আপনার মনে একবার হলেও এই প্রশ্ন জাগতে পারে যে রকেট মহাকাশে কিভাবে যায় এবং সেখান থেকে কিভাবেই বা পৃথিবীতে ফিরে আসে? ডেইলি বাংলাদেশের আজকের আয়োজনে থাকছে এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন। মহাকাশ যাত্রীরা যেটাতে করে মহাকাশে যায় সেটাকে স্পেস ক্রাফট বা মহাকাশযান বলা হয়। যদি বলা হয়, রকেট পৃথিবীতে আবার ফেরত আসে তাহলে এটা সম্পূর্ণ ভুল বলা হবে। কারণ রকেট এবং স্পেস ক্রাফট দুটোই আলাদা আলাদা জিনিস। রকেট হলো নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে অনুসরন করে যেকোনো স্যাটেলাইট বা স্পেস ক্রাফটকে মহাকাশে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আবার অন্যদিকে স্পেস ক্রাফট হলো যেটির মধ্যে মহাকাশ যাত্রীরা বসে মহাকাশে যায়।
পৃথিবী থেকে মহাকাশে সাধারণত দুই রকমভাবে যাওয়া হয়। প্রথমত হলো- যখন কোনো স্যাটেলাইট রোবটকে মহাকাশে পাঠানো হয়। তখন সেটিকে পৃথিবীতে ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় না। এর জন্য স্যাটেলাইটকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু রকেটের ব্যবহার করা হয়। এই রকেটের চারিদিকে বুস্টার লাগানো থাকে। যেটিকে এটি পৃথিবী থেকে ওপরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আস্তে আস্তে যত ওপরে উঠে যায় রকেটের সমস্ত পাঠ আলাদা হতে থাকে এবং সবশেষে থাকে শুধু স্যাটেলাইট এবং সে তার অরবিটে পরিক্রমন করতে থাকে। এই রকেটগুলো মহাকাশে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা হয়ে যায়। তার মানে এগুলো পৃথিবীতে আর ফেরত আসে না।
দ্বিতীয়ত হলো যে যন্ত্রে বসে মানুষ মহাকাশে যায় কিংবা মানুষকে স্পেসে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্পেস ক্রাফটের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্পেস ক্রাফট সাধারণত উড়োজাহাজের মতো হয়ে থাকে। যার মধ্যে মহাকাশে যাত্রীদের জন্য থাকা, ঘুমানো, খাওয়া ও পান করার সমস্ত্র ব্যবস্থা থাকে। স্পেস ক্রাফটের সামনের দিকে এর সমস্ত কন্ট্রোলিং সিস্টেম থাকে। যেখান থেকে এস্ট্রোয়েডরা বা মহাকাশচারীরা সমস্ত কিছু কন্ট্রোল করতে পারে। এই স্পেস ক্রাফটকে দুটি বুস্টার রকেট তথা একটি মেইন ইঞ্জিন রকেটের সাহায্যে যুক্ত করে দেয়া হয়। বুস্ট রকেট পৃথিবীর গ্র্যাভিটি থেকে রকেটকে উপরে তুলতে সাহায্য করে এবং যখন এর ফুয়েল শেষ হয়ে যায় তখন রকেট দুটি ইঞ্জিন থেতে আলাদা হয়ে যায়।
আবার কাজ শুরু হয় মেইন রকেটের। স্পেস ক্রাফটকে স্পেসে নিয়ে যাওয়ার পুরো দায়িত্ব থাকে এই রকেটের। যখন স্পেস ক্রাফট মহাকাশে পৌঁছে যায় তখন সময় চলে আসে মেইন রকেটকে স্পেস ক্রাফট থেকে আলাদা করার এবং এখান থেকেই শুরু হয় স্পেস ক্রাফটের যাত্রা। স্পেস ক্রাফটকে এস্ট্রোয়েডরা ঠিক ঐভাবে চলাতে পারে যেভাবে একটি উড়োজাহাজ চলে। এর মধ্যে অ্যাডভান্স টেকনোলজির সমস্ত কিছু কম্পোনেন্ট এবং মেশিন লাগানো থাকে। যার সাহায্যে মহাকাশচারীরা খুব সহজে এক্সপেরিমেন্ট এবং রিসার্চ শেষ করতে পারে।
