এলিয়েন বলতেই আমরা বুঝি হলিউডের কোনো গ্রাফিক্স নির্ভর মুভি কিংবা বায়োজোষ্ঠদের কাছ থেকে শোনা সায়েন্স-ফিকশনের গল্প। তবে মনে মনে একটা প্রশ্ন সকলেরই জাগে তা হচ্ছে সত্যিই কি এলিয়েনের অস্তিত্ব রয়েছে? থাকলেই বা কেমন? আকারটা বোধহয় আমরা অনেকেই সায়েন্স-ফিকশনের মুভিগুলো দেখে আয়ত্ত করে নিয়েছি। কিছু মানুষ এবং সংগঠন দাবি করে পৃথিবী জুড়ে এলিয়েনের অস্তিত্বের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। আবার অনেকেই বলছে এলিয়েনের অস্তিত্ব কে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে মূলত কিছু পুঁজিবাদকে মাথায় রেখে কারণ এলিয়েনের অস্তিত্ব কে নিয়ে নির্মিত হয়েছে হলিউডের অসংখ্য ফিল্ম, সংবাদপত্রের অনেক গরম খবর, এছাড়াও আরো কত কী? তবে একটা বিষয় সবার মনেই মাথাচাড়া দেয় তা হচ্ছে আদৌ কি এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে? প্রশ্নটা আজও রহস্যজনক।
প্রথমেই জানা যাক এলিয়েন কী?
এলিয়েন বলতে বুঝায় পৃথিবীর বাইরের অর্থাৎ ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী । ইংরেজি শব্দ Alien দ্বারা বুঝায় অপরিচিত আগন্তুক। এখানে অপরিচিত আগন্তুক ব্যবহারের প্রধান কারণ হচ্ছে এটি সম্পূর্ণই ভিন্নধর্মী প্রাণী হতে পারে যা আমাদের কাছে কেবলই অপরিচিত। আজ পর্যন্ত এর দেখা কেউ পাই নি এমনকি ভবিষ্যতে পাবো কি না তা নিয়েও আমরা সন্দিহান। বিভিন্ন সিনেমাতে আমরা যে এলিয়েনের আকৃতি দেখি তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং এটি কেবলই অনুমানের উপর নির্মিত।
আমার মতে, এলিয়েন থাকা কোন অসম্ভবপর ঘটনা নয়। এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকা অবশ্যই সম্ভব। প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে এলিয়েন বলতে এখানে কি বুঝানো হচ্ছে। এলিয়েন শব্দটি শোনার পরই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসছে সেই যে দেখা হলিউডের গ্রাফিক্স নির্ভর মুভির এলিয়েনের আকৃতিগুলো। কিন্তু বাস্তবিক দিক থেকেও যে এলিয়েনের আকৃতি এমন হবে তা ধরে নেওয়াও কিন্তু ঠিক না। এলিয়েন যেকোনো আকৃতির হতে পারে এমনকি সেগুলো দেখতে কিছুটা আমাদের মতোও হতে পারে। এক কথায় বলতে গেলে এটি যেকোনো আকারেরই হতে পারে।
এর উত্তরটা আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমরা জানি, মহাবিশ্ব অসীম, এর আকার সম্পর্কে আমদের কারোরই সু-সংজ্ঞায়িত ধারনা নেই। মহাবিশ্বে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি বা তারকামন্ডল। এই বিশাল মহাবিশ্বের নিকট সৌরজগৎ অতি নগণ্য। আর এই সৌরজগতের ক্ষুদ্র একটি পরিসরে অবস্থিত আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীর ভিতরে থাকা অনেক রহস্যই এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। তাহলে পৃথিবীর বাইরের কোনো প্রাণীর থাকা বা না থাকা সম্পর্কে অবগত হওয়াটা আমাদের জন্য একটু কঠিন ব্যাপারই। আজ পর্যন্ত পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের অনেক স্থানেই প্রাণের অস্তিত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্টিফেন হকিং এবং কার্ল সেগান এর মতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
ভিনগ্রহের প্রাণী অনুসন্ধানকারীদের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন এরিক ভন দানিকেন। তিনি বিশ্বের অনেক দেশ ঘুরেছেন এবং নানান দেয়াল-চিত্র পর্যবেক্ষণ করে এলিয়েনের অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ খুঁজে বের করেছেন। এলিয়েন সম্পর্কে লিখতে বসে ছোটবেলার একটা গল্পের কথা অনেক মনে পড়ে যাচ্ছে। গল্পটা হচ্ছে আদিমকালে মানুষ যখন পাহাড় ডিঙাতে পাড়তো না তখন তারা ভাবত বোধ হয় পাহাড়ের ওপাড়ে কোন জীব নেই। কিন্তু তাদের এরূপ ধারণা সম্পূর্ণ বৃথা হলো যখন নাকি তারা পাহাড় পেরোতে সক্ষম হলো। অর্থাৎ এই কথাটির দ্বারা আমরা বুঝতে পারি এলিয়েন কিংবা ভিনগ্রহের প্রাণী থাকাটা কোনো অসম্ভবপর ঘটনা নয়। এটি কেবলমাত্র আমাদের আবিষ্কারের বাইরে।
মানবজাতি আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন। নতুন কিছু সৃষ্টির প্রতি কৌতূহল তাদের অনেক আগেই থেকে। এলিয়েনের সন্ধান করাটাও মানুষের অদম্য কৌতূহলেরই বহিঃপ্রকাশ। তাই ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য অভিযান। বিজ্ঞানীরা তাদের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাণের অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ পেয়েছে। এমনকি মঙ্গল গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ পরিলক্ষিত হয়েছে। এসকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে নানান যুক্তি-তর্ক। একাধারে বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে চালিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য অভিযান। তবে এসকল অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে কিছু প্রশ্ন এখনো মানুষকে অনবরত তাড়া করে চলছে।
বর্তমান বিশ্বের এক অন্যতম রহস্য হিসেবে এলিয়েনের ঘটনাটি জায়গা করে নিয়েছে।এছাড়াও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। আর তাদের ধারণা এলিয়েন আমাদের মাঝেই হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভিনগ্রহের প্রাণী বা ‘এলিয়েন’ আছে এবং তারা আমাদের মধ্যেই মানুষের ছদ্মবেশে হাঁটছে, চলছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাস্তবে তার প্রমাণ মিলুক বা না মিলুক অন্ততপক্ষে প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ এমনটাই বিশ্বাস করে।
তথ্যসূত্র : বিজ্ঞানবর্তিকা