সাধারণত যখন কোনও প্যাথোজেন (যেমন, রাইনো ভাইরাস) শরীরের দখল নিতে চায় তখন আমাদের জ্বর আসে। শরীরের তাপমাত্রা যখন ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা ৯৮-১০০ ডিগ্রি ফারেনহিটের বেশি হয়ে যায় তখন তাকে জ্বর আসা বলে। এখন এমন মনে হতে পারে যে প্যাথোজেনের কারণেই জ্বর আসে। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক উল্টো, অর্থাৎ প্যাথোজেন নয় শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা বা ইমিউনিটি সিস্টেমের জন্যই জ্বর হয়। আসলে যখন প্যাথোজেন শরীরকে সংক্রমিত করতে সচেষ্ট হয় তখন প্রতিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় আমাদের শরীরের সুরক্ষা তন্ত্র।
দুই ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে-
১) ইননেট ইমিউনিটি- জন্ম থেকে যে সুরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের শরীরে আছে।
২) অ্যাকুয়ার্ড ইমিউনিটি- অধিত জীবন ধরে যে সুরক্ষা অর্জন করা হয়েছে।
আমাদের শরীরে যে কোনও জীবানুর আক্রমণ ঘটলে ইননেট ইমিউনিটি মূলত চার রকমের প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরা হল-
অ্যানাটোমিক্যাল বেরিয়ার বা শারীরসংস্থানগত বাধা- আমাদের ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেন এই বাধা দান করে।
ফিজিওলজিক্যাল বেরিয়ার বা শারীরিক বাধা- শারীরিক কিছু শর্তাবলী এর সঙ্গে জড়িত।
ফ্যাগোসাইটিক বেরিয়ার- এই বাধা আক্রমণকারী জীবাণুর ফ্যাগোসাইটোসিস ঘটায়।
ইনফ্ল্যামেটরি বেরিয়ার বা প্রদাহজনিত বাধা- চূড়ান্ত অবস্থায় এই বাধার কারমে সংক্রমিত বা আহত অংশে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
শারীরিক বাধার কারণে জ্বর বা পাইরেক্সিয়া ঘটে। এই বাধা শরীরের উত্তাপ, pH এবং শারীরিক ক্ষরণ ঘটিয়ে আক্রমণকারী প্যাথোজেনের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করে। কারণ উচ্চ তাপমাত্রায় তারা বংশবিস্তার করতে পারে না। মনে রাখতে হবে, যখনই কোনও প্যাথোজেন আমাদেরকে আক্রমণ করে আমাদের শরীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমাদের রক্তে পাইরোজেন নামে থাকা রাসায়নিকটি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেপথ্য কারিগর। এরা শরীরের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রক হাইপোথ্যালামাসকে উদ্দীপ্ত করে। সুতরাং, জ্বর আসলে ক্ষতিকারক জীবাণু রোধে আমাদের শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থার একটি কৌশল।