হিউম্যান (মানব) ক্লোনিং কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+3 টি ভোট
1,088 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (71,130 পয়েন্ট)

3 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (71,130 পয়েন্ট)

ক্লোনিং

ক্লোনিং বলতে সাধারণত অনুরূপভাবে যেকোনো কিছুর অনুলিপি তৈরি করাকে বোঝায় । বায়োটেকনোলজির বা জীবপ্রযুক্তির ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া , যার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো রকম যৌন প্রক্রিয়া ব্যতীত জেনেটিক্যালি সদৃশ বিশেষ কোষ, অঙ্গ , ব্যাকটেরিয়া , উদ্ভিদ অথবা প্রাণী তৈরি করা । আর জেনেটিক্স বাহ মলিকিউলার বায়োলজির ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট জিন অথবা জেনেটিক অংশকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় বর্ধিত করা । এই পর্বে ক্লোনিং বলতে আমরা কেবল জেনেটিক্যালি একই রকম কোন বিশেষ কোষ , অঙ্গ , ব্যাকটেরিয়া , উদ্ভিদ অথবা প্রাণী বহু সংখ্যায় তৈরি করাই বুঝাবো ।

ক্লোনিং নিয়ে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে । তাদের বিশ্বাস, ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে দেখতে হুবহু একই রকম কোন প্রাণী তৈরি করা সম্ভব। তাই অনেকে এটাও ভাবেন, এই প্রযুক্তির সহায়তার বুঝি সত্যি সত্যি আরেকজন আইনস্টাইন বা নিউটন বানিয়ে ফেলা সম্ভব । কিন্তু সবসময় এটি সত্যি হবে এমনটি ভাবা ঠিক নয় । কারণ কোনো জীবের জিনের বাহ্যিক প্রকাশ নিজ জিনের বহির্ভূত অনেক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল ।

 

এগুলো পড়েছেন ?

 

এছাড়াও উদ্ভিদ অথবা প্রাণীর ক্রমবিকাশ , মন ও মানসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি তার চারপাশে বিদ্যমান পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলেই তৈরি হয় । তাছাড়া জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল একটি সর্বদা বিরাজমান প্রক্রিয়া । এর ফলে যেকোনো সময় যেকোনো জিনের একটি পরিবর্তন ফলে বাহ্যিক অবস্থার বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন সৃষ্টি হতে পারে ।

সহজ কথায় একটি উদাহরণ দেওয়া যাক । ধরুন, আপনি আপনার একটি ক্লোন বানাতে ইচ্ছুক । যদি পুরো প্রক্রিয়াটি সফল হয় তাহলে আপনার ক্লোনটি আপনার মতো পুরুষ অথবা নারী হয়েই জন্মাবে এবং একটি নির্দিষ্ট বয়সে আপনিও আপনার ক্লোন দেখতে অনেকটাই একইরকম হবেন। আর আপনার ডিএনএ এবং আপনার থেকে সৃষ্ট ক্লোনের ডিএনএ ও দেখতে হবে অবিকল একই ।

যেহেতু আপনিও আপনার ক্লোন একই মায়ের জরায়ুতে বড় হয়ে ওঠেন নাই এবং দুইজন মায়ের গর্ভকালীন খাদ্যাভাসের ও শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলি সম্পূর্ণ আলাদা, তাই দুজনের মধ্যে বাহ্যিকভাবে কর্মকুশলতাও হবে সম্পূর্ণ আলাদা । সুতরাং আমরা খুব সহজেই একটি অনুসিদ্ধান্তে আসতে পারি এই বলে যে ,জন্ম যদিও দুজনের একই ডিএনএ’র সমন্বয়ে, তথ্যাপি আপনার ও তার ক্রমবিকাশ ও মৃত্যু হবে অবধারিতভাবে দুটো ভিন্ন পথে । উল্লেখ্য, এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর নিউক্লিয়ার ডিএনএ দেখতে হুবহু পিতার মতো হলেও মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ মায়ের কাছ থেকেই আসে ।


মানব ক্লোনিং

মানব ক্লোনিং হচ্ছে অনুরূপ জেনেটিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আরেকজন মানুষ তৈরী করা । অন্য কথায় কৃত্রিমভাবে মানুষ তৈরির নামই মানব ক্লোনিং। এই প্রক্রিয়ার সফল প্রয়োগে মারা যাওয়া কোন মানুষের ডিএনএ ব্যবহার করে তারই অনুরূপ আরেকজন মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভব। আর একইরকম জমজ সন্তান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট মানব ক্লোন , যার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানী মহলে তিন ধরণের মানব ক্লোনিং বেশি আলোচনায় এসেছে ।


