হয়তো আপনিও এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন যেখানে কেবল একজনই তাঁর ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন আর পাশের বাকি চারজন মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে চুপচাপ ইন্টারনেট ছাড়াই বসে আছেন! অথচ একটি নেটওয়ার্ক কেবল কিংবা একটিমাত্র ডংগল থাকলেও কিন্তু শুধু একটি কম্পিউটারেই ইন্টারনেট নয়, বরং আরও বেশ কয়েকটি গেজেটেই এই ইন্টারনেট ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যায়।
যেখানে শুধু একটি নেটওয়ার্কিং কেবল রয়েছে, কিন্তু ওয়াই-ফাই রাউটার নেই বলে আপনাকে চুপচাপ বসে থাকতে হয়েছে অথবা আপনার একটি থ্রিজি ডংগল রয়েছে, যাতে আপনি ল্যাপটপ ব্যবহার করেছেন কিন্তু আপনার শুধু ওয়াই-ফাই সমর্থিত ট্যাবটি অফলাইন হয়ে পড়ে রয়েছে—এ ধরনের সমস্যার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, সবার সঙ্গে ইন্টারনেট ভাগাভাগি করতে পারলে এবং রাউটার ছাড়াই অন্য ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলে সুবিধা হয় অনেকখানি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে একটি রাউটার কেনার চেয়ে আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ইন্টারনেট সংযোগকে ওয়াই-ফাই করে অন্য ডিভাইসে ব্যবহারের উপযোগী করতে পারেন। এ প্রক্রিয়াটি খুব বেশি কঠিন কিছু নয়, বিশেষ করে যাঁরা অ্যাপলের ম্যাক কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাঁদের জন্য এটি খুবই সহজ। ওএসএক্স অপারেটিং সিস্টেমে ইন্টারনেট শেয়ার করার প্রক্রিয়াটি কয়েক ক্লিকেই করা যায়। তবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য একটু বেশি খাটনি করতে হয়। উইন্ডোজের বিল্টইন অপশন সব সময় ঠিকমতো কাজ করে না এবং সেটআপ করাও বেশ জটিল।
উইন্ডোজ ৭, ৮ ও ৮.১ সংস্করণে ইন্টারনেট শেয়ার
বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যার সাহায্যে খুব সহজেই আপনার যন্ত্রকে ওয়াই-ফাই হটস্পট বানিয়ে ফেলতে পারেন। এ ধরনের কোনো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার আগে উইন্ডোজে বিল্ট ইন ইন্টারনেট শেয়ারিং সম্পর্কে জানার জন্য আপনি মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন। বিল্ট ইন শেয়ারিং থেকে ইন্টারনেট শেয়ার করার অভিজ্ঞতা যদি ভালো হয়, তবে থার্ড পার্টির কোনো অ্যাপ না ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা উইন্ডোজের জন্য ‘কানেকটিফাই’ ও ‘ভারচুয়াল রাউটার প্লাস’ নামের দুটি জনপ্রিয় অ্যাপ পরীক্ষা করে দেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, ‘ভারচুয়াল রাউটার প্লাস’ অ্যাপ্লিকেশনটি তাদের খুশি করতে পারেনি। উইন্ডোজের অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার এই অ্যাপটিকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করে। কম্পিউটারকে ওয়াই-ফাই হটস্পট হিসেবে ব্যবহার করতে কানেকটিফাই একটি নির্ভরযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন। তবে এই অ্যাপ ব্যবহার করে পিসিকে ওয়াই-ফাই হটস্পট বানাতে হলে উইন্ডোজ পিসিতে ওয়াই-ফাই অ্যাডাপ্টর বা বিল্ট ইন ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকতে হবে। আপনার পিসিতে ওয়াই-ফাই না থাকলে তখন ইউএসবির মাধ্যমে সংযোগ পাওয়া যায় এমন যন্ত্রের কথা ভাবতে হবে।
