" গ্রহীয় বলয় " (Planetary ring) হলো কোনো গ্রহের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট চাকতি আকৃতির অঞ্চলে আবর্তনরত ধূলি ও ছোট ছোট পাথুরে কণার বেষ্টনী । সৌরজগতে শনি গ্রহের চারপাশে রয়েছে সবচেয়ে স্পষ্ট ও দর্শনীয় বলয় । শনি ছাড়াও সৌরজগতে বৃহস্পতি , ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহের চারপাশেও বলয় রয়েছে । 'ক্যাসিনি' নভোযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে শনির একটি উপগ্রহের চারদিকেও বলয় রয়েছে । ' রিয়া ' নামক এই উপগ্রহের বলয় আবিষ্কৃত হলে প্রমাণিত হবে যে , " উপগ্রহেরও বলয় থাকতে পারে " ।
মূলত ৩টি পদ্ধতিতে এই ' গ্রহীয় বলয় ' সৃষ্টি হতে পারে । এগুলো হলো :-
1." ভ্রূণ গ্রহীয় চাকতির " যেসকল উপাদানগুলো " রোশ সীমার " মধ্যে ছিল সেগুলো একত্রিত হয়ে উপগ্রহ গঠন করতে পারেনি বলে এরা শনির চারপাশে বলয় তৈরি করেছে ।
2.গ্রহটির কোনো উপগ্রহ বিরাট কোনো সংঘর্ষের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে গেলে সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে বলয়গুলো গঠিত হতে পারে ।
3.কোনো উপগ্রহ হয়তো হঠাৎ কখনো গ্রহটির রোশ সীমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল এবং যাওয়ার সময় গ্রহের জোয়ার - ভাটা জনিত টানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে , যেখান থেকে বলয়বরফ ও পাথর দিয়ে গঠিত বলয়গুলো কিন্তু স্থির নয় । শনির চারদিকে ঘুরছে খুব উচ্চ গতিতে । শনির বলয়ে ৪টি বড় গ্রুপ ও অপেক্ষাকৃত হালকা ৩ টি গ্রুপ আছে । সবচেয়ে বড় গ্রুপটির ব্যাস শনির ব্যাসের "২০০ গুণ" বড় ।
সম্প্রতি জাপান ও ফ্রান্সের কিছু গবেষক এই বিষয়ে ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে কিছুটা ইঙ্গিত পেয়েছেন । তারা বলেছেন , বরফ ও পাথরখণ্ড দিয়ে শনির রিং গঠিত যা সম্ভবত প্লুটোর মতো হাজারো বস্তুর সংঘর্ষে গঠিত হয়েছে ।
গবেষকদের ধারণা , প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে বৃহস্পতি , শনি , ইউরেনাস ও নেপচুন অস্থিতিশীল ছিল । ফলে সূর্য থেকে আরও দূরের প্লুটোর আকারের বস্তুদের ' বেগ ' ও গ্রহদের ' মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ' পরিবর্তন হয়েছিল বলে ধারণা করা হয় । এই বস্তুরা তখন সৌরজগতের আরো ভেতরে এসে গ্রহদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ।
জাপানের ' ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির ' গবেষকরা সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই ঘটনাটির মডেল তৈরি করেছেন । এতে বলা হয়েছে , সেসব সংঘর্ষে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষগুলোকে বড় গ্রহরা নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে তাদের কক্ষপথে স্থান করে দেয় । সংঘর্ষ অব্যাহত থাকলে নতুন খণ্ড এসে জমা হয় আগেরগুলোর আশেপাশে । এভাবেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় 'বলয় গ্রুপ' ।
এই বলয় আবিষ্কারের পর ৪০০ বছর কেটে গেলেও , এর রহস্য এখনো কাটেনি । এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি যে ঠিক কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল শনির বলয় ?!!!গুলোর উৎপত্তি হয়েছে ‌।
source: wikipedia