প্রজনন ক্লোনিং

প্রজনন ক্লোনিং হচ্ছে সম্পূর্ণরূপ নতুন ক্লোন মানব তৈরি করার পদ্ধতি । এই ব্যবস্থাটি বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে । বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বৈজ্ঞানিক সংস্থা এ পদ্ধতির বিরোধিতায় সক্রিয়। অনেক মহল আইন করে মানব প্রজনন ক্লোনিং বন্ধের পক্ষপাতী । নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি বন্ধের সুপারিশ করেছেন AAAS । অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নিমিত্তে বাণিজ্যিকভাবে ক্লোন মানুষ তৈরী করে তা বিক্রি অথবা দান করার ব্যাপারে সাংঘাতিক নৈতিক ও মানবিক বির্পযয়ের আশঙ্কার কথা উচ্চারিত হয়েছে । এসব সমালোচনা এড়ানোর জন্য অনেকেই আলাদা করে কেবল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে বিজ্ঞানীরা অনেকদূর এগিয়েছেন ।

 

এগুলো পড়েছেন ?

 

উপরন্ত মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যকোনো প্রাণির ভেতর ক্লোন করে সেটা মানুষের কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা তা যাচাই করে দেখছেন তারা ।

থেরাপিউটিক ক্লোনিং বা রিসার্চ ক্লোনিংচিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্টেমসেল তৈরির কাজে এই পদ্ধতি ব্যাপৃত। যেহেতু চিকিৎসাক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটির অপার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলেছে । এই প্রযুক্তির পক্ষ অবলম্বন করে AAAS সহায়তার সুপারিশ করেছে । এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিরাট বিপ্লবের সূচনা হবে বলে অনেকে আশা করেছে ।

প্রতিস্থাপন ক্লোনিং
এই প্রক্রিয়াটি এখন পর্যন্ত তাত্ত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ । এটি মুলত উপরোক্ত উভয় পদ্ধতির সমন্বিত একটি ধারণা। ধারণা করা হচ্ছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শরীরের কোনো অংশকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব । এছাড়া এই প্রক্রিয়ার সাথে ব্রেইনের কিছু অংশের প্রতিস্থাপনও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । 

0 টি ভোট
করেছেন (810 পয়েন্ট)
ক্লোনিং বলতে সাধারণত অনুরুপভাবে যে কোন কিছুর অনুলিপি তৈরি করাকে বোঝায়।বায়োটেকনোলজি বা জীব প্রযুক্তির ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন রকম যৌন প্রক্রিয়া ছাড়াই জেনিটিক্যালি সদৃশ বিশেষ কোষ,অঙ্গ,ব্যাকটেরিয়া,উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা।আর জেনেটিক্স বা মলিকিউলার ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ঠ জিন অথবা জেনেটিক অংশকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে(PCR/পলিমারেজ রি-একশন চেইন প্লাজমিড'র সহায়তায়)অধিক সংখ্যায় বর্ধিত করা।

ক্লোনিং নিয়ে অনেকের মধ্য ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে।তাদের বিশ্বাস,ক্লোনিং এর মাধ্যমে দেখতে একই রকম হুবহু প্রাণী তৈরি করা সম্ভব।তাই অনেকে এটাও ভাবেন এই প্রযুক্রির সহায়তায় বুঝি সত্যি সত্যি আরেকজন আইনস্টাইন বা নিউটন বানিয়ে ফেলা সম্বভ।কিন্তু সবসময় এটি সত্যি হবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়।কারণ কোন জীবের জিনের বাহ্যিক প্রকাশ নিজ জিনের বহির্ভুত অনেক উপাদানের উপর(যেমনঃমায়ের জরায়ু ও তার রাসায়নিক পরিবেশ,খাদ্যভাস,পরিবেশগত পরিবর্তন ইত্যাদি)নির্ভরশীল।

