নেগেটিভ মার্কেটিং এর ধারনা কোথা থেকে এসেছে? এটি কেন এত সফল? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
875 বার দেখা হয়েছে
"বিবিধ" বিভাগে করেছেন (15,280 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (140 পয়েন্ট)
নেগেটিভ মার্কেটিং এবং আমাদের সাইকোলজি

 

মার্কেটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কাস্টমারের মন বুঝা এবং সেটা অনুযায়ী পণ্যকে অফার করা। এই পক্রিয়ায় টার্গেট কাস্টমারের মনের মধ্যে একটা স্থান দখল করে নিতে পারলে সেটা যেকোন কোম্পানির জন্য বড় সফলতা।

 

চোখ বন্ধ করুন। কানের এসে বললাম কোকাকলা। আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবেনা কোকাকোলার পেচানো অক্ষরে লেখা লোগো আর কালো রঙ এর পানীয় চোখের সামনে ভেসে আসবে। অর্থাৎ তারা তাদের পণ্যের ব্রান্ডিং এমন ভাবেই করে ফেলেছে যে আপনার মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। চাইলেও ভুলতে পারবেন না।

 

অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ্য ধারায় পণ্যের প্রসার ঘটাতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আর এক্ষেত্রে অনেক কোম্পানির লোগো, ব্রান্ড নেম যা আপনার কখনো পরিচিত ছিলনা সেটা আপনার মনের ভেতর স্থায়ী আবাসের ক্ষেত্রে দ্রুত কাজে দেয় নেগেটিভ মার্কেটিং।

 

এই বিষয়ে বাস্তবের কিছু উদাহরন দেয়া যাক। সম্প্রতি কিছু চ্যানেল বয়কটের নামে আন্দোলন শুরু হয়েছে। যদি তাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করেন তবে দেখবেন বয়কট করতে যেয়ে তাদের সাম্প্রতিক ভিডিওগুলোর ভিউ অন্য যে কোন ভিডিও থেকে ১০ গুন কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০ গুন বেড়ে গেছে। এতে তাদের কি খুব ক্ষতি হয়েছে? নাকি আপনার বয়কটের জন্য উলটা তাদের বিনা পয়সায় প্রসার হয়েছে?

 

প্রিয় মেম্বারস। মার্কেটিং নিয়ে আজ লিখতে বসেছি যদিও এই বিষয়ে আমার উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। তথাপী এই টপিকে আমি লিখিনা কারন অনেকেই সত্যটা বুঝবেন না।

 

এবার একটু ব্যাখ্যা করি। শুধু বাঙ্গালী নয়, বিশ্বের সব জাতির ভেতর হুজগ জিনিসটা কাজ করে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি বেশি মাত্রায় কারো কারো ক্ষেত্রে কম মাত্রায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই হুজগ দীর্ঘদিন ধরে থাকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটা একদম সল্পস্থায়ী।

 

বাঙ্গালী হিসাবে আপনারা আমার থেকে কম জানেন না যে আমাদের বৈশিষ্ট্য কেমন।

 

মানুষকে তার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় যদি সেগমেন্টেশন করি তবে যেমন পাবেন যে বয়কট যারা করছেন তাদের মোট সংখ্যার ২-৫% হবে যারা বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন এবং দীর্ঘসময় ধরে এটা পালনের ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। আর বাকি যেই মানুষ আছে তাদের ভেতর হয়ত ২০%-৩০% জেনে বুঝে বয়কট করছেন কিন্তু তারা কিছুদিন পর বেমালুম ভুলে যাবেন। আর অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এটা হল সবাই বয়কট করছে তাই আমিও করছি। দুই দিন পর এই ইস্যু যখন পরিবর্তন হয়ে অন্য ইস্যু সামনে আসবে তখন বেমালুম ভুলেই যাবেন বয়কটের কথা।

 

ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল এখানেই। যারা আগে কখনো হয়ত একটি পণ্যের নাম শুনেন নি, তারা বয়কটের কারনে বা নেগেটিভ মার্কেটিং এর কারনে এই পণ্যের নামের সাথে পরিচিত হবে। সাময়িক ভাবে কোম্পানির ক্ষতির মধ্যে পড়বে হয়ত কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বিনে পয়সায় এই প্রসার তাদের বিক্রি আরো বাড়িয়ে দিবে।

 

আবেগের জন্য আমার কথা বিশ্বাস করছেন না তাইতো? শুধু ৬ মাস যাক। দেখবেন পৃথিবীর সব দেশেই তাদের পণ্য দেদারসে বিক্রি হবে। আর এবার তাদের পণ্যের প্রচারনা আপনি আমি নিজেরাই করে দিয়েছি।

 

সাইকোলজি খুব খারাপ জিনিস। কেমন খারাপ জিনিস আরেকটু বলি। আমার পোস্টে আমি কোন নির্দিষ্ট পণ্যের নাম নিব না। আমি চাইনা আমার মাধ্যমে তাদের নামের প্রচার পাক। তবে ব্যাক্তি নাম নিতে সমস্যা নেই। আপনারা যারা মিডিয়ার নিউজ পড়েন তারা জানেন সাধারন মানুষের মন নিয়ে মিডিয়া খুব সুন্দরভাবে খেলে।

 

