রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ডিপ্রেশন, আবেগ, দুঃখ বাড়তে থাকে। দিনে বেলা আবার সব স্বাভাবিক। এমনটা হয়েছে আপনার সাথে?
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা শব্দটির সাথে বর্তমান যুগের মানুষ পরিচিত। ডিপ্রেশন ধরনের মানসিক ব্যাধি যা মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিষন্নতা যেকোন বয়সের মানুষের মাঝে যেকোন সময় হতে পারে। অনেক মানুষের রাত বাড়ার সাথে সাথে ডিপ্রেশন, আবেগ এর মাত্রা বাড়তে থাকে। এর ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, বিচ্ছিন্নতা, হতাশা অনুভব হতে থাকে। অনেক মানুষ আবার সকালবেলা এমন অনুভব করেন। একে বলে Diurnal Mood Variation। রাতে ডিপ্রেশন অনুভব করার বেশ কিছু কারণ আছে। যেমন:-
▪️ডিপ্রেশনে ভুগা মানুষ প্রায়ই অতীতের স্মৃতি, ঘটনা আকড়ে ধরে থাকেন। নানাভাবে কল্পনা করে নিজের মতো সেসব স্মৃতি নিয়ে ভাবেন। একে রুমিনেশন বলে। রাতে ডিপ্রেশন অনুভব করার মুখ্য কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি। মানুষ যখন একা থাকে তখন রুমিনেশন সবচেয়ে বেশি হতে পারে, আর মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতেই একা থাকে। সাইন্স বী
▪️রাতে বেলা আলোর প্রকটতা ও ডিপ্রেশন এর মাঝে সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপাক গবেষণা হয়েছে। আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিক এক প্রতিবেদনে রাতে ঘুমের সময় মৃদু আলো ও ডিপ্রেশন এর মাঝে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়েছে। ঘুমের সময় কম পরিমাণ আলোও স্লিপ সাইকেলে হস্তক্ষেপ করে, এর জন্য মানুষের মুডও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
▪️সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে ডিপ্রেশন এর মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে এবং মুড ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ হচ্ছে, দিনে জেগে থাকা ও রাতে ঘুমানো। রাতে ঘুম কম হলে বা রাত জেগে কাজ করলে দেহঘড়ির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর ফলে ডিপ্রেশনও বাড়তে থাকে। সাইন্স বী
দিনের বেলা মানুষ নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন ডিপ্রেশন অনুভব না হওয়াই স্বাভাবিক। রাতে বেশিরভাগ সময়ই মানুষ একা থাকেন, তখন নানা ধরনের চিন্তায় ডিপ্রেশন অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া অনেকেই রাতে মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মোবাইল ফোনের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন দমিয়ে রাখে। এই হরমোন মানুষের ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাতে মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করলে সার্কাডিয়ান রিদমে ব্যাঘাত ঘটে, এর ফলে মুড ডিজঅর্ডার হতে পারে। এবার রাতে ডিপ্রেশন, আবেগ কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক:-
রাতে ডিপ্রেশন অনুভব করার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নিদ্রাহীনতা বা ইনসোমনিয়া। স্বাভাবিক ঘুমের জন্য বিছানায় যাবার আগে আপনার দেহ ও মনকে চাপমুক্ত করুন। এর জন্য ঘুমানোর আগে বই পড়া, মেডিটেশন করা, ডায়েরি লিখা, হালকা সুরের গান শুনা যেতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে থেকে সম্ভব হলে ফোন, ল্যাপটপ দূরে সরিয়ে রাখুন। অনেকেরই সন্ধ্যাবেলা বা রাতে চা, কফি জাতীয় উত্তেজক পানীয় পান করার অভ্যাস আছে। এর জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ডিপ্রেশন অনুভব হয়। সন্ধ্যা বা রাতে কোন উত্তেজক পানীয় পান করা যাবেনা। মন ও দেহ সতেজ রাখতে দিনে ব্যায়াম করুন, খাদ্যাভ্যাস এর দিকে নজর দিন, জীবনকে উপভোগ করুন, পুরনো স্মৃতি মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন, নিজের জীবনের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করুন, নতুন করে বাঁচতে শিখুন।
মনে রাখুন: "It’s not whether you win or lose, it’s all about how you play the game of life."
© নিশাত তাসনিম (সাইন্স বী)