সহজ কথায় একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।ধরুন,আপনি আপনার একটি ক্লোন বানাতে ইচ্ছুক।যদি পুরো প্রক্রিয়াটি সফল হয় তাহলে আপনার ক্লোনটা আপনার মতো পুরুষ অথবা নারী হয়েই জন্মাবে এবং নির্দিষ্ঠ বয়সে আপনি এবং আপনার ক্লোনটা দেখতে অনেকটা একই রকম হবেন।আর আপনার ডিএনএ ও আপনার থেকে সৃষ্ট ডিএনএ দেখতে হবে অবিকল একই।যেহেতু আপনি এবং আপনার ক্লোন একই মায়ের জরায়ুতে বড় হয়ে উঠেন নাই এবং দুজনের মায়ের গর্ভকালীন খাদ্যভাস ও শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলি সম্পুর্ণ আলাদা।আর আপনার মানসিকতা,বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মকুশলতাও হবে সম্পূর্ণ আলাদা।সুতরাং এথেকে সহজেই বোঝা যায়,জন্ম যদিও দুজনের একই ডিএনএ থেকে,তথাপি আপনার ও তার ক্রমবিকাশ ও মৃত্যু হবে অবধারিত দুটি ভিন্ন পথে।উল্লেখ ,এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর নিউক্লিয়ার ডিএনএ মায়ের কাছ থেকেই আসে।

মানব ক্লোনিং প্রক্রিয়া সফল প্রয়োগে মারা যাওয়া কোন মানুষের ডিএনএ ব্যাবহার করে তারই অনুরুপ আরেকজন মানুষ সৃষ্টি করা সম্বভ।একই রকম জমজ সন্তান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট মানব ক্লোন,যার সাথে আমরা সবাই কম বেশি জড়িত।এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানী মহলে তিন ধরনের মানব ক্লোনিং বেশ আলোচনায় এসেছে।

প্রজনন ক্লোনিংঃ প্রজনন ক্লোনিং হচ্ছে সম্পুর্ণরুপে নতুন ক্লোন মানব তৈরি করার পদ্ধতি।এই ব্যবস্হাটি বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান,ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বৈজ্ঞানিক সংস্থা এ পদ্ধতীর বিরোধী।অনেক প্রতিষ্ঠান আইন করে মানব প্রজনন ক্লোনিং এর পক্ষপাতি।American institutions of biological science নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি বন্ধের সুপারিশ করেছে।

থেরাপিউটিক ক্লোনিং বা রিসার্চ ক্লোনিংঃ চিকিৎস্যার উদ্দেশ্যে স্টেমসেল তৈরির কাজে এই পদ্ধতি ব্যাপৃত।যেহেতু চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির অপার সম্ভাবনা রয়েছে ,তাই এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে।এই পদ্ধতির পক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানই সুপারিশ করেছে।

প্রতিস্হাপন ক্লোনিংঃ এই প্রক্রিয়াটি এখন পর্যন্ত তাত্ত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।এটি মুলত উভয় পদ্ধতির সমন্বিত একটি ধারণা।ধারণা করা হচ্ছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ শরীরের কোন অংশকে প্রতিস্হাপনের মাধ্যমে পুনুরায় স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।এছাড়া এই প্রক্রিয়ার সাথে ব্রেইনের কিছু অংশের প্রতিস্হাপনও আঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত।

মানব ক্লোনিং এর ইতিহাসঃ

এবার দেখা যাক মানব ক্লোনিং এর অগ্রগতি কতটুকু।2002 খ্রিস্টাব্দের 27 ডিসেম্বর রেলিয়ান নামক একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী কতৃর্ক প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ড. ব্রিজিত বোইসেলিয়ার পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানব শিশু জন্মের ঘোষণা দেন যুক্তরাস্ট্রের হলিউড থেকে।পৃথিবীর এই প্রথম ক্লোন মানব কন্যার নাম দেন ইভ ।এই কন্যা শিশুটি 2002 সালের 26 ডিসেম্বর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হয়।শিশুটির মা একত্রিশ বছর বয়সী একজন আমেরিকান।

এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানী হুয়াং উৎসুক 2004 খ্রিস্টাব্দে মানব ভ্রুণকোষ ক্লোনের ঘোঘণা দিয়ে সারাবিশ্বে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন।যা পরবর্তী সময়ে মিথ্যা প্রমানিত হয়।ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেমাজেন ইনকর্পোরেশন নামে বায়োটেক কোম্পানিতে কর্মরত ড.স্যামুয়েল উড ও এন্ড্রু ফ্রেন্জ 2008 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পাচঁ টি সক্রিয় মানব ভ্রুণ তৈরির ঘোষণা দেন।এই প্রক্রিয়ায় বয়স্ক মানুষের ত্বকের কোষ হতে ডিএনএ সংগ্রহ করে তা অন্য একজনের ডিম্বানুতে প্রবিষ্ট করাবো হয়।যদিও‌এটা পরিস্কার নয় যে উৎপন্ন ভ্রুণগুলো পরবর্তী পর্যায়ে বিকাশে সক্ষম ছিল কি না।আইনগত কারনে পরে সব ভ্রণকেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।

