সহজ কথায় বলতে গেলে হ্যা, আইফোন অনেক ক্ষেত্রে আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আইফোনের প্রসেসর বর্তমানে অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে ভালো, অপারেটিং সিস্টেম নিজেদের বানানো, এয়ারড্রপ এর মত প্রযুক্তি শুধু আইফোনেই আছে। আমি কিছুটা এক এক করে বলছি কেন আইফোনের দাম বেশি।
নিজস্ব প্রযুক্তি: আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম নিজেদের বানানো, একারণে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে অ্যাপেলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড গুগলের কাছ থেকে পাওয়া যায়। অ্যাপলের প্রসেসরও নিজেদের বানানো, যা অন্য সব কোম্পানির চিপ এর দেয়ে দ্রুতগামী। কিছু সুবিধা শুধু অ্যাপল পণ্যেই পাওয়া যায়, যেমন ফোনে একটা ডকুমেন্ট টাইপ করছি, হঠাৎ ল্যাপটপে চলে আসলাম, দেখা যাবে ওই কাজটা ল্যাপটপ থেকে করে যেতে পারব। হয়তো ল্যাপটপে একটা কিছু কপি করলাম, আইফোনে পেস্ট করলে তা চলে আসবে। এয়ারপড হেডফোনগুলো ব্যবহার করলে যখন যে অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহার করবেন ওইটায় তা কানেক্ট হয়ে যাবে। এরকম অজস্র সুবিধা আছে যা অন্য পণ্যে সম্ভব নয়- কারণ পৃথিবীতে আর কোন বড় কোম্পানী নেই যারা একই সাথে পার্সোনাল কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাব, স্মার্টওয়াচ সবগুলোর জন্য হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার নিজেরা বানায়।
ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট : অ্যাপলের পণ্যের ডোমেইন হাইএন্ড, অর্থাৎ মধ্যম বা নিম্ন দামের মার্কেটে অ্যাপেল প্রতিযোগিতা করে না। অ্যাপেলের সাথে অন্যান্য যে সব পণ্য প্রতিযোগিতা করে, তা অনেকটা কাছাকাছি দামের, যেমন গুগল পিক্সেল ৪ এর দাম আইফোনের খুব কাছাকাছি।ম্যাকবুকের সাথে মাইক্রোসফট সার্ফেসের দামের পার্থক্যও খুব কম।
ব্র্যান্ডিং: যখনই নতুন একটা ফোনে কোন ভালো ফিচার আনা হয়, তা তুলনা করা হয় আইফোনের সাপেক্ষে ওই ফোনের ওই ফিচারটা কতটা ভালো। এইটাই ব্র্যান্ডভালু। আইফোন আসার আগেও অ্যাপল ছিলো। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে অ্যাপল একটু একটু করে নিজেদের একটা ব্র্যান্ড ভালু দাড় করিয়েছে। একটা অ্যাপল পণ্য বাজারে আসার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তার সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায়, অনেক ক্ষেত্রে তা আরো বেশিদিন পাওয়া যায়। একারণে অনেক অ্যাপল ব্যবহারকারী আবার অ্যাপলেই ফেরত আসেন।
সাপ্লাই চেইন: অ্যাপল সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে বেশিরভাগ সময় সবচে ভালো স্যাম্পল নেয়ার চেষ্টা করে, যা পণ্যের দাম বাড়ায়।
অপারেশন: এক লাখের উপর কর্মী অ্যাপলে কাজ করে। ২০১৯ সালে অ্যাপলের নিজস্ব খরচ ছিলো ১৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা পৃথিবীর অনেক দেশ চালানোর চেয়েও ব্যয়বহুল। এবং এই খরচের প্রায় অর্ধেকের বেশি আসে আইফোন বিক্রয় থেকে।
পণ্যের দাম অনেকটা বাজারের উপর নির্ভর করে। যেহেতু মানুষ এই মূ্ল্য দিয়ে পণ্য কিনছে, তাই অ্যাপেলের পণ্যের মূল্য কমার কোন কারণ নাই । সাতশ কোটি মানুষের পৃথিবীতে প্রায় একশ কোটি অ্যাপল ডিভাইসের উপস্থিতি প্রমাণ করে অ্যাপল এই মূল্যে পণ্য বিক্রয় করলেও মানুষ তা কেনে। তাই অদূর ভবিষ্যতে অ্যপলের ফ্ল্যাগশিপ পণ্যের দাম খুব একটা কমবে না। তবে ননফ্ল্যাগশিপ পণ্যের ক্ষেত্রে এখন অনেক সাশ্রয়ী পণ্য অ্যাপল বিক্রয় করে - যেমন আইফোন এসই, অ্যাপল ওয়াচ এসই, ম্যাকবুক এয়ার ইত্যাদি।