স্টিভ জবসের প্রধান লক্ষ্যই ছিলো মার্কেটে নিজেদের ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ছোট খাটো ব্রান্ড না, ওয়াল্ড ওয়াইড ব্রান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা।
আর সেই ধারা অনুযায়ীই অ্যপল তাঁদের যাত্রার প্রথম থেকেই কাস্টোমার কে ভালো জিনিস দিয়ে এসেছে । হ্যাঁ এটা ঠিক তাঁদের প্রোডাক্টগুলো সাধারণত অনেক দামী হয়ে থাকে, কিন্তু দাম অনুযায়ী যদি কাস্টোমাররা ভালো কিছু পেয়ে থাকে তাহলে তাঁদের অভিযোগ করার কোন প্রশ্ন আসে না।
আইফোন দামী হবার কারণ যদি বের করতে যান, তাহলে অগণিত কারণ বের হবে, আমি মেইন কয়েকটা কারণ শর্টকার্টে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
- সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার: আমরা অধিকাংশ মানুষই এনড্রোয়েট ব্যবহার করে থাকি। প্রথম অবস্থায় যে কোন ব্রান্ডের একটি নতুন এনড্রোয়েট ফোন কিনুন দেখবেন খুব ভালো চলবে। ফোনের গতি,ক্যামেরা ,ওভারঅল পারফরমেন্স সব দিক থেকেই ভালো। কিন্তু যত দিন যাবে চালাতে থাকবেন ফোনের পারফরমেন্স কোয়ালিটি তত কমতে থাকবে, বেশির ভাগ ফোনই ৬-৮ মাসের মধ্যে স্লো হয়ে যায় আগের মতো পারফরমেন্স পাওয়া যায় না। যখন রিসেট দিবেন তখন আবার নতুনের মতো হয়ে যায় ভালো কাজ করা শুরু করে। কিন্তু এভাবে রিসেট দিয়ে কত দিন? ঠিক এখানেই অ্যপলের প্রোডাক্টের ভিন্নতা, অ্যপলের একটি ফোন আপনে এখন যেমন কিনবেন আগামী যতদিন ফিজিক্যাল ড্যামেজ না হবে ততদিন পর্যন্ত একই পারফরমেন্স পেয়ে যাবেন। এর কারণ অ্যপল তাঁদের হার্ডওয়্যার ভালো মানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে থাকে এবং একই সাথে তাঁদের হার্ডওয়্যার,সফটওয়্যারের কম্বিনেশন ও বেস্ট হয়ে থাকে।
- সিকিউরিটি: অ্যপলের প্রোডাক্টগুলো অধিক জনপ্রিয় হবার প্রধান একটি কারণ হলো তাঁদের সিকিউরিটি ব্যবস্থা। অ্যপল তাঁদের সবগুলো প্রোডাক্টে কড়া সিকিউরিটি মেইনটেইন করে, যার ফলে কাস্টোমারদের একটা আস্থা অর্জন করে ফেলেছে। যখন নিরাপত্তার পশ্ন আসে তখন কে বা না চায় তাঁদের ডেটা গুলো নিরাপদে থাকুক? এই জন্যই বড় বড় সেলিব্রেটিদের,সুপাস্টারদের সবসময় আইফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যদি এত চিন্তা থাকে, তাহলে তাঁদের মতো সেলিব্রেটিদের কেমন চিন্তা থাকতে পারে ভেবে দেখুন।
- রিসার্স: অপ্যল জন্মের পর থেকেই সব সময় নতুন কিছু তৈরি করে এসেছে, আর ১০ টা কোম্পানীর মতো ট্রেন্ডে গা ভাসায় নি কপি করার পেছনে দৌড়ায়নি, উল্টা টেক দুনিয়ার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অনান্য কোম্পানীগুলো নানা সময় অপ্যল কে কপি করে এসেছে। এই তো কয়েক বছর আগের কথা স্মার্টফোনে নচ থাকবে এটা কেউ কল্পনাও করেনি, এমনকি অপ্যল যখন প্রথম নচের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তখন এটা নিয়ে যে কত রকম আলোচনা - সমালোচনা হয়েছে ধারণার বাইরে। কিন্তু কয়েক মাস পর থেকেই দেখা গেল অনান্য সব কোম্পানী অপ্যলের নচ ডিসপ্লেওয়ালা ডিজাইন কপি করে ফোন তৈরি করা শুরু করেছে। যা আজও চলছে, এখন তো নচ ডিসপ্লে ওয়ালা ছাড়া ফোন চোখেই পড়ে না। ঠিক এমনি ভাবে অ্যপল প্রতি বছরই নতুন কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এসেছে। যার কারণেই অ্যপলের সেমিনার দেখার জন্য মানুষ সারা বছর আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করে। তবে এখানে আরও একটা বিষয় লক্ষণীয়, অপ্যল জন্মের পর থেকে সব সময় ভিন্ন রাস্তায় চলে থাকলেও স্টীভ জবসের মৃত্যুর পর অপ্যল সেই অর্থে নতুন কোন চমক নিয়ে আসতে পারেনি।
- শো-অফ: হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, আইফোন বা অপ্যলের সব প্রোডাক্ট দামি হবার অন্যতম কারণ এখন শো-অফ। অপ্যল নিজেদের অবস্থান এমন ভাবে মার্কেটে দখল করে নিয়েছে যে, যারা তাঁদের ডায়হার্ট ফ্যান তাঁরা এক প্রকার অন্ধ হয়ে গেছে। অপ্যল বাজারে ভালো জিনিস আনুক আর খারাপ জিনিস নিয়ে আসুক না কেন, তাঁরা চোখ বন্ধ করে সেটা কিনে নিবে, কে কত লেটেস্ট ভার্শন চালাচ্ছে এটা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের কথাই ধরুন, যার কাছে আইফোন আছে সেই বড়লোক। এইসব কারণের জন্যই অপ্যল এখন ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানীতে পৌছে গেছে, সেই সাথে তাঁদের প্রোডাক্টের দাম এখন আগের মতো দামী রয়ে গেছে।
- রিয়াজুল মাসুদ রিহাম