এখন অধিকাংশ দেশেই মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।জাতিসংঘ 12 ডিসেম্বর 2001 খ্রিষ্টাব্দে রি প্রোডাক্টিভ ক্লোনিং এর বিরুদ্ধে আইন পাশ করে।2006 সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রোলিয়ায়ও ক্লোনিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

সোর্চঃ জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং সম্ভাবনা ও বাস্তবতা বই(ড.মোহাম্মদ শাহনূর হোসাইন)

প্রশ্নকারীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
0 টি ভোট
করেছেন (810 পয়েন্ট)
ক্লোনিং বলতে সাধারণত অনুরুপভাবে যে কোন কিছুর অনুলিপি তৈরি করাকে বোঝায়।বায়োটেকনোলজি বা জীব প্রযুক্তির ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন রকম যৌন প্রক্রিয়া ছাড়াই জেনিটিক্যালি সদৃশ বিশেষ কোষ,অঙ্গ,ব্যাকটেরিয়া,উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা।আর জেনেটিক্স বা মলিকিউলার ভাষায় ক্লোনিং হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ঠ জিন অথবা জেনেটিক অংশকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে(PCR/পলিমারেজ রি-একশন চেইন প্লাজমিড'র সহায়তায়)অধিক সংখ্যায় বর্ধিত করা।

ক্লোনিং নিয়ে অনেকের মধ্য ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে।তাদের বিশ্বাস,ক্লোনিং এর মাধ্যমে দেখতে একই রকম হুবহু প্রাণী তৈরি করা সম্ভব।তাই অনেকে এটাও ভাবেন এই প্রযুক্রির সহায়তায় বুঝি সত্যি সত্যি আরেকজন আইনস্টাইন বা নিউটন বানিয়ে ফেলা সম্বভ।কিন্তু সবসময় এটি সত্যি হবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়।কারণ কোন জীবের জিনের বাহ্যিক প্রকাশ নিজ জিনের বহির্ভুত অনেক উপাদানের উপর(যেমনঃমায়ের জরায়ু ও তার রাসায়নিক পরিবেশ,খাদ্যভাস,পরিবেশগত পরিবর্তন ইত্যাদি)নির্ভরশীল।

সহজ কথায় একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।ধরুন,আপনি আপনার একটি ক্লোন বানাতে ইচ্ছুক।যদি পুরো প্রক্রিয়াটি সফল হয় তাহলে আপনার ক্লোনটা আপনার মতো পুরুষ অথবা নারী হয়েই জন্মাবে এবং নির্দিষ্ঠ বয়সে আপনি এবং আপনার ক্লোনটা দেখতে অনেকটা একই রকম হবেন।আর আপনার ডিএনএ ও আপনার থেকে সৃষ্ট ডিএনএ দেখতে হবে অবিকল একই।যেহেতু আপনি এবং আপনার ক্লোন একই মায়ের জরায়ুতে বড় হয়ে উঠেন নাই এবং দুজনের মায়ের গর্ভকালীন খাদ্যভাস ও শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলি সম্পুর্ণ আলাদা।আর আপনার মানসিকতা,বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মকুশলতাও হবে সম্পূর্ণ আলাদা।সুতরাং এথেকে সহজেই বোঝা যায়,জন্ম যদিও দুজনের একই ডিএনএ থেকে,তথাপি আপনার ও তার ক্রমবিকাশ ও মৃত্যু হবে অবধারিত দুটি ভিন্ন পথে।উল্লেখ ,এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর নিউক্লিয়ার ডিএনএ মায়ের কাছ থেকেই আসে।

মানব ক্লোনিং প্রক্রিয়া সফল প্রয়োগে মারা যাওয়া কোন মানুষের ডিএনএ ব্যাবহার করে তারই অনুরুপ আরেকজন মানুষ সৃষ্টি করা সম্বভ।একই রকম জমজ সন্তান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট মানব ক্লোন,যার সাথে আমরা সবাই কম বেশি জড়িত।এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানী মহলে তিন ধরনের মানব ক্লোনিং বেশ আলোচনায় এসেছে।