উইন্ডোজনির্ভর যন্ত্রকে ওয়াই-ফাই বানানোর ধাপ
১. কানেকটিফাই অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টল হয়ে গেলে পিসি রিস্টার্ট দিতে হবে।
২. রিস্টার্ট হয়ে গেলে ইন্টারনেট সংযোগ চালু আছে কি না, পরীক্ষা করুন। ইন্টারনেট চালু থাকলে কানেকটিফাই হটস্পট অ্যাপটি চালু করুন।
৩. অ্যাপে দুটি ট্যাব দেখতে পাবেন একটি হচ্ছে সেটিংস ও অপরটি ক্লায়েন্টস। সেটিংস ট্যাবে গিয়ে এর অধীনে ‘ক্রিয়েট এ...’ ওয়াই-ফাই হটস্পটে ক্লিক করুন।
৪. ইন্টারনেট টু শেয়ারের অধীনে আপনি একটি ড্রপ ডাউন মেনু পাবেন। এখান থেকে যে সংযোগটি শেয়ার করতে চান তা নির্বাচন করুন। অ্যাপটি তারবিহীন ও তারযুক্ত উভয় সংযোগেই কাজ করে।
৫. এর নিচে গেলে আরও কয়েকটি অপশন চোখে পড়বে। ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড তৈরির সুবিধা পাওয়া যাবে। স্টার্ট হটস্পট ক্লিক করলেই তা চালু হয়ে যাবে।
আপনাকে এটুকু করলেই চলবে। এখন অন্যান্য যন্ত্র কানেকটিফাই মি নামে একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখতে পারবে। পাসওয়ার্ড দিয়ে এই নেটওয়ার্ক শেয়ার করা যাবে।
অসুবিধা
কানেকটিফাই অ্যাপটি ব্যবহার করতে অর্থ খরচ করতে হয়। তবে এর একটি বিনা মূল্যের সংস্করণও রয়েছে। বিনা মূল্যের সংস্করণটি ব্যবহার করে ইন্টারনেট হটস্পট তৈরি করার বড় অসুবিধা হচ্ছে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পপ-আপের মাধ্যমে প্রো-সংস্করণটি কেনার জন্য বলে। বিনা মূল্যের সংস্করণ ব্যবহার করতে আবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা লাগবে।
ওএস এক্সে ইন্টারনেট শেয়ারিং
ম্যাক ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই ইন্টারনেট শেয়ার করতে পারেন। ম্যাকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে নিচের প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই চলবে।
১. সিস্টেম প্রেফারেন্স চালু করে শেয়ারিংয়ে যান এবং ইন্টারনেট শেয়ারিং নির্বাচন করুন।
২. ডানদিকে ড্রপ ডাউন মেনুটি শেয়ার ইয়োর কানেকশন ফ্রমের পাশের ড্রপ ডাইন মেনুটি বড় করে নিয়ে আপনার যে সংযোগটি শেয়ার করতে চান তা নির্বাচন করুন। আপনি ইথারনেট, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এমনকি আইফোন ইউএসবি সংযোগও শেয়ার করতে পারবেন। আপনি যদি আইম্যাক, ম্যাকপ্রো ও ম্যাকবুক প্রোতে তারযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন আপনি ইথারনেট নির্বাচন করে দেবেন। আপনি যদি ম্যাকবুক এয়ারে এক্সটার্নাল ইথারনেট অ্যাডাপ্টর ব্যবহার করেন আপনি ইউএসবি ইথারনেট বা থান্ডারবোল্ট ইথারনেট নির্বাচন করবেন। আপনি কী ধরনের ডংগল (সাধারণত ইউএসবি) ব্যবহার করেন তার ওপর এটা নির্ভর করে।
৩. এর নিচেই ‘টু কম্পিউটারস ইউজিং’-এর পাশে একটি বক্স রয়েছে, সেখানে ওয়াই-ফাই নির্বাচন করে দিতে হবে।
৪. এর নিচে রয়েছে ওয়াই-ফাই অপশন। এখান থেকে নেটওয়ার্কের নাম, সিকিউরিটি টাইপ ঠিক করে দিতে হবে। সিকিউরিটি অপশনে কিছু না দেওয়ার চেয়ে একটি পাসওয়ার্ড দেওয়া ভালো। ওকে ক্লিক ক্লিক করুন।
৫. ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকলে আপনি সিস্টেম প্রেফারেন্সে গেলে ইন্টারনেট শেয়ারিং অন লেখার পাশে একটি সবুজ আইকন দেখতে পাবেন। এখন আপনি অন্য যন্ত্রেও আপনি শেয়ারড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
সূত্র - দ্বিতীয় আলো ।