশ প্রতি মুহূর্তে ব্যবহার করে থাকি। মস্তিষ্কের এই ১০%
ব্যবহারের মিথ ভাঙ্গতে তিনি প্রমাণস্বরূপ ৬টি প্রস্তাবনা উত্থাপন
করেন।
১। মস্তিষ্কের ক্ষয়-ক্ষতির অধ্যয়ন:
যদি মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ সাধারণত ব্যবহৃত হতো, তবে অন্যান্য
অংশের ক্ষতি কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারতো না।
বিপরীতক্রমে, মস্তিষ্কের এমন কোন এলাকা নেই যা সক্ষমতার ক্ষতি
ব্যতীত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতর অংশের
সামান্য ক্ষতিও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
২। মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে দেখা গিয়েছে যে কেউ যা-ই করুক না
কেন, মস্তিষ্কের সকল অংশ সবসময়ই সক্রিয় থাকে। কিছু কিছু
অংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি
সক্রিয় থাকে। কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষতি ছাড়া, মস্তিষ্কের এমন কোনো
অংশ নেই যা একেবারে কাজ করে না। উন্নতর টেকনোলজি যেমন
পজিট্রন নির্গমন টেমাগ্রাফি (PET) এবং ফাংশনাল চৌম্বকীয়
অনুরণন ইমেজিং (fMRI)এর মাধ্যমে জীবিতবস্থায় মস্তিষ্কের
কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করা যায়। এগুলো থেকে দেখা যায় যে, ঘুমের
সময়ও মস্তিষ্কের সমস্ত অংশ কিছু স্তরের কার্যকলাপ দেখা যায়।
শুধুমাত্র গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মস্তিষ্কের কিছু এলাকা "নীরব"
থাকে।
৩। মস্তিষ্ক অক্সিজেন এবং পুষ্টির ব্যবহারের দিক থেকে শরীরের
বাকি অংশের তুলনায় বেশি ব্যবহার করে থাকে। মানুষের শরীরের
ওজনের মাত্র ২ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও এর শরীরের তৈরি ২০
শতাংশ শক্তির প্রয়োজন হয় যা অন্য যেকোনো অঙ্গের চেয়ে বেশি।
যদি এর ৯০ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় হতো, তাহলে ছোট, অধিক দক্ষ
মস্তিষ্কের মানুষের বেঁচে থাকতে সুবিধা হতো। Science Bee
যদি এটি সত্য হতো, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায়
অকার্যকর মস্তিষ্কের অংশগুলো বাদ হয়ে যেত। এটা অসম্ভব যে
এত অপ্রয়োজনীয় পদার্থযুক্ত একটি মস্তিষ্ক প্রথম স্থানে বিকশিত
হতো; প্রসবের সময় ঝুঁকির কারণ মানুষের মস্তিষ্কের বড় আকার,
এত বড় মস্তিষ্কের আকারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী নির্বাচনের
চাপ অবশ্যই থাকত যদি মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হতো।
৪। ফাংশনের স্থানীয়করণ:
একক ভর হিসাবে কাজ করার পরিবর্তে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরণের
তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য আলাদা অঞ্চল রয়েছে। কয়েক দশক
ধরে গবেষণায় মস্তিষ্কের এলাকার ম্যাপিং ফাংশন করার পর
কোনও কার্যক্ষম অঞ্চল পাওয়া যায়নি।
৫।মাইক্রোস্ট্রাকচারাল বিশ্লেষণ:
একক-ইউনিট রেকর্ডিং কৌশলের মাধ্যমে গবেষকরা একটি একক
কোষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য মস্তিষ্কে একটি ক্ষুদ্র
ইলেক্ট্রোড বসায়। যদি ৯০ শতাংশ কোষ অব্যবহৃত থাকত, তাহলে
এই কৌশলটি তা প্রকাশ করে দিত।
৬।সিনাপটিক ছাঁটাই :
যেসব মস্তিষ্কের কোষ ব্যবহার করা হয় না তাদের অধপতনের
প্রবণতা থাকে। তাই ৯০ শতাংশ মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থাকলে, স্বাভাবিক
প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের ময়নাতদন্ত বড় আকারের অবক্ষয় প্রকাশ
করবে।
অধিকাংশ মানুষই বেরির এই তত্ত্ব মেনে নিয়েছে।
লেখকঃ Fariha Karim | Team Science Bee