প্রজনন ক্লোনিংঃ প্রজনন ক্লোনিং হচ্ছে সম্পুর্ণরুপে নতুন ক্লোন মানব তৈরি করার পদ্ধতি।এই ব্যবস্হাটি বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান,ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বৈজ্ঞানিক সংস্থা এ পদ্ধতীর বিরোধী।অনেক প্রতিষ্ঠান আইন করে মানব প্রজনন ক্লোনিং এর পক্ষপাতি।American institutions of biological science নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি বন্ধের সুপারিশ করেছে।

থেরাপিউটিক ক্লোনিং বা রিসার্চ ক্লোনিংঃ চিকিৎস্যার উদ্দেশ্যে স্টেমসেল তৈরির কাজে এই পদ্ধতি ব্যাপৃত।যেহেতু চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির অপার সম্ভাবনা রয়েছে ,তাই এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে।এই পদ্ধতির পক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানই সুপারিশ করেছে।

প্রতিস্হাপন ক্লোনিংঃ এই প্রক্রিয়াটি এখন পর্যন্ত তাত্ত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।এটি মুলত উভয় পদ্ধতির সমন্বিত একটি ধারণা।ধারণা করা হচ্ছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ শরীরের কোন অংশকে প্রতিস্হাপনের মাধ্যমে পুনুরায় স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।এছাড়া এই প্রক্রিয়ার সাথে ব্রেইনের কিছু অংশের প্রতিস্হাপনও আঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত।

মানব ক্লোনিং এর ইতিহাসঃ

এবার দেখা যাক মানব ক্লোনিং এর অগ্রগতি কতটুকু।2002 খ্রিস্টাব্দের 27 ডিসেম্বর রেলিয়ান নামক একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী কতৃর্ক প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ড. ব্রিজিত বোইসেলিয়ার পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানব শিশু জন্মের ঘোষণা দেন যুক্তরাস্ট্রের হলিউড থেকে।পৃথিবীর এই প্রথম ক্লোন মানব কন্যার নাম দেন ইভ ।এই কন্যা শিশুটি 2002 সালের 26 ডিসেম্বর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হয়।শিশুটির মা একত্রিশ বছর বয়সী একজন আমেরিকান।

এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানী হুয়াং উৎসুক 2004 খ্রিস্টাব্দে মানব ভ্রুণকোষ ক্লোনের ঘোঘণা দিয়ে সারাবিশ্বে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন।যা পরবর্তী সময়ে মিথ্যা প্রমানিত হয়।ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেমাজেন ইনকর্পোরেশন নামে বায়োটেক কোম্পানিতে কর্মরত ড.স্যামুয়েল উড ও এন্ড্রু ফ্রেন্জ 2008 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পাচঁ টি সক্রিয় মানব ভ্রুণ তৈরির ঘোষণা দেন।এই প্রক্রিয়ায় বয়স্ক মানুষের ত্বকের কোষ হতে ডিএনএ সংগ্রহ করে তা অন্য একজনের ডিম্বানুতে প্রবিষ্ট করাবো হয়।যদিও‌এটা পরিস্কার নয় যে উৎপন্ন ভ্রুণগুলো পরবর্তী পর্যায়ে বিকাশে সক্ষম ছিল কি না।আইনগত কারনে পরে সব ভ্রণকেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।

এখন অধিকাংশ দেশেই মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।জাতিসংঘ 12 ডিসেম্বর 2001 খ্রিষ্টাব্দে রি প্রোডাক্টিভ ক্লোনিং এর বিরুদ্ধে আইন পাশ করে।2006 সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রোলিয়ায়ও ক্লোনিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

সোর্চঃ জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং সম্ভাবনা ও বাস্তবতা বই(ড.মোহাম্মদ শাহনূর হোসাা

প্রশ্ন্ন্ন অনেেে

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 471 বার দেখা হয়েছে
13 অগাস্ট 2021 "প্রযুক্তি" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন প্যারাফিন (2,760 পয়েন্ট)
+8 টি ভোট
1 উত্তর 234 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
2 টি উত্তর 353 বার দেখা হয়েছে
03 ফেব্রুয়ারি 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nibir nath (750 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 476 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,736 জন সদস্য

102 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 101 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. ok365viponline

    100 পয়েন্ট

  5. FredricSandr

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...