মাল্টিভার্স বা মেটা ইউনিভার্স বা মাল্টিপল ইউনিভার্স বলতে আসলে বোঝায় আমরা যে ইউনিভার্সে বাস করছি তার আশেপাশে অবস্থিত সম্ভব সংখ্যক অসীম বা সসীম ইউনিভার্স।
ধরুন আপনি একটি একতলা বাড়িতে আছেন যার রয়েছে ৪ টি রুম। কিন্তু আপনি জানেন না কিভাবে এক রুম থেকে অন্য রুমে যেতে হয় বা একতলার উপরে কোন তলা আছে কি না তাও জানেন না।আবার আপনি যে রুমে আছেন সেই রুমটি থেকে বাকি ৩ টি রুম দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু রুমে একটা আয়না আছে। আয়নায় একটু মন দিয়ে তাকালেই মনে হয় যেন আয়নার ভেতর দিয়েই ওপারে আরেকটি রুম আছে। যার ভেতরটি ঠিক আপনার রুমটারই মত। মাল্টিভার্স থিওরিটাও অনেকটা সে রকম।
আমাদের এই মহাবিশ্বে রয়েছে প্রায় কয়েকশ বিলিয়ন নক্ষত্র যারা কেউ সূর্যের মত আবার কেউ সূর্যের চেয়ে ছোট অথবা বড়। আর এদের প্রায় প্রত্যেকেরই আশেপাশে অবিরাম প্রদক্ষিণ করে চলেছে নানা রকম গ্রহ। ঠিক যেমনটি রয়েছে আমাদের সূর্যের চারিদিকে।
.
কিন্তু আপনি যে মহাবিশ্বকে দেখছেন সেটি আসলে ৪ রুম বিশিষ্ট একতলা আপনার সেই বাড়িটার একটা রুমের মতই। যে বিশ্বজগতটাকে আপনি ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করতে পারেন তার বাইরেও থাকতে পারে এমন অসংখ্য মহাবিশ্ব। যাতে হয়ত রয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্বের মত অসংখ্য গ্যালাক্সি,নক্ষত্র,গ্রহ,উপগ্রহ,। কিন্তু আপনি জানেন না সেখানে কিভাবে যাবেন ঠিক যেন ওই রুম ৪টির মত।
.
কারণ তারা ডাইমেনশনাল পর্দা দ্বারা আবৃত অবস্থায় হয়ত আমাদের সমান্তরালেই অবস্থান করছে। ঠিক যেমনটা আপনার ওই রুমটার আয়নায় দেখেছিলেন। আয়নার ওপারে রয়েছে ঠিক আপনার রুমটারই মত অথচ বিপরীত দিকে মুখ করা একটা রুম যেখানে ঠিক আপনারই মত একজন বসে আছে ঠিক আপনার সমান্তরালেই। মাল্টিভার্সটাও ঠিক একই রকম।
.
.
একটি মহাবিশ্বের সমান্তরালে আয়নার প্রতিবিম্বের মত আরও অজস্র মহাবিশ্ব যেখানে হয়ত পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম গুলো প্রতিবিম্বটার মতই বিপরীত!!
.
এখন প্রশ্ন হল দেখতে পাইনা কেন সেই মহাবিশ্বকে? যেটা নাকি আমাদের সমান্তরালেই বিদ্যমান? এটি একটি থিওরি মাত্র। এর কোন বাস্তব অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা এখনো প্রমাণ করতে পারেন নি। আর তাছাড়া যদিও থেকে থাকে তাহলে তা চতুর্মাত্রিক পর্দা বা সময় প্রবাহের পর্দা দ্বারা আমাদের এই আপন মহাবিশ্ব থেকে আলাদা করা।
.
আর ২য় কারণ আমাদের দৃষ্ট আলোক সংবেদী। আলো দ্বারাই তা সীমাবদ্ধ। কোন বস্তু আমরা ততক্ষন দেখতে পারব না যতক্ষন না তা হতে আলো এসে আমাদের চোখের রেটিনায় পৌছায়। যেহেতু সেই কাল্পনিক সমান্তরাল প্রতিবিম্ব মহাবিশ্বটি ও আমাদের মধ্যে রয়েছে একটি ডাইমেনশনাল বা চতুর্মাত্রা বিশিষ্ট পর্দা তাই সেটি থেকে কোন আলো আমাদের চোখে পৌছানোর কথা না। অবলোহিত, এক্স-রে বা ইউভিএ বা ইউভিবি রশ্মিও আসা সম্ভব না। কেননা চতুর্মাত্রিক পর্দা দ্বারা আলাদা করা মানেই এমন একটা পর্দা যা চারটি মাত্রা (দৈর্ঘ,প্রস্থ,উচ্চতা ও সময়) দ্বারা আমাদের মহাবিশ্ব থেকে আলাদা করা। ফলে সেখান সব কিছুর মাত্রাই আমাদের থেকে ভিন্ন গতিতে চলছে। ঠিক যেন আয়নার সেই প্রতিবিম্বের মতই। আয়নার ওপারে আছে ঠিকই কিন্তু আয়না সরালে আবার সেই আপনার রুমটিই। পেছনে আসলে কিছুই নেই।
এবার একটু থিউরীর দিকে নজর দেয়া যাক...
মাল্টিভার্স হল এমন একটি ধারণা যেখানে মনে করা হয় যে , আমাদের এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডে মহাবিশ্ব একটি নয় । মহাবিশ্ব অনেক অনেক এবং অনেক । আমরা সবাই মনে হয় বিগ ব্যাং সম্পর্কে কম বেশী জানি । বিগ ব্যাং তত্ত্ব মতে স্থান কাল সবকিছুর সূচনা হয় একটি মহা বিষ্ফোরণের মাধ্যমে । সৃষ্টির শুরুতে এই মহাবিশ্বের সবকিছু একসাথে জমাট বেধে ছিল । এই মহা বিষ্ফোরণের ফলে সবকিছু আলাদা হয় পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে এবং এই দূরে সরে যাওয়া আজও থামেনি । মহাবিশ্ব এখনও সম্প্রসারণশীল । এই তত্ত্বকে সম্প্রসারণ তত্ত্ব ও বলা হয় । এখন এই মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টির আদিতে এমন ভাবে বিষ্ফোরণ ঘটে , ঠিক একটা সাবানের বুব্দুদ ফাটলে যেমন হয় , তেমন ভাবে । একটি সাবানের বুবুব্দ আস্তে আস্তে প্রসারেত হয়ে হঠাৎ করে ফেটে যা সৃষ্টি করল , তাই আজকের মহাবিশ্ব ।
এখন আমরা আসি মাল্টিভার্সে । বিগব্যাং তত্ত্বই বহু দিন ধরে এই পৃথিবীতে রাজ করে আসছিল । আর এখনও করছে । তবে এই তত্ত্ব থেকে আরেক ডিগ্রি উপরে আরেক তত্ত্ব আবিষ্কার হয়েছে , আর সেটা হল " মাল্টিভার্স তত্ত্ব " । এটা বিগ ব্যাং কে নাকচ করে দেয়নি মোটেও , বরং এর ভিত আরও মজবুত করেছে ।
এই মাল্টিভার্স তত্ত্বের জনক হলেন এ্যলেন গুথ নামক এক ভদ্রলোক । তবে সর্বপ্রথম এই ধরণের একটা ধারণা করেন বিজ্ঞানী জিওনার্দো ব্রুনো । তাকে কোর্পানিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্ব তত্ত্ব সাপোর্ট করার জন্য পুড়িয়ে মারা হয় । -সংগৃহীত