অ্যান্টিবায়োটিক সাতদিন খেতে হয় কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
399 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (141,850 পয়েন্ট)

2 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর

জীবনে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খায়নি, এমন মানুষ খুব কম আছে। খানিক পড়ালেখা জানা দেশি লোকজনের কাছে এই অ্যান্টিবায়োটিক একটি কমন ওষুধ। আমাদের দেশের মতো এরকম অনেক উন্নয়নশীল দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ছড়াছড়ি। আবার এমন অপব্যবহারের ফলাফল—বিশ্ব জুড়ে অ্যান্টিবায়োটিকের উলটো ফল দেখা দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট। যে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে জীবাণুর বিরুদ্ধে, সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণু উলটো প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া আছে। আমাদের শরীরের ভেতর এবং বাহিরে এমন হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া আছে। কিন্তু সব ব্যাকটেরিয়া আমাদের ক্ষতি করে না। কেবল কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া খাবার, পানি, পরিবেশ বা কোনোভাবে শরীরে ঢুকলে তখন সমস্যা করে। ব্যাকটেরিয়ার কারণে সমস্যাগুলোকে ইনফেকশন ডিজিজ বলে।

অ্যান্টিবায়োটিক একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া দমনের মেডিসিন। শরীরে আমাদের হাজার রকমের ইনফেকশন জাতীয় সমস্যা হয়। এই ইনফেকশন হওয়ার প্রধান কারণ ব্যাকটেরিয়া। আর এই ব্যাকটেরিয়া মারতে অ্যান্টিবায়োটিক। মনে রাখা দরকার, অ্যান্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, অ্যান্টিবায়োটিক কখনো ভাইরাসের বিপক্ষে কাজ করে না। ভাইরাস দমনে যে মেডিসিন ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে অ্যান্টিভাইরাল।

বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০ বছর মাত্র। এর প্রধান কারণ ছিল হাজার হাজার রোগজীবাণুর ইনফেকশনে মানুষ সহজে মারা যেত। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট, ফাঙ্গাস এসব। এদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যেত। যেমন : যক্ষ্মা, কলেরা, প্লেগ, সিফিলিস। আগে মানুষ এইসব রোগেই মারা যেত বেশি। ৩ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশর, খ্রিষ্টপূর্ব গ্রিক, রোমানরা মাঝেমধ্যে কিছু কিছু রোগে রুটি বা বাসি খাবারের মধ্যে জন্ম নেওয়া মোল্ড খেত। কারণ, তারা জানত যে ঐসব খেলে কিছু কিছু রোগ ভালো হয়ে যেত। এই মোল্ড একধরনের ফাঙ্গাস। 

১৬৭৪ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ জীবাণু সম্পর্কে কিছুই জানত না ডাচ বিজ্ঞানী লিউয়েন হুক ঐ সময়ে প্রথম মাইক্রোস্কোপের নিচে ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। তারপর অনেক বছর কেটে গেলেও ব্যাকটেরিয়াগুলো যে ইনফেকশন ঘটাত, তার কোন চিকিত্সা ব্যবস্থা জানত না। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ডাক্তার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এমন এক ধরনের মোল্ড থেকে প্রথম একটি কেমিক্যাল বের করে আনেন, যা ব্যাকটেরিয়া দমনে কাজ করে। সেটি ছিল পেনিসিলিন। ফ্লেমিংয়ের সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল অ্যান্টিবায়োটিকের প্রথম আবিষ্কার।

পেনিসিলিনের সেই আবিষ্কারের পর গত ৯০ বছরে বিজ্ঞানীরা ১০০-এর বেশি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন একুশ শতকের এই সময় পর্যন্ত। আর এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের জীবনকে পুরো পরিবর্তন করে দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের জাদু মানুষকে হাজারো ইনফেকশন থেকে নিত্য বাঁচিয়ে দিল। ডাক্তারদের কাছে ইনফেকশনের কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন যে অমুক অ্যান্টিবায়োটিক সাত দিন খাবেন। কেন এমনটি বলে!

সব মেডিসিন শরীরে কীভাবে কাজ করে তার কিছু নিয়ম আছে। তেমনি অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু নিয়ম আছে। সমস্যার ধরন বুঝে পাঁচ দিন, সাত দিন, ১০ দিন, বারো দিন, সর্বোচ্চ ১৪ দিন বা দুই সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক দেন চিকিত্সকরা। সঙ্গে কয়টি খাবেন, কখন খাবেন, কীভাবে খাবেন। ওষুধবিজ্ঞানে একটি কথা আছে, ‘যে কোনো ওষুধ একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ওষুধ, তার বেশি হয়ে গেলে তা বিষ।’