মহাকাশ রিসার্চ শেষ হওয়ার পর এবার সময় হয় তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার। স্পেস ক্রাফটি পৃথিবীর চারেদিকে ঘুরতে থাকে এবং আস্তে আস্তে পৃথিবীর এটমোস্ফেয়ারের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে প্রবেশ করার পরে স্পেস ক্রাফটের মুখ নিচের দিকে না হয়ে একটু ওপর দিকে হয়ে থাকে। কারণ পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে প্রবেশ করার সময় স্পেস ক্রাফটকে শক্তিশালী বেল চাপের সম্মুখিন হতে হয়। বাতাসের ঘর্ষণের কারণে স্পেস ক্রাফটে আগুন লেগে যেতে পারে এবং পুড়ে যেতে পারে। যদি বিশেষ তাপ প্রতিরোধক প্রোটেকশন না থাকতো এই স্পেস ক্র্যাফটের উপর তাহলে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
যদি কোনো কারণবশত এই প্রোটেকশন ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে স্পেস ক্রাফটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে যখন স্পেস ক্রাফট পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে তখন সমান্তরাল হয়ে যায় এবং তারপর হাওয়াই জাহাজের মতো এয়ারপোর্ট রানওয়েতে ল্যান্ডিং করে।
উড়োজাহাজটি রানওয়েতে ল্যান্ডিং করার পর স্পেস ক্র্যাফটের চাকা বেরিয়ে আসে। কিন্তু এটি ল্যান্ডিং করার সময় এর ওজন অনেক বেশি হয়। সেজন্য ল্যান্ডিং করার পর এর পেছন দিক থেকে প্যারাসুট খুলে যায় এবং খুব সহজে ল্যান্ডিং করতে পারে। এভাবে মহাকাশ যাত্রীরা সুরক্ষিতভাবে পৃথিবীতে পৌঁছে যায়।
এই স্পেস ক্রাফট রিইউজেবল হয়। যার মানে এটি আবার ব্যবহার করা যায়। স্পেস ক্রাফট আবার মহাকাশে পাঠানোর জন্য এর সঙ্গে দুটি বুস্ট রকেট এবং একটি মেইন রকেট লাগিয়ে দেয়া হয়। এবার আপনার মনে একটা প্রশ্ন অবশ্যই জাগতে পারে, এই স্পেস ক্রাফটে এতো ফুয়েল কোথায় থেকে আসে যে স্পেসে ট্রাভেল করতে পারে এবং পৃথিবীতে আবার ফিরেও আসতে পারে। তো আপনার এসকল প্রশ্নের উত্তরটা হলো ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন।
ইন্টারন্যাশাল স্পেস স্টেশনে বিজ্ঞানের মাধ্যমে মহাকাশ যাত্রীদের জন্য সময় সময় খাবার, দরকারি মেশিন এবং ফুয়েল পাঠানো হয় এবং ওখান থেকে মহাকাশ যাত্রীরা সমস্ত দরকারি জিনিসপত্র পেয়ে যায়। এ পর্যন্ত আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন স্পেস থেকে রকেট নয় বরং স্পেস ক্রাফট পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং মহাকাশ যাত্রীরা স্পেস ক্রাফটের মাধ্যমে মহাকাশে যায়। কিন্তু কিছুদিন আগে একটি নিউজ আর্টিকেল থেকে জানা গেছে কয়েক মাস আগে একটি প্রাইভেট কোম্পানি স্পেস এক্স এর মালিক এলন মাস্ক বলেন তাদের বিজ্ঞানিরা পুনরায় ব্যভার করা যায় এমন রকেট বানিয়ে ফেলেছে। তার মানে এখন থেকে স্যাটেলাইটকে মহাকাশের অরবিটে রেখে আসার পর রকেট পৃথিবীতে আবার ফিরে আসতে পারবে কিন্তু এই কাজটি এখনো শেষ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।
ক্রেডিট: ডেইলি বাংলাদেশ