ধরুন একজন বলিউড নায়িকা। ক্যারিয়ার শেষ। ভাল কাজ পাচ্ছে না। দেখবেন এই সময়ে তারা একটা সুন্দর চাল চালে যেটা সাধারন মানুষ হিসাব আমরা না বুঝেই তাদের উপকার করি। সেই নায়িকা বা সেলিব্রেটি নেগেটিভ মার্কেটিং এর সাইকোলজি আপনাদের মধ্যে প্রয়োগ করে। যেমন ধরুন- অমুক নায়িকা ইন্সটাগ্রামে একটা ছবি পোস্ট করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে তার পেট বেশ মোটা। সাথে সাথে মিডিয়া গুলা শুরু করবে নিউজ করা, অমুক নায়িকা সন্তান সম্ভাব্যা, কে তার স্বামী? বিয়ে করছেন কি অবশেষে তিনি? লুকিয়ে প্রেম করে একি করলেন অমুক নায়িকা। এই ধরনের নিউজ নিয়ে সে আবার লাইম লাইটে চলে আসে।

 

আবার ধরুন ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করেই বিতর্কে জড়ায়। ইচ্ছে করেই বেফাস মন্তব্য করে। তারা খুব ভাল ভাবে জানে যে এতে তার সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। আসলে তারা এটাই চায়।

 

ব্যক্তির ক্ষয় আছে। শেষ আছে। কিন্তু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন হয়না। ব্যাক্তি পর্যায়ে নেগেটিভ মার্কেটিং করে হয়ত তারা লাইম লাইটে আসেন। আবার তাদের চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোম্পানির ক্ষেত্রে এটা হয়না। কোম্পানিগুলি আরো বেশি উপকৃত হয়।

 

কোকাকোলার ক্ষেত্রে উদাহরন টা আবার দেয়া যাক। এদেশে কোকাকলা বর্জন করুন এমন আহবান এখনো ফেসবুকে ঘুরলে অনেক পাবেন। কিন্তু আপনার কি মনে হয় কোকাকোলার ব্যাবসা লাটে উঠাতে পেরেছেন? বিনে পয়সায় করা আপনার প্রচার কোকাকোলার সেলস আরো বাড়িয়েছে। কমায় নি।

 

ওপেন মিডিয়ায় বর্জনের খেলা সাময়িক সময়ের জন্য করা যায়। আপনি হয়তো ঘৃণা নিয়ে বর্জন করে শেয়ার করলেন একটি সংবাদ, এতে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের হয়ত আরো ২০০০ মানুষের কাছে বার্তাটি পৌছালো। মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হিসাবে আপনিই তাদের পণ্যের প্রচার করে দিলেন ৫০০০ মানুষের কাছে।

 

এরপর যখন দেখবেন এই ইস্যু কেটে গেছে, অথবা ওই কোম্পানি আপনাদের মন পাবার জন্য একটা ভাল কাজ করেছে যেটা আপনার ব্যাক্তি আবেগ, ধর্মীয় আবেগ হিসাবে আপনার ভাল লেগেছে তখন দেখবেন আপনি যেই কোম্পানির নাম আগে কখনো শুনেন নি দোকানে যেয়ে আপনি সহজেই সেই পণ্য কিনছেন। ইস্যু গুলা সাময়িক। এটা উপলব্ধি করুন। এক বছর পর তাদের সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে আরো ভাল ভাবে চলবে সেটাও ভুলে যেয়েন না।

 

তাহলে কি করা উচিত। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে যেসব দোকান থেকে বাজার করি, আমি তাদের কাছে মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য চাই। বিদেশি পণ্যকে এভয়েড করি। শুধু এটুকু মানসিকতার জন্য যেটা হয় সেটা হল, ফ্রান্স, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ভারত সব দেশের পণ্য আমার বাজারের লিস্ট থেকে বাইরে থাকে। মনে রাখবেন, যে উল্লেখিত সব দেশের এমন অনেক কাজ আছে যেটা আমাকে তাদের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করেন না। ইউরোপে আরো অনেক দেশ আছে যারা ২০০৪ সালে এরকম বয়কটের জালে পড়েছিল। হলফ করে বলে পারবেন তাদের পণ্য এখন আমরা কিনিনা? কিনছি না?

 

আমাদের আবেগ কে কারো ব্যাবসার সুযোগ সৃষ্টি করতে দিয়েন না। এতে পরোক্ষ ভাবে তাদের উপকার করা হয়। নিব না তাদের পণ্যের নাম। শেয়ার করব না তাদের পণ্যের লোগো। প্রাইমারি টার্গেট আমি দেশী পণ্য কিনব। এখানে আমার ঠকবার সুযোগ নেই। আমাদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলার সুযোগ কাউকে দিব না।

 

নেগেটিভ মার্কেটিং এর সুফল অনেক সময় এমন যে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও এতটা প্রসার পাওয়া যায়না। আসুন বিনে পয়সায় প্রসার বাড়িয়ে না দেই তাদের। নিজেকে নিরাপদ রাখি। দেশি পণ্যের দিকে ঝুকি। বয়কটের থেকেও বড় ঝুকিতে পড়বে তারা। বয়কট হোক কৌশলে, বয়কটের সুযোগে কারো প্রচারে নিজেকে না জড়াই। বাজার থেকে পণ্য কিনলে আগে পেছনে দেখে নিবেন কোন দেশের তৈরি। এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন।

 

Source : defres ( Defence Research Forum)

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+8 টি ভোট
1 উত্তর 259 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 314 বার দেখা হয়েছে

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

273,429 জন সদস্য

53 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 52 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Shariar Rafi

    420 পয়েন্ট

  2. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  3. sib_gat

    110 পয়েন্ট

  4. phantomdeluxe

    110 পয়েন্ট

  5. Shourov Viperr

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...