অ্যান্টিবায়োটিক একটি রাসায়নিক উপাদান, কৃত্রিমভাবে ল্যাবে বানানো হয়। এটি বানানোর সময় পরীক্ষা করা হয় মিনিমাম কতদিন নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়াকে পূর্ণভাবে মেরে ফেলতে পারে, শরীরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে, তার চেয়ে বেশি কতটুকু কত দিন খেলে শরীরের উলটো ক্ষতি করা শুরু করে। ওষুধবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে অপটিমাল ডোজ। এই মিনিমাম এবং ম্যাক্সিমাম ডোজের সীমারেখার মধ্যে ওষুধটি খেলে তার ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, তার চেয়ে কম খেলে ব্যাকটেরিয়া না মরে গিয়ে শরীরে থেকে যেতে পারে, বেশি খেলে শরীরে রাসায়নিক উপাদানটি অতিরিক্ত জমা হয়ে কিডনি, লিভার, পাকস্থলীসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করতে পারে, বেশি সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। তাই চিকিত্সকরা একটি আপাত সীমারেখার মধ্যে পাঁচ দিন বা সাত দিন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বলেন, যাতে এই সময়ের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া মরে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া মারতে গিয়ে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে শরীরে ক্ষতির মাত্রার যাতে বেড়ে না যায়।

শুরুতেই বলেছিলাম, বিশ্ব জুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট একটি সমস্যা। এখন অনেক ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না অনেকের। এর কারণ হলো—অনেকে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এই নির্দিষ্ট মাত্রার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধটি খান না। নিউমোনিয়া হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করলেন, তিন দিন খেয়ে ভালো ফিল করায় তিনি ঠিক করলেন আর খাবেন না। আপাত উপসর্গ কমে গেলেও আসলে তিনি তখন ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হননি। 

অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া স্টপ করে দেওয়ার ফলে শরীরে চুপ করে বসে থাকা বাকি ব্যাকটেরিয়াগুলো ধীরে ধীরে রক্তে থাকা ওষুধটির বিরুদ্ধে নিজের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে। পরবর্তী সময়ে কোনো সময় একই জাতের ব্যাকটেরিয়া শরীরে ঢুকলে নতুন এবং পুরোনো ব্যাকটেরিয়া মিলে নতুন করে আরও সাঁড়াশিভাবে শরীরকে ওষুধটি তার কার্যক্ষমতা হারায়, ব্যাকটেরিয়া প্রতি ।

ক্রেডিট : সালমা আঁখি | দৈনিক সময়ের সংগ্রাম

0 টি ভোট
করেছেন (180 পয়েন্ট)
অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরের ব্যাক্টেরিয়াগুলি কে মেরে দেয়, তাই ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশন হলে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাই। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স কিছু নির্দিষ্ট দিনের জন্য হয় (৫ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন) কেন না পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ওই কদিনের জন্যে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তবেই সমস্ত ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল হয়।

 

যদি আমরা আগে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দি, তাহলে সব ব্যাক্টেরিয়া মরেনা, কিছু শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সংখ্যায় কমে যাওয়ার জন্যে তারা আর জ্বর বা পেট খারাপ বাধাতে পারেনা, এবং আমরা আপাতঃ ভাবে সুস্থ বোধ করি।

 

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা লুকিয়ে বসে থাকার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকটিকে পরীক্ষা করে তার থেকে বাঁচার রাস্তা খোঁজে। নানা ক্ষেত্রে জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে তারা সেই রাস্তা বের ও করে নেয়। অতএব আবার সংখ্যায় বেড়ে কিছুদিন বাদে তারা যখন আত্মপ্রকাশ করে, এবং আমরা আবার সেই আগের অ্যান্টিবায়োটিক খাই, এবার সেই অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের রক্ষা করতে পারেনা, কারণ ব্যাক্টেরিয়া ওর থেকে বাঁচার রাস্তা আবিষ্কার করে ফেলে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে।

 

এই ব্যাক্টেরিয়া আবার আমাদের থেকে অন্যদের সংক্রামিত হবে, এবং কোনো ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকটি আর কাজ করবেনা। এর প্রধান কারণ হলো ভুল ডোজে ওষুধ খাওয়া বা কমদিন খেয়ে বন্ধ করে দেওয়া। এখনকার চিকিৎসা জগতে এটি একটি মস্ত বড় সমস্যা, কেন না যতগুলি অ্যান্টিবায়োটিকে রেজিস্ট্যান্স দেখা দিয়েছে, ততগুলি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে উঠতে পারেননি। ফলে বেশ কিছু রোগ যা আগে সহজে একটি ওষুধেই সেরে যেত, এখন খুবই কঠিন রোগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 

আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তার না দেখিয়ে খাবেননা, এবং শুরু করলে পুরো কোর্স শেষ করবেন। এই তথ্যটি আশেপাশে সবাই কে প্রচার করুন, এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কে প্রতিরোধ করুন।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
3 টি উত্তর 285 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 192 বার দেখা হয়েছে
31 অগাস্ট 2022 "প্রযুক্তি" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Maksud (3,610 পয়েন্ট)

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

277,753 জন সদস্য

56 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 56 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. YITTawnya195

    100 পয়েন্ট

  2. ECQFlossie56

    100 পয়েন্ট

  3. TaniaMcIlvee

    100 পয়েন্ট

  4. VelmaMcEwan7

    100 পয়েন্ট

  5. OrvalStarnes

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...